
রাজধানী রিয়াদের কিং আবদুল আজিজ শহরের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে একটি পরমাণু চুল্লি নির্মাণ করছে সৌদি আরব। ‘গুগল আর্থ’-এর উপগ্রহ চিত্রে সম্প্রতি তা ধরা পড়েছে। সেই ছবি প্রকাশও করা হয়েছে। আর এরপরেই জানতে পেরেছে পরমাণু শক্তি সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক তত্ত্বাবধায়ক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সি (আইএইএ)।
দ্য গার্ডিয়ানের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সৌদি আরব পরমাণু চুল্লি বানালেও তত্ত্বাবধায়ক সংস্থাকে কিছুই জানায়নি। গুগল আর্থের ওই উপগ্রহ চিত্রের ছবি প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই আলোড়ন শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক মহলে। তবে প্রশ্ন উঠেছে, কেন গোপনে ওই পরমাণু চুল্লি বানাচ্ছে সৌদি আরব? কী তার উদ্দেশ্য? তাই রিয়াদে দ্রুত পরিদর্শক পাঠানোর দাবি তুলেছে মার্কিন কংগ্রেস।
গুগল আর্থ’-এর উপগ্রহ চিত্রে দেখা যায়, পরমাণু চুল্লি বানানোর কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। সেই চুল্লিতে পারমাণবিক জ্বালানি পৌঁছে দেওয়ার জন্য একটি বড় মাপের ভেসেল (পাত্র) বানিয়ে ফেলা হয়েছে। ১০ মিটার উচ্চতা ও ২.৭ মিটার ব্যাসের ওই ভেসেলটি সৌদিকে বানিয়ে দিয়েছে আর্জেন্টিনার রাষ্ট্রায়ত্ত্ব সংস্থা ‘ইনভ্যাপ সে’।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোনো পরমাণু চুল্লির কথা আজ ভাবলেই কাল বানিয়ে ফেলা যায় না। প্রস্ততি ও নির্মাণকাজ নিয়ে অন্তত পাঁচ থেকে সাত বছর সময় লাগে। কিন্তু এতদিনেও বিষয়টি বুঝতে না পারায় আইএইএ’র এক সাবেক কর্মকর্তা মন্তব্য করেছেন, এ ব্যাপারে এতদিন অন্ধকারেই ছিল আন্তর্জাতিক এই সংস্থাটি।
আইএইএ’র সাবেক আরেকজন কর্মকর্তা রবার্ট কেলি বলেন, ‘উপগ্রহের পাঠানো ওইসব ছবি পরমাণু চুল্লির সম্ভাবনাই জোরালো করে তুলেছে।’
উপগ্রহের তোলা ছবি ছড়িয়ে পড়ার পর সৌদি সরকার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘গবেষণা ও শিক্ষামূলক কাজের জন্যই ওই পরমাণু চুল্লি বানানো হচ্ছে। আর এর জন্য চুক্তির প্রয়োজনীয় শর্ত মেনে চলা হচ্ছে।’
কিন্তু গবেষণা ও শিক্ষামূলক কাজের জন্য পরমাণু চুল্লি চালাতে ইউরেনিয়ামের মতো পারমাণবিক জ্বালানির প্রয়োজন হয় না। কিন্তু গুগল আর্থের উপগ্রহ চিত্রে দেখা যায়, চুল্লিতে জ্বালানি পৌঁছে দেওয়ার জন্য যে ভেসেল বানানো হয়েছে, তা ইউরেনিয়ামের জন্যই।
আইআইএ-তে আর্জেন্টিনার প্রতিনিধি রাফায়েল মারিয়ানো গ্রসসি বলেছেন, ‘আমরা ভেসেল বানিয়ে দিয়েছি। তবে সেই ভেসেলে কতটা ইউরেনিয়াম মজুত করতে পারবে, সে ব্যাপারে আইআইএর’ সঙ্গে কঠোর চুক্তি করতে হবে সৌদি সরকারকে। মেনে চলতে হবে সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক নিয়ম-কানুন।’
আন্তর্জাতিক তত্ত্বাবধায়ক সংস্থার সঙ্গে চুক্তি না করলে কোনো দেশের পক্ষেই যে পরমাণু জ্বালানি সরবরাহকারী দেশগুলোর কাছ থেকে পাওয়া সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে সৌদি তার গোপন ইউরেনিয়ামের খনিকে কাজে লাগাচ্ছে জ্বালানির প্রয়োজন মেটানোর জন্য? নাকি গোপনে অন্য কোনো দেশ থেকে ইউরেনিয়াম কেনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে?
আইএ
		
