রোজা ইসলামের মৌলিক সংস্কৃতি

প্রকাশিত: ৩:১৬ অপরাহ্ণ, মে ১৭, ২০১৯

অধীর আগ্রহে অপেক্ষার আসে সিয়ামের মাস রমজানুল কারীম। রোজা মুসলমানের বার্ষিক সংস্কৃতি। মাসব্যাপী সংস্কৃতি উদযাপনের আয়োজন। একনাগাড়ে ৩০ দিবস রজনী খোদার প্রেমসাগরে ডুব দেয়ার শুভক্ষণ। রহমত-বরকত-মাগফিরাতের বিশেষ চাদরে আবৃত হওয়ার সুবর্ণ সুযোগ। শুদ্ধ পবিত্র মানুষের সঙ্গে ইফতার করার সারথি। পবিত্রতার অলিগলিতে ঘুরে বেড়ানোর আশিস। পৃথিবীর সব শ্রেষ্ঠ মানুষ তথা নবী রোজা রেখেছেন। তাদের প্রত্যেকের বিধানে রোজাব্রত পালন করার বিধান ও পদ্ধতি ছিল একেক রকম। আমাদের নবী (সা.) ছাড়া কোনো নবীর বিধানে লাগাতার মাসব্যাপী ৩০ রোজা ফরজ ছিল না। তাদের রোজা ছিল ভিন্ন ধাঁচের ও অন্য সময়ে।

ত্রিভুবন আলোকিত করে পৃথিবীর সব মানুষের জন্য যে নবীর আগমন, তার সাম্য ও প্রীতির ধর্ম ইসলামে সর্বপ্রথম মাসব্যাপী রোজা ফরজ করা হয়। তার আগমনকে কেন্দ্র করে অতীতের সব ধর্মকে শ্রদ্ধা জানিয়ে রহিত করা হয়। আল্লাহর মনোনীত ধর্ম হিসেবে নির্বাচন করা হয় ইসলামকে। ইসলামের নবী মানুষের জীবনের সঙ্গে মিলিয়ে, সহজে পালনীয় বিধান আরোপ করলেন। ফরজ করলেন কিছু নির্বাচিত বিধিমালাকে। ইসলামের ফরজ বিধানের মধ্যে রোজাকে করলেন প্রথম সারির ফরজ। আবশ্যিক পালনীয়। রোজার জন্য নির্বাচিত করলেন হিজরি নবম মাস রমজানকে। দ্বিতীয় হিজরিতে মুসলমানের ওপর রোজাকে ফরজ করা হয়। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার, স্ত্রী সঙ্গম এবং অবৈধ কাজকর্ম পরিত্যাগ করার নাম হলো রোজা।

রোজা মুসলমানের বার্ষিক সংস্কৃতি। হৃদয়ের আরশি। যে আরশিতে দেখা যায় শুদ্ধ ভালোবাসার শহরে অবগাহন করার আল্পনা। রহমতের বারিধারায় সিক্ত হওয়ার চিত্র। মাসব্যাপী সংস্কৃতি উদযাপনের আয়োজন। একনাগাড়ে ৩০ দিবস রজনী খোদার প্রেমসাগরে ডুব দেয়ার শুভক্ষণ। রহমত-বরকত-মাগফিরাতের বিশেষ চাদরে আবৃত হওয়ার সুবর্ণ সুযোগ। শুদ্ধ পবিত্র মানুষের সঙ্গে ইফতার করার সারথি। পবিত্রতার অলিগলিতে ঘুরে বেড়ানোর আশিস। রোজা ইসলাম ধর্মের মানুষের ওপর ফরজ। আল্লাহ ঘোষণা করেছেন, ‘হে ঈমানদাররা! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতদের ওপর। যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পার।’ (সূরা বাকারা : ১৮৩)।


ইসলাম-পূর্ব যুগে পৃথিবীর কোনো মানুষের জন্য এমন তোড়জোড় আয়োজনে রোজা উদযাপন ছিল না। মাসব্যাপী একটানা রোজাব্রত পালনের বিধান ছিলনা। ইসলাম মানুষকে ভালোবেসে, পরকালীন শাশ্বত অবিনশ্বর জীবনে সুখকর জীবন উপহার দিতে রোজার বিধান। রাব্বে কারিমের দরবারে পৌঁছার সোপান। আরাধনা তপস্যায় প্রিয় মাওলাকে পাওয়ার মাহেন্দ্রক্ষণ। সুতরাং পবিত্র এ মাসে বালেগ, মুকিম, সুস্থ মানুষের ওপর রোজা রাখা কর্তব্য ও দায়িত্ব। আল্লাহ বলেন, ‘রোজা হলো সেই মাস যে মাসে কোরআন নাজিল করা হয়েছিল।

