সেই মাদরাসাছাত্রীর আবেগঘন চিঠি উদ্ধার, মিলেছে নতুন তথ্য

প্রকাশিত: ১১:০০ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ১০, ২০১৯

ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহানের লেখা একটি চিঠি পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার তার বাড়ি থেকে চিঠিটি উদ্ধার করেছে সোনাগাজী মডেল থানা পুলিশ।

চিঠিতে ৩ তারিখ লেখা না থাকলেও বিষয়বস্তু বিবেচনায় এটি সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজুদ্দৌলার হাতে যৌন হয়রানির পর সহপাঠী বান্ধবীদের উদ্দেশ্যে লেখা বলে মনে করছে তদন্তকারি সূত্র।

ওই সূত্র জানায়, নুসরাতের পড়ার টেবিলে পাওয়া দুই পাতার ওই চিঠিতে তামান্না ও সাথী নামের দুই বান্ধবীকে উদ্দেশ্য করে লেখা।

গত ২৭ মার্চ ঘটে যাওয়া ঘটনার বর্ণনাও দিয়েছে নুসরাত। ওই চিঠিতে নুসরাত আত্মহত্যা করবে না বলেও উল্লেখ করেন।

তবে যৌন হয়রানির ঘটনার পর সিরাজুদ্দৌলা গ্রেফতার হলে তার মুক্তির দাবিতে বান্ধবীদের অংশগ্রহণে ক্ষোভ প্রকাশ করে নুসরাত। তাকে নিয়ে বান্ধবীদের বিভিন্ন কটূক্তিতেও তার মর্মাহত কথা উল্লেখ করা হয় চিঠিতে।

চিঠিটিতে নুসরাত লেখে, ‘তামান্না, সাথী। তোরা আমার বোনের মতো এবং বোনই। ওই দিন তামান্না আমায় বলেছিল, আমি নাকি নাটক করতেছি।

তোর সামনেই বললো। আরও কি কি বললো, আর তুই নাকি নিশাতকে বলেছিস আমরা খারাপ মেয়ে। বোন প্রেম করলে কি সে খারাপ? তোরা সিরাজুদ্দৌলা সম্পর্কে সব জানার পরও কীভাবে তার মুক্তি চাইতেছিস।’

‘তোরা জানিস না, ওইদিন রুমে কি হইছে? উনি আমার কোন জাগায় হাত দিয়েছে এবং আরোও কোন জায়গায় হাত দেওয়ার চেষ্টা করেছে, উনি আমায় বলতেছে- নুসরাত ডং করিস না। তুই প্রেম করিস না।

ছেলেদের সাথে প্রেম করতে ভালো লাগে। ওরা তোরে কি দিতে পারবে? আমি তোকে পরীক্ষার সময় প্রশ্ন দেবো। আমি শুধু আমার শরীর দিতাম ওরে। বোন এই জবাবে উত্তর দিলাম। আমি একটা ছেলে না হাজারটা ছেলে।আমি লড়বো শেষ নি:শ্বাস পর্যন্ত।

আমি প্রথমে যে ভুলটা করেছি আত্মহত্যা করতে গিয়ে। সেই ভুলটা দ্বিতীয়বার করবো না। মরে যাওয়া মানে তো হেরে যাওয়া। আমি মরবো না, আমি বাঁচবো।

আমি তাকে শাস্তি দেবো। যে আমায় কষ্ট দিয়েছে। আমি তাকে এমন শাস্তি দেবো যে তাকে দেখে অন্যরা শিক্ষা নিবে। আমি তাকে কঠিন থেকে কঠিনতম শাস্তি দেবো। ইনশাআল্লাহ।’

মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা ও সোনাগাজী মডেল থানার ওসি (তদন্ত) মো. কামাল হোসেন চিঠিটি উদ্ধারের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, চিঠিটি আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়েছে। চিঠিতে যাদের নাম আছে, প্রয়োজনে তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে।

গত শনিবার আলিম পরীক্ষায় অংশ নিতে ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসা কেন্দ্রে গেলে দুর্বৃত্তরা ওই ছাত্রীকে ছাদে ডেকে নিয়ে যায়।

এরপর ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে তার দেওয়া শ্লীলতাহানির অভিযোগ তুলে নিতে বলে। সে রাজি না হলে দুর্বৃত্তরা তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।

বর্তমানে নুসরাত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

আইএ

মন্তব্য করুন