মহিয়সী নারী বঙ্গমাতা ফজিলতুন্নেসা মুজিব বাঙালি নারীদের প্রেরণা : শেখ হাসিনা

প্রকাশিত: ৫:১৪ অপরাহ্ণ, আগস্ট ৮, ২০২০

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মহীয়সী নারী শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছিলেন বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ের সংগ্রামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একজন যোগ্য ও বিশ্বস্ত সহচর এবং বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের সহযোদ্ধা। তিনি সর্বক্ষেত্রে বাঙালি নারীদের প্রেরণা হয়ে থাকবেন।

‘তিনি অসাধারণ বুদ্ধি, সাহস, মনোবল, সর্বসংহা ও দূরদর্শিতার অধিকারী ছিলেন এবং আমৃত্যু দেশ ও জাতি গঠনে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন’ বলেন তিনি।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসে তাঁর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তিনি যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করেন। বিশেষ করে আত্মত্যাগী, লাঞ্চিত মা-বোনদের সহযোগিতা করা, তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করাসহ ব্যক্তিগতভাবে তাদের পাশে দাঁড়িয়ে সান্তনা দেন এবং সামাজিকভাবে তাদের প্রতিষ্ঠিত করার উদ্যোগ নেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৯০ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ দেয়া এক বাণীতে তাঁর মায়ের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান ।

শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক, সামাজিক ও পারিবারিক জীবনে সর্বক্ষণের সহযোগী ও অনুপ্রেরণাদাত্রী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৯০তম জন্মবার্ষিকীতে ‘বঙ্গমাতা ত্যাগ ও সুন্দরের সাহসী প্রতীক’ প্রতিপাদ্য নির্ধারিত হয়েছে। যেখানে মহীয়সী নারী বঙ্গমাতার কর্মময় জীবনের প্রকৃত অর্থ প্রতিফলিত হয়েছে বলে তিনি মনে করেন।

শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবকে বঙ্গবন্ধুর একজন যোগ্য ও বিশ্বস্ত সহচর এবং বাঙালি মুক্তিসংগ্রামের সহযোদ্ধা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তিনি অসাধারণ বুদ্ধি, সাহস, মনোবল, সর্বসংহা ও দূরদর্শিতার অধিকারী ছিলেন। তিনি আমৃত্যু দেশ ও জাতি গঠনে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের স্বাধীনতার জন্য তিনি বঙ্গবন্ধুন সঙ্গে একই স্বপ্ন দেখতেন। এ দেশের মানুষ সুন্দর জীবন পাক, ভালভাবে বাঁচুক এই প্রত্যাশা নিয়েই তিনি বাঙালির অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সবসময় ছিলেন সজাগ এবং দূরদর্শী। তাইতো একজন সাধারণ বাঙালি নারীর মতো স্বামী-সংসার, আত্মীয়-স্বজন নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও বাংলাদেশের মহান সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতার পর দেশ পুনর্গঠনে তিনি অনন্য ভূমিকা রেখে গেছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের রাজনৈতিক সাফল্যেও বঙ্গমাতা উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন। বঙ্গবন্ধু রাজনৈতিক কারণে প্রায়শই কারাগারে বন্দী থাকতেন। এই দুঃসহ সময়ে তিনি হিমালয়ের মতো অবিচল থেকে একদিকে স্বামীর কারা মুক্তিসহ আওয়ামী লীগ পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। অন্যদিকে সংসার, সন্তানদের লালন-পালন, শিক্ষাদান, বঙ্গবন্ধুকে প্রেরণা, শক্তি ও সাহস যুগিয়ে স্বাধীনতা এবং মুক্তির সংগ্রামকে সঠিক লক্ষ্যে নিয়ে যেতে অনন্য ভূমিকা পালন করেছেন।

৬-দফা ও ১১-দফার আন্দোলনে তিনি বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে গৃহবন্দী থেকে এবং পাকিস্তানে কারাবন্দী স্বামীর জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে গভীর অনিশ্চয়তা ও শঙ্কা সত্ত্বেও তিনি সীমাহীন ধৈর্য্য, সাহস ও বিচক্ষণতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেন।

তিনি বলেন, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব রাষ্ট্রীয় প্রটোকলসহ অন্যান্য দায়িত্ব সমভাবে ও অত্যন্ত সুচারুভাবে সম্পাদন করতেন। দেশ ও জাতির জন্য তাঁর অপরিসীম ত্যাগ, সহযোগিতা ও বিচক্ষণতার কারণে জাতি তাঁকে যথার্থই ‘বঙ্গমাতা’ উপাধিতে ভূষিত করেছে।

শেখ ফজিলতুন্নেসা মুজিব সম্পর্কে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব শুধু বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণীই ছিলেন না, ছিলেন বঙ্গবন্ধুর সার্বক্ষণিক রাজনৈতিক সহযোদ্ধা।

আজ শনিবার বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৯০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সকালে বনানী কবরস্থানে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সংসদ ভবনের নিজ বাসভবনে আয়োজিত আনলাইন সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

