
‘পাশ্চাত্য সভ্যতার কারণে। সভ্যতার নামে কুসভত্যার কারণে সমাজ আর ওলামায়ে কেরামের মাঝখানে অনেক দূরত্ব তৈরি হয়েছে। আর সমাজ পরিচালনায় সমাজ ও ওলামায়ে কেরামের মাঝখানে দূরত্বের কারণে গোটা বিশ্বে অশান্তি সৃষ্টি হয়েছে।
বিশ্বের কোথাও শান্তি নেই। এর বড় কারণ হলো ওলামায়ে কেরামের নেতৃত্ব নেই। যেকোনো বিষয়ে ওলামায়ে কেরামকে নেতৃত্ব দিতে হবে। নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। দীন এবং দুনিয়ার সমন্বয়ে ইসলাম। যেরকম মসজিদে বসে আল্লাহর জিকির করতে হবে। অবশ্যই করতে হবে। সেরকম রাজপথেও আল্লাহ ও লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহর শ্লোগান তুলতে হবে’।
আজ বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) রাজধানীর শনিরআখড়ায় ‘ইকরামুল মুসলিমীন ফাউন্ডেশন’ এর উদ্যোগে ‘সামাজিক সেবায় ওলামায়ে কেরামের অবদান ও করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও ইসলামী মহাসম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দারুল উলুম হাটহাজারী মাদরাসার সহকারী পরিচালক, শায়খুল হাদিস আল্লামা হাফেজ জুনায়েদ বাবুনগরী এসব কথা বলেন।
আল্লামা ফজলুর রহমানের সভাপতিত্বে এতে প্রধান মেহমান হিসেবে উপস্থিত, যাত্রাবাড়ি জামিয়া মাদানিয়া মাদরাসার মহাপরিচালক মুহিউসসুন্নাহ আল্লামা মাহমুদুল হাসান। সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য দেন সম্মেলন বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক মুফতী হাবিবুর রহমান মিছবাহ। এতে উপস্থিত ছিলেন দেশ বরেণ্য আলেম, লেখক, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, গবেষক, সমাজকর্মী, সংগঠকগণ।
এসময় আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী আরো বলেন, সাহাবায়ে কেরাম দুটো কাজ করেছেন। ঘরে আল্লাহর জিকির করেছেন। রাজপথে আল্লাহ ও রাসুলের (সা.) শ্লোগানও দিয়েছেন। আল্লাহু আকবার স্লোগান দিয়েছেন। আমাদের মাথায় এখন সুতির টুপি। প্রয়োজনে মাথা থেকে সুতির টুপি নামিয়ে লোহার টুপি পড়তে।
তিনি বলেন, সমস্ত লাইনে ওলামায়ে কেরামের নেতৃত্ব কায়েম করতে হবে। নইলে শান্তি আসবে না। আমাদের দীনও লাগবে, দুনিয়াও লাগবে। তবে দীন হবে শাসক, দুনিয়া হবে শাসিত।
আল্লামা বাবুনগরী বলেন, শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড আমার সবাই বলি। কিন্তু কোন শিক্ষা? সন্ত্রাসী বেড়ে গেছে। সন্ত্রাসী কি আসমান থেকে এসেছে। আমাদের সন্তানরাই সন্ত্রাসী করছে। পুলিশের ছেলে সন্ত্রাসী, মন্ত্রীর ছেলে সন্ত্রাসী, আমাদের ছেলেরাই তো সন্ত্রাসী। কেন? আমরা ছেলে মেয়ে জন্ম দিয়েছি কিন্তু আল্লাহর রাসুলের তরিকা অনুযায়ী সন্তানাদি জন্ম দিতে পারিনি। গোড়া দিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে, আগা দিয়ে কিভাবে ভালো হবে।
তিনি বলেন, রাসূল সা. বলেছেন- পুরুষরা মহিলাদের চার কারণে বিয়ে করে। সৌন্দর্য, সম্পদ, বংশ কিন্তু রাসূল সা. বলেছেন প্রথমে দেখতে হবে দীনদারিতা। সৌন্দর্য হলেও ভালো, না হলেও চলবে। সম্পদ থাকলে ভালো, না হলেও চলবে, বংশ ভালো হলেও ভালো, না হলেও কোনোমতে চলবে। কিন্তু দীনদারিতা না থাকলে চলবে না। দীনদার হলে সন্তানাদি দীনদার হবে।
