
বশির ইবনে জাফর
এইচএসসি শেষ করেই দেশের বাইরে পাড়ি জমাবো উচ্চশিক্ষার তরে একথা আমার অনেক নিকটাত্মীয় মানতে পারেনি। তাদের কথা ছিলো; আরো পরে যাও। অন্তত ব্যাচেলরটা শেষ করো তার পর মাস্টার্স, পিএইচডি ইত্যাদি করতে যাওয়া যাবে।
আমি তাদের কথা শুনিনি। আমি শুধু দেখেছিলাম পারশিয়াল স্কলারশিপের পর শিক্ষা ব্যয়টা কতোতে এসে দাঁড়াচ্ছে। যা এসেছিলো তা আমাদের দেশের চেয়ে খানিকটা কমই ছিলো।
আমি আর কিছু দেখিনি। কারণ আমার জানা ছিলো বহির্বিশ্বে, বিশেষ করে উন্নত দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় জবাবদিহিতা থাকে। প্র্যাক্টিক্যাল বেজড কারিকুলাম এর পাশাপাশি শিক্ষার মান যথাসম্ভব ভালো রাখতে হয় ফ্যাকাল্টির লাইসেন্স টিকিয়ে রাখার জন্য।
তাছাড়া একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পৃথিবীর নানান প্রান্তের নানান কালচারের শিক্ষার্থীরা হবে আমার সহপাঠী একথা ভেবে আমি ওয়ার্ল্ড কমিউনিকেশন দিকটার উজ্জল ভবিষ্যৎ ভেবেই রেখেছিলাম। আর তাই অনতিবিলম্বে চলে এলাম মালয়েশিয়ায়।
আসার পর প্রথম দু’মাস হতাশা ছায়ার মতো সঙ্গ দিতে থাকলো। ইংরেজি টুকটাক বলতে ও লিখতে পারলেও কারো কথা বা টিচারের লেকচার একদমই বুঝতাম না। সেকেন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ নিয়ে বাইরে পড়তে আসাটাকে বৃথা মনে হতে লাগলো এবং বিশ্বমানদন্ডে আমার পূর্ববর্তী শিক্ষাটাকে অপরিপূর্ণ লাগতে থাকলো।
হতাশায় আমি দুমড়ে যাইনি। আবার তা কারো কাছে প্রকাশও করিনি। কারণ পরিবার পরিজনেরা জানলে সেই আগের কথাই বলবে -বলেছিলাম বাইরে না যেতে বা ইত্যাদি আরো নানান কথা। অথচ তারা এটা ভাববে না যে অযোগ্যতা থেকে মুখ লুকিয়ে জয়ী হওয়া যায় না। বরং মুখোমুখি দাঁড়িয়ে চড়াই-উতরাই পেড়িয়ে যোগ্যতম হিসেবে গড়ে তোলার মাঝেই বীরত্ব।
দুটি মাস পরে অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম চারপাশের বৈশ্বিক এনভায়রনমেন্ট আমার কমিউনিকেশন স্কিলটাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছে। ইংরেজী দক্ষতা গ্রামার আর নানান রকম কোর্স করে IELTS দিয়েও যা না হয়েছে বিগত ১২ বছরে তা মাত্র দু’মাসেই ছাড়িয়ে গেছে। আমার কাছে বাংলা এবং ইংরেজী প্রায় একইরকম মনে হতে থাকলো। ভীতি ও না পারার যন্ত্রণা দূরীভূত হতে থাকলো। মনে মনে তখন আত্মীয়স্বজনদের কথা ভাবতাম। যদি তাদের কথা শুনে এখানে না আসতাম তবে আমার অবস্থার কিঞ্চিৎ পরিবর্তনও সম্ভব হতো না।
কিছুদিন যেতে না যেতেই ক্লাসে শিক্ষকদের প্রিয় হতে থাকলাম। রেজাল্টও আলহামদুলিল্লাহ্ সবচেয়ে ভালোই হতে থাকলো প্রতিটি সাব্জেক্টে এবং প্রতিটি কুইজ, প্রেজেন্টেশান, এ্যাসাইনমেন্ট সহ সেমিস্টার ফাইনালেও।
ভার্সিটি থেকে রিক্রুটমেন্ট এর পার্টটাইম একটা জবের ব্যবস্থা হলো। পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন কর্মকর্তাদের সাথে চলাফেরা উঠাবসা আমাকে ভবিষ্যত কর্মজীবনের ভিত্তি রচিত হতে থাকলো আমার এই জবের সুবাদে। প্রায় আট মাস স্টুডেন্টদের এডমিশান সংক্রান্ত কাজে নিজের সর্বোচ্চাটা দিয়ে সহযোগিতা করা এক পর্যায়ে ভার্সিটি আমাকে সার্টিফিকেট দিলো। তিন বছর এর জন্য আমাকে তাদের প্রতিনিধি হিসেবে নিযুক্ত করলো।
আমার সময় পরিবর্তন হয়েছে প্রথমত নিজের লক্ষ্যপানে অবিচলতা , হতাশায় ধৈর্য্য এবং কর্মে দায়িত্বশীলতার মাধ্যমে। তাছাড়া বাবা-মা ও শিক্ষকদের দোয়া সবসময়ই ছিলো।
এখন প্রতিমাসেই বাংলাদেশ থেকে আসা নতুন নতুন শিক্ষার্থীদের সাথে আমার দিনের উল্লেখযোগ্য একটা অংশ কাটে। তাদের সাথে তাদের লক্ষ্য এবং কর্মপদ্ধতি নিয়ে কথা বলি, তাদের কাউকে হতাশাগ্রস্ত দেখলে আমার আগের দিনগুলোর কথা বলি। বুঝাতে চেষ্টা করি ‘ধৈর্য্য’ সফলতার প্রথম শর্ত।
এম্বাসেডর- ইয়ুথ ক্যারিয়ার ইন্সটিটিউট (MAHSA, Malaysia)
CEO- Multi Tech Ltd
শিক্ষার্থী- MAHSA University, Malaysia.
/এসএস

