

“…. গালিবের নিয়মিত খোঁজ-খবর রাখা ও যে কোনো প্রয়োজনে সর্বপ্রথম ছুটে যাওয়া কলরবের যুগ্ম নির্বাহী পরিচালক ও হলি টিউনের সিইও মুহাম্মদ বদরুজ্জামান গালিবের হিফজ সম্পন্ন করা বিষয়ে বলেন – “আইনুদ্দিন আল আজাদ ভাইয়ের চাওয়া ছিলো গালিব প্রথমে হাফেজ হবে তারপর সে একজন যুগশ্রেষ্ঠ আলেম হবে। আজকের এই দিনে গালিব হাফেজ হয়ে আজাদ ভাইর একটি চাওয়া পূর্ণ করেছে।”
বাংলাদেশের ইসলামী সঙ্গিতের সুরসম্রাট মরহুম আইনুদ্দিন আল আজাদ (রহ.) এর একমাত্র পূত্র আসাদুল্লাহ গালিব পবিত্র কুরআন শরীফ পূর্ণাঙ্গরূপে হিফজ সম্পন্ন করেছেন।
তিনি হাফেজ ক্বারী নাজমুল হাসানের মাদরাসা থেকে পবিত্র কুরআন হিফজ সম্পন্ন করেন। আজ ৫ সেপ্টেম্বর মাত্র ১৩ বছর বয়সেই অত্যন্ত সুনামের সাথে পবিত্র কুরআন হিফজ করেন গালিব।
- এ বিষয়ে পাবলিক ভয়েসের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছিলো তার ‘মা’, চাচা এবং আইনুদ্দিন আল আজাদ রহ. এর হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান কলরবের বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীলদের সাথে।
আইনুদ্দিন আল আজাদ রহ. এর কারণে সকলের আবেগ ও অনুভূতির জায়গায় থাকা আসাদুল্লাহ গালিবের হিফজ সম্পন্ন করা নিয়ে প্রত্যেকেই তাদের উচ্ছ্বাস ও আনন্দ প্রকাশ করেছেন।
এ বিষয়ে মরহুম আইনুদ্দিন আল আজাদ রহ. এর স্ত্রী ও গালিবের ‘মায়ের’ সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি অত্যন্ত উচ্ছ্বাসের সাথে বলেন, “আমি কিছুটা অসুস্থ ছিলাম কিন্তু গালিবের পবিত্র কুরআন হিফজ সম্পন্ন করার খবর শুনে মনে হলো যেন আমার অসুস্থতার দূর হয়ে গিয়েছে, আমি আজকে অত্যন্ত আনন্দিত এবং আল্লাহর তায়ালার কাছে শোকরিয়া আদায় করছি।”
- তিনি বলেন – যেহেতু গালিবের বাবা আইনুদ্দীন আল আজাদের স্বপ্ন ছিল তার ছেলে পবিত্র কুরআনের হাফেজ হবে। আজ তার স্বপ্ন সফল হয়েছে দেখে খুবই আনন্দিত হচ্ছি। সাথে সাথে আমি নিজেও আজকে আবেগতাড়িত হচ্ছি।
এরপর আবেগের সাথে তিনি বলেন, “আজ তার বাবা বেঁচে থাকলে খুবই আনন্দিত হতেন এবং নিজের প্রচন্ড উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতেন”।
গালিবের মা গালিবের জন্য সবার কাছে দোয়া চান এবং বলেন আমার ছেলেটার জন্য যারা যেভাবে কষ্ট করছে এবং তার খোঁজখবর রেখেছে বিশেষ করে কলরবের সাথে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। তিনি আলাদা করে কলরবের দায়িত্বশীলদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন – ও যেন ভবিষ্যতে আরো অনেক বড় আলেম হতে পারে সে জন্যও আমি সবার কাছে দোয়া ও সহযোগিতা চাই।
- একই সাথে তিনি বলেন – হিফজ সম্পন্ন করাটা আমাদের জন্য যেভাবে আনন্দের সেভাবেই বিষয়টি গর্বের হয়ে দাড়াবে যখন তার এই হিফজ তার আয়ত্ব থাকবে।
গালিবের হিফজ সম্পন্ন করা নিয়ে তার চাচা আইনুদ্দিন আল আজাদের বড় ভাই শামসুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন – “আজকে আমাদের পরিবারের জন্য একটি অন্যরকম খুশির দিন। কলরবের বদরুজ্জামান আমাকে প্রথমে সংবাদটি দিয়েছে। আমরা পারিবারিকভাবে আজকের দিনে খুবই আনন্দিত।” আমি সবার কাছে বিশেষ করে কলরবের সবার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। যেহেতু তারা নিজেদের সন্তানের মত করে আমার ভাইয়ের ছেলেটিকে লালন-পালন করছে এবং পবিত্র কুরআনের হিফজ সম্পন্ন করিয়েছেন দেখে খুব ভালো লাগছে। আশা করি সে ভবিষ্যতে আরও অনেক বড় আলেম হবে।