বঙ্গমাতার কর্মময় জীবনের ওপর আলোকপাত করে আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির দীর্ঘ মুক্তি সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়ে শুধু বাঙালি জাতির পিতা আর বাংলাদেশের প্রাণ পুরুষ হননি, তিনি হয়ে উঠেছিলেন একজন বিশ্ববরেণ্য রাজনীতিবিদ ও রাষ্ট্রনায়ক। আর এর পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন তারই সহধর্মিণী ও বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের সহযোদ্ধা বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব।’

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ডাক অর্থাৎ ৭ই মার্চের ভাষণের আগ মূহুর্তে বঙ্গমাতাই বঙ্গবন্ধুকে চুড়ান্ত অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর আমৃত্যু সঙ্গী মহীয়সী নারী, দেশের স্বাধীনতাসহ সকল গৌরব অর্জনের নেপথ্য প্রেরণাদাত্রী বঙ্গমাতা মুজিব।
পরে আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপকমিটির আয়োজিত বঙ্গমাতা বেগম মুজিবের ৯০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ সামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
এসময় তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে করোনার পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নিবেদিত প্রাণ কর্মীরা বন্যা দুর্গত মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে পৌঁছানোসহ রান্না করা খাবার বিতরণে প্রশাসনকে সহায়তা করে যাচ্ছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিণী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের ৯০তম জন্মবার্ষিকী আজ। ১৯৩০ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালোরাতে তিনি বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের হাতে নির্মমভাবে মৃত্যুবরণ করেন।

বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের জন্মবার্ষিকী জাতীয়ভাবে উদযাপনের লক্ষ্যে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এ বছরের প্রতিপাদ্য ‘বঙ্গমাতা ত্যাগ ও সুন্দরের সাহসী প্রতীক’।
বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তনে বঙ্গমাতার জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতি করবেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগদান করেন। জন্মবার্ষিকী অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী।
বঙ্গমাতার জন্মবার্ষিকীতে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত নারীদের আর্থিক সাহায্য ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে দুঃস্থ নারীদের সেলাই মেশিন ও মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে নগদ অর্থ প্রদান করা হবে।

সকল জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত সুবিধাভোগীদের তালিকা অনুযায়ী ৬৪ জেলায় তিন হাজার দুইশত সেলাই মেশিন ও তেরশ জন দুঃস্থ ও অসহায় নারীদের মধ্যে দুই হাজার টাকা করে মোট ছাব্বিশ লাখ টাকা প্রদান করা হবে। একই সাথে গোপালগঞ্জ জেলার দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্যে একশত ল্যাপটপ বিতরণ করা হবে।

গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আর্থিক অনুদান গ্রহণের জন্য ৫ জন, সেলাই মেশিন গ্রহণের জন্য ৫ জন এবং ল্যাপটপ গ্রহণের জন্য ৫ জন নির্বাচিত সুবিধাভোগী উপস্থিত থাকবেন। আর্থিক অনুদানের অর্থ ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতিতে প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচিত সুবিধাভোগীদের মোবাইল নম্বরে হস্তান্তর করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক উপস্থিত সুবিধাভোগীদের মধ্যে সেলাই মেশিন এবং ল্যাপটপ হস্তান্তর করবেন। সারা দেশে জেলা প্রশাসকদের সাথে সমন্বয় করে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন দপ্তর-সংস্থা বঙ্গমাতার জন্মবার্ষিকী উদযাপনে আলোচনা সভার আয়োজন করবে।

এছাড়াও মহীয়সী নারী বঙ্গমাতার গৌরবময় কর্মজীবনের উপর প্রামাণ্যচিত্র নির্মান ও স্মরণিকা প্রকাশ করা হবে। দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারসহ অন্যান্য ইলেকট্রনিক মিডিয়া বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করবে।

ইতিহাসে বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব কেবল একজন প্রাক্তন রাষ্ট্রনায়কের সহধর্মিণীই নন, বাঙালির মুক্তি সংগ্রামে অন্যতম এক নেপথ্য অনুপ্রেরণাদাত্রী। বাঙালি জাতির সুদীর্ঘ স্বাধিকার আন্দোলনের প্রতিটি পদক্ষেপে তিনি বঙ্গবন্ধুকে সক্রিয় সহযোগিতা করেছেন। ছায়ার মত অনুসরণ করেছেন প্রাণপ্রিয় স্বামী বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে। এই আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য অবদান রেখেছেন। জীবনে অনেক ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করেছেন, এজন্য অনেক কষ্ট-দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে তাকে।

বঙ্গমাতার জন্মদিন উপলক্ষে শনিবার বেলা ১২ টায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বাংলাদেশ কৃষক লীগ আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে। অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের জন্মবার্ষিকী যথাযথ মর্যাদায় পালন করার জন্য আওয়ামী লীগ, সহযোগী সংগঠনের সকল স্তরের নেতা-কর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

মন্তব্য করুন