

নতুন বছরে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর এলাকার দাওয়াতুল কোরআন তৃতীয় লিঙ্গের মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের সবক প্রদান করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক হাফেজ মাওলানা মুফতী আবদুর রহমান আজাদ জানান, বর্তমান ঢাকায় তাদের ১২টি কেন্দ্রে চালু আছে তাতে ১৭৫ জন তৃতীয় লিঙ্গের শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন। এরপর বিভাগ পর্যায় এই কার্যক্রম শুরু করা হবে।
হিজড়াদের জন্য সফলভাবে দেশের প্রথম মাদ্রাসা চালুর পর এবার সব জেলায় তৃতীয় লিঙ্গের শিক্ষার্থীদের ইসলাম শিক্ষা দেবার আগ্রহের কথা জানিয়েছেন মুফতি মুহাম্মাদ আবদুর রহমান আজাদ।
শুক্রবার ঢাকার কামরাঙ্গীরচরে প্রতিষ্ঠিত ‘দাওয়াতুল কুরআন তৃতীয় লিঙ্গের মাদ্রাসা’র বার্ষিক শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর অনুষ্ঠানে এই পরিকল্পনা জানান মাদ্রাসাটির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মুফতি আজাদ। গত নভেম্বরে প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু হওয়া এই মাদ্রাসাটি হিজড়া শিক্ষার্থীদের জন্য দেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ মাদ্রাসা।
ফতি মুহাম্মাদ আবদুর রহমান আজাদ বলেন, ইতিমধ্যেই আমরা চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা এবং বরিশালে কথা বলেছি। প্রতিটি বিভাগীয় শহরে হিজড়াদের জন্য মাদ্রাসা করে দেওয়া হবে।
জেলা শহরগুলোতে হিজড়াদের জন্য কোরান ও নামাজ শিক্ষাকেন্দ্র এবং তৃতীয় লিঙ্গের শিশুদের জন্য ঢাকায় বিনামূল্যে আবাসিক সুবিধা চালু করা হবে বলেও শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর অনুষ্ঠানে বলেন মুফতি আজাদ।
হিজড়া শিক্ষার্থীরা খুব দ্রুত শিখছেন জানিয়ে তিনি বলেন, হিজড়াদের মধ্য থেকে ইসলামি পণ্ডিত (আলেম) এবং ফতোয়া দেবার যোগ্যতাসম্পন্ন আলেম বা ‘মুফতি’ তৈরির আকাঙ্ক্ষাও রয়েছে তাঁদের।
বর্তমানে মাদ্রাসার প্রধান কেন্দ্রসহ ঢাকার ১২টি কেন্দ্রে অর্ধশতাধিক হিজড়া কোরান ও নামাজ শিখছেন বলে জানান তিনি।
“আমার মনে হচ্ছে, আগামী এক বছরের মধ্যে এদের মধ্য থেকে হাফেজ (কোরান মুখস্থ করা ব্যক্তি) বের হয়ে আসবে,” জানিয়ে মুফতি আজাদ বলেন, প্রথম হিজড়া হাফেজকে প্রতিষ্ঠানের অর্থায়নে হজে পাঠানো হবে।
বাংলাদেশে ১৯৯৬ সাল থেকে হিজড়াদের নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক সালেহ আহমেদও ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষকে অন্যান্য জেলায় কর্মকাণ্ড বিস্তারে সহায়তার ঘোষণা দেন তিনি।
দীর্ঘ এক যুগ হিজড়াদের ছোট ছোট কেন্দ্রের মাধ্যমে কোরান ও নামাজ শিক্ষা দেবার পর গত নভেম্বরে কওমি পাঠ্যক্রম অনুযায়ী এই মাদ্রাসা চালু করেন মুফতি আজাদ। তাঁকে সহায়তা করেন ২৩ বছরের অভিজ্ঞ শিক্ষক মাওলানা আবদুল আজীজ হুসাইনী, যিনি বর্তমানে মাদ্রাসাটির শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ সচিব।
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে কওমি মাদ্রাসা ছাড়া দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জানুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত বন্ধ থাকার কথা রয়েছে। গত জুলাইতে সীমিত পরিসরে কওমি মাদ্রাসাগুলো খুলে দেয় সরকার।
হিজড়ারা বাংলাদেশে ২০১৩ সাল থেকে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ হিসেবে স্বীকৃত। তাঁরা ‘হিজড়া’ পরিচয়েই ভোট দিতে ও নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বাংলাদেশে হিজড়ার সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। তবে সালেহ আহমেদের মতে এই সংখ্যা আরো অনেক বেশি হবে, যদিও এ সম্পর্কে হালনাগাদ পরিসংখ্যান নেই। তিনি জানান, আসন্ন জনশুমারিতে প্রথমবারের মতো হিজড়াদের সংখ্যা আলাদাভাবে হিসাব করার কথা রয়েছে।
এই শুমারির চূড়ান্ত জরিপ ২০২১ সালের জানুয়ারিতে হওয়ার কথা থাকলেও করোনাভাইরাসের কারণে তা পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। মহামারি পরিস্থিতির উন্নতি হলে নভেম্বর নাগাদ তা হতে পারে বলে গণমাধ্যমে জানিয়েছেন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) কর্মকর্তারা।
আই.এ/