মানবজাতির জন্য হেদায়াত ও সুস্পষ্ট পথনির্দেশক এবং হক ও বাতিলের পার্থক্য নির্ণয়কারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যারাই এ মাস পাবে, তারা যেন অবশ্যই সিয়াম পালন করে।’ (সূরা বাকারা : ১৮৫)।
ইসলাম মানুষের ধর্ম। মানুষকে শুদ্ধ পথে জীবন পরিচালনা শিক্ষা দেয়ার ধর্ম। পৃথিবী এবং তার মানুষকে শান্তিতে সমৃদ্ধিতে রাখার ধর্ম। ইসলামের আছে নিজস্ব স্বকীয়তা ও বৈশিষ্ট্য। আছে মৌলিক কিছু স্বতন্ত্র বিষয়। যার ওপর ভিত্তি করে আমাদের প্রাণের ধর্ম ইসলাম।


রোজা ইসলামের মূল ভিত্তি। ইসলাম নামক একটি ঘরের মৌলিক খুঁটি।পাঁচ স্তম্ভের একটি, যার আবেদন উপেক্ষা করে কোনো মানুষ পূর্ণাঙ্গ মোমিন হতে পারে না। রোজাকে অস্বীকার করে মুসলমানের সুভাষিত প্রজ্বলিত খাতায় নাম থাকতে পারে না। মানবতার নবী রোজাকে ঘোষণা করেছেন ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের একটি বলে। হাদিসে ঘোষিত হয়েছে, ‘ইসলামের স্তম্ভ পাঁচটিÑ ১. আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোনো উপাস্য নেই এবং নিশ্চয় মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসুল, এ কথার সাক্ষ্য প্রদান করা। ২. সালাত কায়েম করা। ৩. জাকাত আদায় করা। ৪. হজ সম্পাদন করা। ৫. রমজানে সিয়ামব্রত পালন করা।’ (বোখারি : ৮)।

পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো মানুষ সাহাবি কেরামকে রোজা পালনের শিক্ষা দিয়েছেন। তারা রোজা রেখেছেন। আমল করেছেন মনোযোগ দিয়ে। ইসলামকে মেনে নিয়েছেন একমাত্র সম্বল হিসেবে। ইসলামকে পূর্ণাঙ্গভাবে জীবনে আমলে এনে শামিল হয়েছেন পৃথিবী শ্রেষ্ঠ মানুষদের কাতারে। তারা হয়েছেন পরবর্তী মানুষদের পথিকৃৎ।
হাদিসে বিধৃত হয়েছে, তালহা ইবনে উবায়দুল্লাহ (রা.) বর্ণনা করেন, ‘এলোমেলো চুলে একজন গ্রাম্য আরব লোক রাসুল (সা.) এর কাছে এলেন। অতঃপর বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে বলুন আল্লাহ তায়ালা আমার ওপর কত সালাত ফরজ করেছেন?’

তিনি বললেন, ‘পাঁচ ওয়াক্ত সালাত, তবে তুমি যদি কিছু নফল আদায় করো তা স্বতন্ত্র কথা।’ এরপর তিনি বললেন, ‘বলুন আল্লাহ আমার কত সিয়াম ফরজ করেছেন?’ আল্লাহর রাসুল বলেন, ‘রমজান মাসের সওম, তবে তুমি যদি কিছু নফল সিয়াম আদায় করো তাহলে স্বতন্ত্র কথা।’ (বোখারি : ১৮৯১)।

রোজা আমাদের জীবনে পরম ভালোবাসার বার্তা নিয়ে হাজির হয়। রোজাকে কেন্দ্র করে আমরা আচ্ছাদিত হই প্রভুর বিশেষ ছায়ায়। এ ছায়ায় নিজেকে সমর্পণ করতে পারলে আমাদের জীবন হবে সুন্দর, আলোকিত এবং সাফল্যমন্ডিত।

মন্তব্য করুন