একজন মুসলিম হিসেবে আমি অনুশোচনায় ভুগি কিন্তু ওই পর্যন্তই

প্রকাশিত: ১২:৩৯ অপরাহ্ণ, জুলাই ২৭, ২০১৯

খাদ্য, ঔষধ, স্বাস্থ্যসেবা ও সৌন্দর্যপণ্যে প্রচুর ‘জেলেটিন’ ব্যবহার হয়৷ জেল ধরনের এই বস্তুটির ব্যবহার হালাল না হারাম, তা নিয়ে বিতর্ক আছে৷ নানা লাংইয়াহর একজন ইন্দোনেশিয়ান মুসলিম নারী৷ পরিবার নিয়ে বেশ কয়েক বছর হলো থাকেন জার্মানিতে৷ তার সন্তানরা ‘গামি বেয়ার’ খুব পছন্দ করে৷ এই পণ্যগুলো ইসলামে নিষিদ্ধ৷ কিন্তু বাচ্চাদের মুখের দিকে তাকিয়ে মেনে নিচ্ছেন। জার্মানি গণমাধ্যম ডয়চে লেভে’র এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘ওরা গামি বেয়ার খুব ভালোবাসে৷ আমার স্বামীও খুব পছন্দ করেন, ‘আসলে হারিবো (গামি বেয়ার প্রস্তুতকারী একটি কোম্পানি) শূকরের ত্বক থেকে জেলেটিন বানায়৷ তাই এটা হারাম৷ কিন্তু আমাদের আর উপায় কী বলেন? মুসলিম হিসেবে আমি অনুশোচনায় ভুগি৷ কিন্তু ঐ পর্যন্তই৷” নানার মতো অনেকেরই ধারণা জেলেটিন পণ্যগুলো শুধু বরাহজাত আমিষ থেকে তৈরি হয়৷ অনেকে অবশ্য হালাল পণ্যও যে আছে তাও জানেন৷

আরেক মুসলিম নারী লেনি মার্টিনি ৷ ‘জার্মানিতে গামি বেয়ার নিয়ে এত চিন্তিত হবার কিছু নেই৷ হারিবো হালাল জেলেটিনও তৈরি করে৷ জেলেটিন ও এর পণ্য জেলেটিন হলো বিভিন্ন প্রাণীর ত্বক, চামড়া ও হাড় থেকে তৈরি এক ধরনের জেল, যা গামি বেয়ার ছাড়াও নানা খাদ্যপণ্যে ব্যবহৃত হয়৷

শাওয়ার জেল, শ্যাম্পু ও চুলের স্প্রেতে ছাড়াও জেলেটিন থাকে অনেক রকমের ক্যাপসুল ও ট্যাবলেটে ৷ এছাড়া খেলোয়াড়দের পুষ্টিবর্ধনে বা গবাদিপশুর খাদ্যেও এর ব্যবহার প্রচলিত৷ কোনো কোনো গবেষণা বলছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শূকরের ত্বক থেকে প্রক্রিয়াজাত জেলেটিন সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়৷ তবে ফ্রান্স ও ব্রিটেনে এর যোগানদাতা মূলত গরু ও অন্যান্য গবাদি পশু৷ তবে পুরো ইউরোপের চিত্র এমন নয়৷

বাংলাদেশের ইসলামিক স্কলার ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, খাদ্যসহ ব্যবহার্য সব সামগ্রীতে হালাল-হারাম যাচাই করে ব্যবহার করা মুসলমানদের কর্তব্য। অনেক সময় ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও শুধু অজ্ঞতার কারণে আমরা হারাম দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকি। অথচ এ বিষয়েও স্পষ্ট ধারণা লাভ করা এবং এসব থেকে বিরত থাকা আমাদের জন্য জরুরি।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিশেষত ইউরোপ, আমেরিকা, পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় শুকরের চর্বি (Lard,Pigfat) খাদ্যদ্রব্য রান্না ও প্রসাধন সামগ্রী তৈরির গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। ঊনবিংশ শতাব্দী থেকে উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপে দামে সাশ্রয়ী হওয়ার কারণে বাটার অয়েলের পরিবর্তে রান্নায় শুকরের চর্বি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সাম্প্রতিক সময়ে রান্নার পাশাপাশি রুটি, পিজা, পিঠা, কেক, স্ন্যাক্স, সস, স্যান্ডউইচ, বার্গার, বিস্কুট, মিষ্টি ও ঝাল খাবারে শকুরের চর্বির ব্যাপক ব্যবহার লক্ষণীয়। এছাড়াও সাবান, লোশন, চকোলেট, চিপস, শ্যাম্পু, লিপষ্টিক ক্যান্ডি, শেভিং ক্রিম, অয়েন্টমেন্ট তৈরিতে শূকরের চর্বি অপরিহার্য উপাদান। এসব খাদ্য ও কসমেটিকস সামগ্রীতে যে আঠালো পদার্থ আছে তার বৈজ্ঞানিক নাম Gelatin। এটা শূকরের হাড় ও পায়ের খূরের চর্বি থেকে সংগৃহীত হয়। শূকরের চর্বি সয়াবিন তেল, মারকারাইন ও ভেজিটেবল ফ্যাটের মতো স্বাস্থ্যসম্মত না হলেও খাদ্যদ্রব্য ফ্রাইংয়ের ক্ষেত্রে যে গন্ধটি বের হয় তা পাশ্চাত্যের ভোক্তাদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। শূকরের দেহের যে কোনো অংশের Fatty tissue থেকে চর্বি আহরণ করা যায় এবং এসব চর্বির নানা গ্রেড রয়েছে। তার মধ্যে কিডনি ও মাংসপেশির আশাপাশের চর্বির কদর বেশি। কিডনি থেকে প্রস্তুত চর্বির বাণিজ্যিক নাম হলো Lcaf lard।

এসব বস্তু ব্যবহারের ক্ষেত্রে মূলনীতি হল, শুকর বা অন্য কোন হারাম বস্তু মিশ্রিত হয়, আর মিশ্রিত করার আগে তা এমনভাবে প্রসেসিং করে যে, হারাম বস্তুটির মৌলিকত্ব বাকি থাকে না, তা হলে তা ব্যবহার করা জায়েয হবে, আর যদি মৌলিকত্ব বাকি থাকে তা হলে তা ব্যবহার করা জায়েয হবে না। ফাতহুল কাদীর ১/১৭৬, কিফায়াতুল মুফতী ২/২৮০-৮৪।

ইসমাঈল আযহার/পাবলিক ভয়েস

মন্তব্য করুন