
মুফতী হেলাল উদ্দীন হাবিবী
লাব্বাইক্ আল্লাহুম্মা লাব্বাইক্ লাব্বাইকা লা-শারীকা লাকা লাব্বাইক্ ইন্নাল হাম্দা ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক্ লা-শারীকা লাক্
হজ্ব আরবী শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ- ই”ছা করা, দৃঢ় সংকল্প করা ইত্যাদি। শরীয়তের পরিভাষায়, ‘মহান আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের আশায় নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট স্থানে নির্দিষ্ট কার্যাবলী সম্পাদন করাকে হজ্ব বলে’। হজ্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের একটি। যা স্রষ্টার প্রতি অগাধ বিশ্বাস, অকুণ্ঠ ভালবাসা ও পূর্ণ আনুগত্যের প্রতীক। স্রষ্টার সাথে বান্দার ভালোবাসার পরীক্ষার চূড়ান্ত ধাপ হল হজ্ব।
জিয়ারতে বাইতুল্লার মাধ্যমে খোদাপ্রেমিক মুমিন বান্দা তার মালিকের বাড়িতে বেড়াতে যান। অনুভব করেন দিদারে এলাহির এক জান্নাতি আবেশ। কলুষমুক্ত হয় গুনাহের গন্ধে কলুষিত অন্তরাত্মা। হজ্বের মাধ্যমে মুমিনের আত্মিক, দৈহিক ও আর্থিক ইবাদাতের সমাবেশ ঘটে।
প্রত্যেক সামর্থ্যবান প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমানের ওপর জীবনে একবার হজ করা ফরজ এবং এর অস্বীকারকারী কাফের। মহান আল্লাহ তা’আলা এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘আর এ ঘরের হজ করা হলো মানুষের উপর আল্লাহর প্রাপ্য; যার সামর্থ্য রয়েছে বাইতুল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছার। আর যে এটা অস্বীকার করবে আল্লাহ বিশ্বজগতের সব কিছু থেকে অমুখাপেক্ষী’। (সূরা আল ইমরান, আয়াত: ৯৭)
মহান আল্লাহ তায়ালা মহাগ্রন্থ আল-কোরআনে আরো ইরশাদ করেন, আর মানুষের মধ্যে হজ্বের ঘোষণা করুন। তারা আপনার কাছে আসবে দূর-দূরান্ত থেকে পদযোগে ও সর্বপ্রকার কৃশকায় উটের পিঠে আরোহণ করে। (সূরা হজ, আয়াত:২৭)
প্রিয় পাঠক! এখানে সামর্থ্য বলতে শারীরিক ও আর্থিক উভয় প্রকার সামর্থ্য বোঝানো হয়েছে। সুতরাং সামর্থ্যবান হলে সকল প্রকার বাধা- বিপত্তি, দ্বিধা-সংশয় ও ভ্রান্ত ধারণা ছেড়ে দিয়ে অনতিবিলম্বে হজ্ব আদায় করা প্রত্যেক মুমিনের জন্য বাঞ্ছণীয়। এ ব্যপারে প্রিয়নবী সা. ইরশাদ করেন, ‘তোমরা ফরজ হজ্ব আদায়ে বিলম্ব করো না। কেননা তোমাদের জানা নেই, পরাবর্তি জীবনে তোমরা কী অবার সম্মুখিন হবে কিনা’। (মুসনাদে আহমদ: ২৮৬৭)
আর সামর্থ্যবান হওয়া সত্তেও যারা হজ না করে মারা যায়, বিচার দিবসের একমাত্র সুপারিশকারী মহানবী সা. তাদের ব্যপারে অত্যন্ত শক্ত মনোভাব পোষণ করেছেন। মহানবী সা. ইরশাদ করেন, ‘সামর্থ্যবান হওয়া সত্তেও যে হজ্ব না করে মারা যায়- সে ইয়াহুদী হয়ে মারা যাক বা খ্রিষ্টান হয়ে মারা যাক, তাতে আমার কোন পরোয়া নেই’। (তিরমিযি: ৮১২)
পক্ষান্তরে যারা মহান স্রষ্টার সন্তুষ্টি অর্জনের নিমিত্তে হজ আদায় করে; মহানবী সা. তাদের ব্যাপারে গুনাহ মাফ ও জান্নাতের সুসংবাদ প্রদান করেছেন। হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে এমনভাবে হজ আদায় করল যে, কোনোরূপ অশ্লীল কথা বা গুনাহের কাজে লিপ্ত হয়নি, সে সদ্যভ‚ মিষ্ঠ শিশুর ন্যায় নিষ্পাপ হয়ে ফিরে আসবে। (বুখারি: ১৫২১)
প্রিয় পাঠক! এ হাদীসটি গবেষণা করলে জানা যায় যে, মহানবী সা. হজের মাধ্যমে ক্ষমাপ্রাপ্তির জন্য বিশেষভাবে তিনটি শর্ত আরোপ করেছেন:
১. হজের লক্ষ্য হতে হবে শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন।
২. হজের সফরে অশ্লীল বাক্যালাপ থেকে সম্পূর্ণরূপে নিজেকে বিরত রাখতে হবে।
৩.হজের সফর অবস্থায়য় সকল প্রকার গুনাহ থেকে বিরত থাকতে হবে।
প্রিয়নবী সা. আরো ইরশাদ করেন, ‘হজ ও উমরাকারীগণ হচ্ছে আল্লাহ তা’আলার মেহমান। তারা যদি আল্লাহর নিকট দুআ করে, তবে তিনি তা কবুল করেন। আর যদি তারা ক্ষমা প্রার্থনা করে, তাহলে তিনি তাদের ক্ষমা করে দেন’। (ইব্নে মাযাহ্: ২৮৯২)
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন, ‘হজ্জে মবরূর তথা মকবুল হজের প্রতিদান হলো জান্নাত’। (বুখারি: ১৭৭৩)
মহান প্রভুর দরবারে আমাদের এই মিনতি, দয়াময় আল্লাহ যেন আমাদের সকলকে তাঁর দয়ার চাদরে আবৃত করে পবিত্র বাইতুল্লাহ ও রওযায়ে রাসুল সা. জিয়ারত করার তাওফিক দান করেন এবং হজের আরকান ও আহকাম সমূহ সঠিকভাবে পালনের মাধ্যমে হজ্জে মাবরূর নসিব করেন। আমিন।
লেখক: আলেম, ইসলামী আলোচক ও গবেষক