ওলামায়ে কেরামকে এসব শিখাতে হবে মানুষকে। জুমার মসজিদে আলোচনা করতে হবে। ওলামাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা যেভাবে শিক্ষা দিবেন সেভাবে আপনাদের নেতৃত্ব কায়েম হবে। তাহলেই সমাজে শান্তি হবে। ওলামায়ে কেরামের নেতৃত্ব সব জায়গায় থাকতে হবে। আসমানী এলেমের শিক্ষা লাভ করতে হবে, জাগতিক জ্ঞানও অর্জন করতে হবে।
তিনি বলেন, বিখ্যাত সাহাবী আবু জর গিফারী রা. বলেছেন, হে আলেম সমাজ হকের ওপর থাকেন। হকের ওপর থাকেন। সিরাতে মোস্তাকিমের ওপর এস্তেকামাতের সহিত থাকেন। হে আলেম সমাজ আপনারা আপনাদেরকে ছোট মনে করবেন না। আপনার অনেক আগে বেড়ে গেছেন। সুতরাং সিরাতে মোস্তাকিমের ওপর এস্তেকামাত না থেকে যদি একটু এদিক-ওদিক করেন তাহলে গোমরা হয়ে যাবেন। আর আপনারা গোমরা হলে গোটা উম্মত গোমরা হয়ে যাবে।
সম্মেলনে বিশেষ মেহমান হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, জামিয়া নুরিয়া ইসলামীয়া কামরাঙ্গীচর মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা শাহ আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, বাংলাদেশ কুরআন শিক্ষা বোর্ড এর মহাসচিব মাওলানা নুরুল হুদা ফয়েজী, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত পরিষদ মহাসচিব মুফতী মিযানুর রহমান সাঈদ, বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়ার মহাপরিচালক অধ্যাপক যোবায়ের আহমাদ চৌধুরী, কলামিস্ট ও রাজনীতিবীদ অধ্যাপক আহমদ আবদুল কাদের, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামের ইতিহাস ও সাংস্কৃতি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. আতাউর রহমান মিয়াজী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফার্সী বিভাগের সহকারী পরিচালক জনাব আহসানুল হাদী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক ড. আহমাদ আবদুল কালাম, ওমনগণি এমইস কলেজ চট্টগ্রাম এর সাবেক অধ্যাপক ড. আ ফ ম খালিদ হোসাইন প্রমুখ।
এছাড়াও আরো উপস্থিত ছিলেন, জামিয়া হোসাইনিয়া আরজাবাদ মাদরাসার প্রিন্সিপ্যাল মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া, গবেষক আলেম ও লেখক মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, আল্লামা শাহ আহমদ শফী দা. বা. এর খলিফা মাওলানা ওমর ফারুক সন্দীপী, জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম এর পেশ ইমাম মুফতী মুহিব্বুল্লাহ বাকি নদভী, মাদানীনগর মাদরাসার প্রধান মুফতী, মুফতী বশিরুল্লাহ, মুফতী হাফিজুদ্দীন, জামিয়া এমদাদুল উলুম ফরিদাবাদ মাদরাসার সিনিয়র মুহাদ্দিস মুফতী ইমাদুদ্দীন, গবেষক আলেম মাওলানা নাসিম আরাফাত, বিশিষ্ট লেখক মাওলানা যাইনুল আবেদিন, মাওলানা আবদুল আখির, মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, মাও. খালিদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী, মুফতী সাখাওয়াত হোসাইন রাজী প্রমুখ।
/এসএস