গালিবের হেফজ সম্পন্ন করা নিয়ে কলরবের পরিচালক রশিদ আহমদ ফেরদাউস বলেন – আইনুদ্দিন আল আজাদ রহমতুল্লাহ আলাইহীর মৃত্যুর পরে তার মায়ের অন্যত্র বিয়ে হয়ে যায়। যে কারণে সন্তানরা অনেকটাই অভিবাবকহীন হয়ে পড়েছিলো। আমরা তার সন্তানদেরকে নিজেদের সন্তান হিসেবে বড় করার চেষ্টা করছি। আইনুদ্দীন আল আজাদের একমাত্র পুত্র আসাদুল্লাহ গালিব ও আজাদ রহ. এর মেয়ে আমাদের সন্তানের মতই ছিলো সব সময়। আজকে গালিবের হিফজ কমপ্লিট হয়েছে জেনে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। এমনকি তাঁর এই হিফজ সম্পন্ন করার মধ্য দিয়ে প্রমান হয়েছে ভবিষ্যতেও সে তার শিক্ষাধারায় আরও সফলতার স্বাক্ষর রাখতে পারবে। একইসাথে সে যেন লেখাপড়ায় আরো উত্তরোত্তর সফলতা অর্জন করতে পারে এই দোয়া করছি সব সময়।
- এছাড়াও কলরবের পক্ষ থেকে তারা গালিবের ভবিষ্যত শিক্ষাজীবন নিয়ে সকল ধরণের সহযোগিতা অব্যহত রাখবেন বলেও তিনি জানিয়েছেন।
গালিবের হিফজ সম্পন্ন করা নিয়ে কলরবের নির্বাহী পরিচালক সাঈদ আহমদ উচ্ছাস প্রকাশ করে বলেন – আইনুদ্দিন আল আজাদ রহমতুল্লাহ আলাইহী ছিলেন আমাদের সর্বোচ্চ আপন একজন ব্যক্তি। তার সন্তানের প্রতি সবসময়ই আমাদের সুনজর ছিলো। এমনকি তার লেখাপড়ার সার্বিক সকল খোঁজখবর রাখাটা আমাদের কলরবের নিয়মিত দায়িত্বের মধ্যে ছিল। আমরা নিয়ম করে সকলেই গালিবের খোঁজখবর নিতাম এবং তার লেখাপড়া বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতাম। আজকের দিনে সে পবিত্র কুরআনের হিফজ সম্পন্ন করেছে জেনে আমি খুবই আনন্দিত। সাথে সাথে যারা যেভাবে আসাদুল্লাহ আল গালিবের খোঁজখবর রেখেছেন সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আমি।
গালিবের নিয়মিত খোঁজ-খবর রাখা ও যে কোনো প্রয়োজনে সর্বপ্রথম ছুটে যাওয়া কলরবের যুগ্ম নির্বাহী পরিচালক ও হলিটিউনের সিইও মুহাম্মদ বদরুজ্জামান গালিবের হিফজ সম্পন্ন করা বিষয়ে বলেন – “আইনুদ্দিন আল আজাদ ভাইয়ের চাওয়া ছিলো গালিব প্রথমে হাফেজ হবে তারপর সে একজন যুগশ্রেষ্ঠ আলেম হবে। আজকের এই দিনে গালিব হাফেজ হয়ে আজাদ ভাইর একটি চাওয়া পূর্ণ করেছে।”
- বদরুজ্জামান বলেন – ‘আমার কাছে মনে হয় আজকের দিনে তিনি বেঁচে থাকলে সবচেয়ে বেশি খুশি হতেন। তার বাবা পৃথিবীতে নাই তবে অবশ্যই তিনি হয়তোবা পরপারে থেকেও তার জন্য অনেক খুশি হচ্ছেন’।
বদরুজ্জামান আবেগ মিশ্রিত কন্ঠে বলেন – “আমরা আজাদ ভাইর জন্য জন্য দোয়া করবো, আল্লাহ রব্বুল আলামীন উনাকে যেন জান্নাতে উচ্চ মাকাম দান করেন।
- একই সাথে তিনি বলেন – আজাদ ভাই তাকে যেটা চেয়েছিলেন যে, “যুগশ্রেষ্ট আলেম যেন সে হয়”। আমরা তাকে যুগশ্রেষ্ট আলেম বানানোর সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাবো যেন আজাদ ভাইর সেই স্বপ্নের পথে এগিয়ে যেতে পারে এবং নিজেকে যুগ শ্রেষ্ঠ আলেম হিসেবে গড়ে তুলতে পারে। এ জন্য যা যা করা দরকার আমরা ইনশাল্লাহ কলরবের পক্ষ থেকে করব।
বদরুজ্জামান গালিবের হিফজের উস্তাদ প্রখ্যাত হাফেজ ও ক্বারি নাজমুল হাসানের প্রতিও ধন্যবাদ প্রকাশ করে বলেন – গালিব যাত্রাবাড়ীস্থ তাহফিজুল কুরআন ওয়াসসুন্নাহ মাদরাসা থেকে হিফজ শেষ করেছে। মাদরাসার সকলেই তার প্রতি আলাদাভাবে নজর রেখেছে। আমরা মাদরাসার সকলের প্রতিও ধন্যবাদ জানাই।
প্রসঙ্গত : বাংলাদেশের ইসলামী সঙ্গীতের প্রবাদপুরুষ, জাতীয় সাংস্কৃতিক সংগঠন কলরবের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মাওলানা আইনুদ্দিন আল আজাদ রহ. ২০১০ সালের ১৮ জুন শুক্রবার একটি মাহফিল সেরে পরবর্তী দিনের খুলনার ইসলামি সংগীতানুষ্টানে যোগ দিতে যাওয়ার প্রতিমধ্যে নাটোরের লালপুরে বিপরিতগামী ট্রাকের ধাক্কায় মারাত্মকভাবে আহত হয়ে হাসপাতালে নেওয়ার পথে ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালীন সময়ে তিনি একটি ছেলে ও একটি মেয়ে রেখে গেছেন। মৃত্যুর পর তার স্ত্রী অন্যত্র বিয়ে করেন এবং সন্তানদের খোঁজ খবর রাখার চেষ্টা করেন। অপরদিকে তার সন্তানদেরকে নিজেদের সন্তানের মত করেই বড় করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কলরবের দায়িত্বশীলরা।