তিন প্রকার হজের বিবরণ

প্রকাশিত: ১০:২৯ অপরাহ্ণ, জুলাই ২১, ২০১৯

মুফতী হেলাল উদ্দীন হাবিবী

হজ তিন প্রকার: হজ্ব তিন প্রকার। তামাত্তু, ইফরাদ, কিরান। এর মধ্যে সাওয়াবের দিক দিয়ে সর্বাধিক উত্তম হল কিরান। এরপর তামাত্তু, এরপর ইফরাদ। তবে আদায় সহজ হওয়ার দিক হতে সর্বপ্রথম তামাত্তু, এরপর ইফরাদ, এরপর কিরান।

যেহেতু তামাত্তু হজ পালন করা সবচেয়ে সহজ, তাই অধিকাংশ বাংলাদেশী তামাত্তু হজ আদায় করে থাকেন। আর যারা অন্যের বদলী হজ করতে যান বা যাদের অবস্থান মিকাতের মধ্যে, তারা সাধারণত ইফরাদ হজ করেন। এছাড়া কিছু সংখ্যক হাজী কিরান হজ করেন, যাদের সংখ্যা খুবই নগণ্য।

হজ্বে কিরান: মিকাত হতে একসাথে উমরা ও হজের নিয়তে ইহরাম বাঁধাকে কিরান হজ বলা হয়। কিরান হাজীগণকে মক্কায় পৌঁছে প্রথমে উমরা করতে হবে। অতঃপর ইহরাম অবস্থায় হজের জন্য অপেক্ষা করতে থাকবে এবং ১০ই জিলহজ্জ দমে শুকরিয়া তথা কুরবানী না করা পর্যন্ত ইহরাম অবস্থায়-ই থাকতে হবে। কিরান হজের ক্ষেত্রে তাওয়াফে কুদুম করা সুন্নত। তাই উমরা এবং হজের মধ্যবর্তী যে কোনো সময় তাওয়াফে কুদুম করবে; সম্ভব হলে সায়ীও করে নিবে। মনে রাখতে হবে যে, যদি কোনো কিরান হাজী তাওয়াফের সাথে সায়ী করে, তবে তাকে ১০ই জিলহজ্জ ফরজ তাওয়াফের পর আর সায়ী করতে হবে না। কেননা উমরা এবং হজের বিধানে একবার করে সায়ী করা ওয়াজিব। এ ছাড়া ৮ই জিলহজ্জ থেকে ১২ই জিলহজ্জ পর্যন্ত হজের আহকামসমূহ সকল হাজীদের জন্য এক ও অভিন্ন।

হজ্বে ইফরাদ: মিকাত থেকে শুধুমাত্র হজের নিয়তে ইহরাম বাঁধাকে ইফরাদ হজ বলে। ইফরাদ হাজীগণ পবিত্র মক্কায় পৌঁছে ইহরাম অবস্থায় হজের জন্য অপেক্ষা করতে থাকবে। অতঃপর মূল হজ শুরু হওয়ার পূর্বে যে কোনো একদিন সুন্নত তাওয়াফ তাওয়াফে কুদুম করবে, সম্ভব হলে সায়ীও করে নিবে। কিরান হজের মত এক্ষেত্রেও তাওয়াফে কুদুমের সাথে সায়ী করে নিলে ১০ই জিলহজ্জ ফরজ তাওয়াফের পর আর সায়ী করতে হবে না। আর ৮ই জিলহজ্জ থেকে ১২ই জিলহজ্জ পর্যন্ত হজের বাকী আহকাম সকলের জন্য এক ও অভিন্ন। শুধু পার্থক্য হল, ১০ই জিলহজ্জ কঙ্কর নিক্ষেপের পর কিরান এবং তামাত্তু হাজীগণকে হজের ওয়াজিব অঙ্গ দমে শুকরিয়া তথা কুরবানী করতে হবে, কিন্তু ইফরাদ হাজীগণকে কুরবানী করতে হবে না।

হজ্বে তামাত্তু: মিকাত হতে শুধুমাত্র উমরার নিয়তে ইহরাম বেঁধে পবিত্র মক্কায় পৌঁছে উমরা করার পর ইহরাম খুলে স্বাভাবিক অবস্থায় হজের জন্য অপেক্ষা করা এবং ৮ই জিলহজ্জ ইহরাম বেঁধে হজ সম্পন্ন করাকে তামাত্তু হজ বলে। ৮ই জিলহজ্জ থেকে ১২ই জিলহজ্জ পর্যন্ত কিরান ও ইফরাদ হজের মত তামাত্তু হজের সকল বিধান এক ও অভিন্ন। তবে পার্থক্য হল, তামাত্তু হজে কিরান, ইফরাদের মত তাওয়াফে কুদুম নেই।

প্রিয় পাঠক: সাগর পথে বাংলাদেশী হজযাত্রীদের মিকাত হল ইয়ালামলাম। কিন্তু আকাশ পথে বাংলাদেশী হজযাত্রীদের মিকাত হবে কারনুল মানাযিল; যা জেদ্দা এয়ারপোর্টের আগে থেকেই শুরু হয়। সুতরাং যারা বাংলাদেশ থেকে জেদ্দা হয়ে প্রথমে পবিত্র মক্কায় যাবেন, তাদের বাংলাদেশ থেকে বিমানে আরোহণ করার পূর্বেই ইহরাম বেঁধে নিতে হবে। আর যারা বাংলাদেশ থেকে জেদ্দা হয়ে প্রথমে মদিনা মুনাওয়ারায় যাবেন, তাদের মিকাত হবে যুলহোলাইফা; যা বর্তমানে বীরে আলী নামে পরিচিত, এখান থেকে ইহরাম বেঁধে পবিত্র মক্কায় প্রবেশ করবেন।

লেখক: ইসলামী আলোচক ও গবেষক

মন্তব্য করুন