

কলরবের কিশোর শিল্পী মাহফুজুল আলম। যার সুরের লহরিতে মুগ্ধ লাখো সংগীতপ্রেমি। শিশু থেকে কিশোর বয়স পর্যন্ত যিনি গজলে ডুবে আছেন এখন। একক এবং গ্রুপ মিলে প্রায় একশর কাছাকাছি সংগীত রয়েছে তার।
সম্প্রতি এই কিশোর শিল্পী তার বাবাকে হারিয়েছেন। করোনা লকডাউনের মধ্যেই গত ৩ জুন তিনি হারিয়েছেন তার বাবাকে। মাহফুজ জানিয়েছেন তার বাবার লিভার ক্যান্সার হয়েছিল। কিন্ত করোনার অজুহাতে তিনি তাঁর বাবার ঠিকমত চিকিৎসাও করাতে পারেননি হাসপাতালগুলোতে। যে আক্ষেপ তাঁর মধ্য রয়েছে।
[চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাবাকে রক্ত দিচ্ছেন মাহফুজুল আলম]
এরপরই লকডাউন কিছুটা শিথিল হওয়ার পর পরই গত ২৯ জুন তিনি ‘প্রিয় বাবা’ শিরোনামে একটি গজল প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশে ইসলামী সংগীত প্রকাশের সবচেয়ে বড় প্ল্যাটফর্মের ইউটিউব চ্যানেল হলি টিউনে।
গজলটি গেয়েছেন মাহফুজ একাই। গজলের লিরিক লিখেছেন জনপ্রিয় লেখক সাইফ সিরাজ। সূর করেছেন – মুহাম্মাদ বদরুজ্জামান। সিনেমাটোগ্রাফিতে ছিলেন সুমন হোসাইন। ভিডিও পরিচালনা করেছেন ফরহাদ আহমদ। সাউন্ড ডিজাইন করেছেন তানজিম রেজা।
- সংগীতটি প্রকাশের ১৭ দিনের মধ্যেই প্রায় চার লাখ মানুষ ইউটিউবে সঙ্গীতটি দেখেছেন। এছাড়াও ফেসবুকেও কয়েক লাখ মানুষ দেখেছেন প্রিয় বাবা শিরোনামের এই সংগীতটি।
সংগীতটি সম্পর্কে মাহফুজুল আলম পাবলিক ভয়েসকে বলেন – সংগীতটি অনেক আগেই মুহাম্মাদ বদরুজ্জামান ডেমো করেছিলো। সাইফ সিরাজ ভাইয়ের লেখা ছিল গানটি যা আমার সাথে পুরোপুরি মিলে গিয়েছিল। বাবা মারা যাওয়ার পর অনেকেই বলছেন যে বাবাকে নিয়ে একটা গান করতে তখন ঢাকায় এসে এই গানটা শোনার পর কান্না করে দেই এবং আমি গেয়ে ফেলি এবং তখন জামান ভাই বললেন যে – তুমিই এটা গাও। এরপরই গাওয়া।
তবে এই গজলটি গাওয়া এবং শুটিং করার সময় মাহফুজ প্রায়ই আবেগাপ্লুত হয়ে পরতো বলে জানিয়েছেন কয়েকজন। বাবার মৃত্যুর মাসখানেকের মধ্যেই এ ধরনের একটি সংগীত গেয়ে তিনি তার বাবার স্মৃতিকে অমর করে রেখেছেন বলা যায়।
গজলটি সম্পর্কে হলিটিউন-এর সিইও মুহাম্মাদ বদরুজ্জামান বেশ কয়েকটি ফেসবুক পোস্ট করেছেন যেখানে একাধিকবার তিনি বলেছেন এই গজলটি আমাদের একটি বিশেষ কাজ। তিনি বিস্তারিত বর্ণনায় বলেন – প্রিয় বাবা শিরোনামে সাইফ ভাইয়ের (সাইফ সিরাজ) লেখা বাবাকে নিয়ে এ সংগীতটি প্রথমে রায়হান (আবু রায়হান) গাওয়ার কথা ছিল। এরপর সিদ্ধান্ত নিলাম আমিই গাইবো, বাবার কোন গান এর আগে গাইনি বিধায়। ইতোমধ্যে মাহফুজের বাবা চলে গেছেন প্রভুর ডাকে। মাহফুজ চাইল, অনুমতির আগে গেয়ে ফেলল। ওর বাবার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে রাজি হয়ে গেলাম।
এরপরই মূলত অসাধারণ লিরিকের বাবাপ্রেমের এই সংগীতটি প্রকাশিত হয়।
সংগীতটির লিরিক –
তোমার গায়ে হাত না রেখে ঘুম হতোনা আমার
তোমায় দেখে হৃদয় থেকে দুর হতো সব আধার
তুমি আমার প্রথম গুরু
তোমার কাছে দিক্ষা শুরু
তুমি ছাড়া বুঝতোনা কেউ মান অভিমান আমার
আমায় নিয়ে আমার বাবার স্বপ্ন ছিল বড়
বলেছিলেন জীবনটাকে ফুলের মতন গড়
বাবা তোমার স্পর্শ আমায় করলো মানুষ এই জামানায়
এখন আমার দিন কেটে যায় অভাব শুধু তোমার
তোমার ছায়ায় দিন গেছে তাই দুঃখ বুঝিনিতো
আর কটা দিন থেকে গেলে কি আর ক্ষতি হতো
তোমার পরশ মিস করে যাই বাবা
তোমার মতো আর কেহ নাই বাবা
আমার মানষ্পটে বাবা এক যে আলোর পাহাড়।
প্রসঙ্গত : মাহফুজুল আলমের বাবা মোহাম্মদ আ. ওয়াদুদ একজন সরল সহজ এবং ভালো মানুষ ছিলেন। কারো সাথে কোন ঝগড়াতো দুরের কথা উচ্চ স্বরেও তিনি কথাও বলতেন না। নিজ এলাকার একটি দাখিল মাদরাসার শিক্ষক ছিলেন তিনি।
[স্থানীয় একটি ধর্মীয় জনসভায় মেধা প্রতিযোগীতায় বিজয়ীদের পুরস্কার তুলে দিচ্ছেন মাহফুজের বাবা আ. ওয়াদুদ]
এলাকার মানুষের কাছেও তিনি ছিলেন ব্যাপত সমাদৃত। গত ৩ জুন লিভার ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে ৬৫ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। আল্লাহ তাআলা মরহুমকে জান্নাতের উচ্চ স্থান দান করুক।
বাবা সম্পর্কে মাহফুজ বলেন – বাবা আমাকে অসম্ভব রকমের ভালোবাসতেন। আমাকে নিয়ে এলাকার মানুষ বাবার কাছে প্রশংসা করার সাথে সাথে বাবাও আমাকে নিয়ে প্রশংসা করতেন এবং আমাকে বাবা বলে ডাকতেন। বিশেষ করে উনার বাবা ডাকটা খুব মিস করি আমি।
সংগীতটি দেখুন :