ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ: ‘মিডফোর্ড হত্যাকাণ্ড রাষ্ট্রের ব্যর্থতা, বিচারহীনতার দায় বিএনপিকে নিতে হবে


আশরাফ আলী ফারুকী
রাজধানীর কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত মিডফোর্ড হাসপাতালের সামনে একজন ব্যবসায়ীকে প্রকাশ্যে যুবদল নেতার হাতে হত্যার ঘটনায় দেশজুড়ে তীব্র জনমনে উদ্বেগ ও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। এই ঘটনার প্রতিবাদে আজ শুক্রবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য পাদদেশে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, “বিচারহীনতার আগুনে জ্বলছে বাংলাদেশ। মিডফোর্ড হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা রাষ্ট্রের মানবিক ও নিরাপত্তা কাঠামোর চূড়ান্ত ব্যর্থতা। এর দায়ভার বিএনপিকে নিতে হবে।
বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সহকারী মহাসচিব ইমরান হোসাইন নূর বলেন, “এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিএনপির পরিচিত চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের বিনা শর্তে জেল থেকে মুক্তি দিয়েছে। ফলে খুন, চাঁদাবাজি ও অরাজকতা নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। সরকার ও প্রশাসনের ছত্রছায়ায় এসব অপশক্তি জননিরাপত্তা ও সামাজিক ভারসাম্য ধ্বংস করছে। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আবু বকর সিদ্দিক বলেন, “রাষ্ট্র তখনই ব্যর্থ হিসেবে চিহ্নিত হয়, যখন সে জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে না। আজ রাস্তাঘাটে মানুষ খুন হচ্ছে, শিশু ধর্ষণের শিকার হচ্ছে, অথচ বিচার নেই। মিডফোর্ড হত্যাকাণ্ড প্রমাণ করে বাংলাদেশ এখন একটি জবাবদিহিহীন, ইনসাফবিহীন ও হত্যাপ্রীত রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে।
সমাবেশে ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় পাবলিক সম্পাদক আশিকুল ইসলাম বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থান হয়েছিল এই দেশকে চাঁদাবাজ, খুন-ধর্ষণ ও গুমমুক্ত করার জন্য। আজ দেশের সেই চেহারা আবারও কলঙ্কিত হয়েছে বিএনপি নামধারী অপশক্তির কারণে। রাষ্ট্র যদি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে ছাত্রসমাজই হবে ইনসাফ প্রতিষ্ঠার জাগ্রত কণ্ঠস্বর। আরেকটি ৫ আগস্ট আসতে হবে ইনসাফের কেতন উড়িয়ে।
বক্তারা দাবি করেন, মিডফোর্ডের ব্যবসায়ী হত্যাকাণ্ড ছিল পরিকল্পিত চাঁদাবাজি-নির্ভর রাজনীতির ফসল। এই ঘটনায় প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। কথিত উন্নয়নের নামে চলছে রাষ্ট্রীয় মানবিক ধ্বংসযজ্ঞ।
সমাবেশে চার দফা দাবি উত্থাপন করা হয়: ১. মিডফোর্ড হাসপাতালের সামনে সংঘটিত ব্যবসায়ী হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু ও দৃষ্টান্তমূলক বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
২. দেশব্যাপী ধর্ষণ, চাঁদাবাজি ও সহিংসতার বিরুদ্ধে জরুরি আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।
৩. বিচারহীনতা রোধে নির্বাচনে প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন (পিআর) পদ্ধতি চালু করতে হবে।
৪. ইসলামবিরোধী প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক অপকৌশল বন্ধ করতে হবে।
বক্তারা আরও বলেন, “সারা দেশে নারী ও শিশুরা ধর্ষণের শিকার হচ্ছে, মানুষ খুন হচ্ছে অথচ অপরাধীদের বিচার হচ্ছে না। টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাস এখন প্রশাসনের ছায়ায় পরিচালিত হচ্ছে। জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে রাষ্ট্র এক ভয়ংকর অনিশ্চয়তার দিকে ধাবিত হচ্ছে।”
বিক্ষোভে আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সাবেক সভাপতি ইয়াছিন আরাফাত, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনসুরুল হক শান্ত, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ইলিয়াস তালুকদার, দাওয়াহ সম্পাদক নুরুল জান্নাত মান্না, প্রচার ও মিডিয়া সম্পাদক মুঈনুল ইসলাম, অর্থ সম্পাদক ইকরামুল কবির, দপ্তর সম্পাদক সাদমান সাকিব, সাহিত্য সম্পাদক সিয়াম হোসাইন আফজালসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতৃবৃন্দ।