নান্দাইলের ঐতিহ্যবাহী বলদা বিলে হাইতি উৎসবঃ হাজারো মানুষের মিলনমেলা। 

প্রকাশিত: ৮:৪৫ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৩১, ২০২৫

আকরাম হোসেন নান্দাইল উপজেলা প্রতিনিধিঃ

ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বলদা বিলে অনুষ্ঠিত হলো শতবর্ষের প্রাচীন “হাইতি” উৎসব। সোমবার (২০ অক্টোবর ২০২৫) সকালে অনুষ্ঠিত এ উৎসবে নান্দাইল, ত্রিশাল, ঈশ্বরগঞ্জ, গফরগাঁওসহ আশপাশের কয়েকটি উপজেলা থেকে হাজারো মানুষ অংশগ্রহণ করেন।প্রতি বছরের মতোই শরৎকালের শেষে বিলে পানি কমে এলে স্থানীয় কৃষক-জেলেরা দলবদ্ধভাবে মাছ ধরতে নামে। স্থানীয় ভাষায় এই গণমৎস্য শিকার উৎসবটির নাম “হাইতি”। সকাল না হতেই বিলের তীরে নেমে আসে উৎসুক জনতার ঢল—কেউ এসেছে মাছ ধরতে, কেউ আবার শুধু এই ঐতিহ্যবাহী উৎসবের আনন্দে শরিক হতে।মাঠজুড়ে ছিল উৎসবের আমেজ। কেউ নিয়ে এসেছে বাঁশের জাল, কেউ খাঁচা, পলো, ছিপ, কোচ বা চেলা। বিলের পানিতে একসঙ্গে নেমে পড়ে শত শত মানুষ। মুহূর্তেই চারদিকে পড়ে যায় সমবেত হর্ষধ্বনি ও হাসির রোল। যুবক-বৃদ্ধ সকলেই মেতে ওঠে মাছ ধরার প্রতিযোগিতায়।ধরা পড়ে দেশীয় নানা প্রজাতির মাছ—বোয়াল, শোল, গজার, ট্যাংরা, শিং, মাগুর, কৈ, তেলাপিয়া, কাতলা, রুই, পুঁটি ও মলা। কেউ বড় মাছ হাতে উল্লাসে চিৎকার দিচ্ছে, কেউ আবার হাসিমুখে ছোট মাছ ভর্তি ঝুড়ি নিয়ে ফিরছে।হাইতিতে অংশ নেওয়া এক শিকারি রহমান বলেন, “বছরজুড়ে এই দিনের অপেক্ষায় থাকি। ছোটবেলা থেকেই এখানে মাছ ধরি। এখন বয়স হয়েছে, তবুও আনন্দটা আগের মতোই লাগে।”অন্যদিকে তরুণ অংশগ্রহণকারী সোহেল মিয়া জানান, “বড় মাছ ধরতে পারলে মনে হয়, পরিশ্রম সার্থক। এটা শুধু মাছ ধরা না—এটা আমাদের গ্রামের ঐতিহ্য, যেখানে সবাই একসাথে আনন্দ ভাগাভাগি করি।”দেখা যায়- অনেকেই ধরা মাছ বিক্রির জন্য মাঠেই অস্থায়ী হাট বসিয়েছেন। দর্শনার্থীরাও সেখান থেকে তাজা দেশীয় মাছ কিনে নিচ্ছেন। উৎসবকে ঘিরে স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও নানান পণ্যের দোকান বসিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন।স্থানীয় প্রবীণদের ভাষায়, ব্রিটিশ আমল থেকেই বলদা বিলের এই হাইতি উৎসব মানুষের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি শুধু মাছ ধরার আয়োজন নয়, বরং একটি সামাজিক মিলনমেলা—যেখানে গ্রামীণ ঐক্য, পরিশ্রম আর আনন্দের রঙে মেতে ওঠে সবাই।উৎসব শেষে অংশগ্রহণকারীরা ধরা মাছ ভাগাভাগি করে নিয়ে বাড়ি ফেরেন। নান্দাইলের বলদা বিলের শতবর্ষী এই “হাইতি উৎসব” আজও ধরে রেখেছে গ্রামীণ বাংলার ঐতিহ্য, ঐক্য আর আনন্দের প্রাণচিত্র।

মন্তব্য করুন