
নাজমুল হাসান, চবি: ‘বাঁশরী ও তূর্যের জয় হোক’-এ প্রতিপাদ্যকে ধারণ করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগের উদ্যোগে এবং বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)’র সহায়তায় দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য আয়োজনে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২০তম জন্মজয়ন্তী। আজ (৩০ জুন) রোববার চবি ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। দিনব্যাপী আয়োজনের মাধ্যে ছিল আন্তর্জাতিক সেমিনার এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সকাল ১০ টায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (রুটিন দায়িত্বপ্রাপ্ত) প্রফেরস ড. শিরীণ আখতার।
অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন ইউজিসি’র সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল মান্নান। এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ময়মনসিংহ, ত্রিশাল জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এ এইচ এম মুস্তাফিজুর রহমান।
প্রধান অতিথি প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার তার বক্তব্যের শুরুতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চারনেতা, মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লক্ষ বীর শহীদদের এবং ‘৭৫ এর ১৫ আগস্ট বর্বর হায়েনাদের হাতে নির্মমভাবে শহীদ বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের বিনম্র-চিত্তে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিত দু’লক্ষ জায়া-জননী-কন্যার প্রতি বিশেষ সম্মান প্রদর্শন করেন। তিনি উপস্থিত সকলকে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২০তম জন্মজয়ন্তীর শুভেচ্ছা জানান।
তিনি বলেন, প্রেম-দ্রোহ, সাম্য, মৈত্রী ও মানবতার এক উজ্জ্বল নক্ষত্র আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। বাংলা সাহিত্যের এমন কোন শাখা নেই যেখানে এ কবির বিচরণ ছিল না। এই মহান কবি সারাজীবন তার সাহিত্যকর্মে মানবতার জয়গান রচনা করে গেছেন। শাসক শ্রেণীর শোষণের বিরুদ্ধে তার সাহিত্যে বিদ্রোহী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তিনি বিদ্রোহী কবি হিসেবে আখ্যায়িত হয়েছেন। তিনি বলেন, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ দুই বাংলাতেই তার রচিত কবিতা, গান, নাটক, উপন্যাস সমানভাবে সমাদৃত।
তিনি আরও বলেন, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল এর সাহিত্য কর্ম আমাদের জাতীয় জীবনে এক অপরিহার্য অঙ্গ। তার সাহিত্য কর্মের মাধ্যমে তৎকালীন শাসক শ্রেণীর শোষণ-নিপীড়নের বিরুদ্ধে তরুণ সমাজসহ গোটা জাতিকে জাগ্রত করেছেন। তিনি এ অসাধারণ মেধাবী কবির সাহিত্য কর্ম ধারণ-লালন ও অধিকতর চর্চার মাধ্যমে তরুণ সমাজকে নিজেদের সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি সারা বিশ্বে এই সাহিত্যকর্ম আরও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান।
ড. শিরীণ আখতার বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত শিক্ষক-গবেষকবৃন্দকে এই মহান কবির সাহিত্য কর্ম নিয়ে অধিকতর গবেষণাকর্ম পরিচালনার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সাহিত্য ভান্ডারকে অধিকতর সমৃদ্ধ করার আহ্বান জানান। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২০তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত দিনব্যাপী কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন। অনুষ্ঠানে চবি বাংলা বিভাগের পক্ষ থেকে প্রধান অতিথি এবং অতিথিবৃন্দকে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।
চবি বাংলা বিভাগের সভাপতি ও অনুষ্ঠান উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক প্রফেসর ড. মহীবুল আজিজ-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন অনুষ্ঠান উদযাপন কমিটির সদস্য-সচিব ও চবি বাংলা বিভাগের প্রফেসর ড. আনোয়ার সাঈদ। একুশে পদকপ্রাপ্ত গবেষক চবি বাংলা বিভাগের সাবেক প্রফেসর ড. মাহবুবুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ভারতের আসানসোল কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মোনালিসা দাস ও উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের নজরুল সেন্টারের সোশ্যাল এন্ড কালচারাল স্টাডিজের পরিচালক ড. স্বাতী গুহ এবং বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রফেসর ড. মানবেন্দ্রনাথ সাহা।
এছাড়া আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন চবি বাংলা বিভাগের প্রফেসর ড. নুরুল আমিন ও প্রফেসর ড. লায়লা জামান এবং কবি, কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক জনাব বিশ্বজিত চৌধুরী। অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন আবৃত্তি শিল্পী রাশেদ হাসান ও উমে সিং মারমা। অনুষ্ঠানে চবি সম্মানিত সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্যবৃন্দ, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. এ এফ এম আওরঙ্গজেব, রেজিস্ট্রার, বিভিন্ন বিভাগের সম্মানিত সভাপতিবৃন্দ, ইনস্টিটিউট ও গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালকবৃন্দ, সম্মানিত শিক্ষকবৃন্দ, অফিস প্রধানবৃন্দ এবং বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
সবশেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং বিশিষ্ট নজরুল সঙ্গীত শিল্পী জনাব ফাহমিদা রহমানের পরিবেশনায় পরিবেশিত হয় মনোজ্ঞ সঙ্গীতানুষ্ঠান।

