করোনা রোধে সরকারের যে নির্দেশনা

প্রকাশিত: ১০:০৬ অপরাহ্ণ, জুন ১৫, ২০২০

মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সংক্রমণের মাত্রা বিবেচনায় পুরো দেশকে তিনটি (রেড, ইয়োলো, গ্রিন) জোনে ভাগ করা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে আগামীকাল (১৬ জুন) থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত রেড জোন চিহ্নিত এলাকা পুরোপুরি লকডাউন এবং ইয়োলো জোন আংশিক লকডাউন থাকবে। সেইসঙ্গে রেড জোনে সাধারণ ছুটি বজায় থাকবে। আর ইয়োলো ও গ্রিন জোনে স্বাস্থবিধি মেনে সীমিত পরিসরে অফিস আদালত ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চলবে।

আজ সোমবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এতে প্রথমে রেড ও ইয়োলো জোনে সাধারণ ছুটির কথা বলা হলেও পরে সংশোধন করে তা শুধু রেড জোনের জন্য করা হয়। পাশাপাশি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধকল্পে শর্তসাপেক্ষে সার্বিক কার্যাবলী চলাচলে নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ ১৬ জুন থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত বর্ধিতকরণ সংক্রান্ত  নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এই নির্দেশনাগুলো পুরো দেশেই বজায় থাকবে।

করোনা সংক্রমণ রোধে নির্দেশনাসমূহ-

১) আগামী ১৬ জুন থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা চলবে। পাশাপাশি সাপ্তাহিক ছুটিও এ নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

২) রাত ৮টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত অতি জরুরি কাজ ছাড়া (প্রয়োজনীয় বেচা-কেনা, কর্মস্থলে যাতায়াত, ওষুধ ক্রয়, চিকিৎসাসেবা, মরদেহ দাফন/সৎকার ইত্যাদি) বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। বাইরে চলাচলের সময় বাধ্যতামূলক মাস্ক পরাসহ সকল স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।

৩) নিষেধাজ্ঞাকালীন জনসাধারণসহ সবাইকে অবশ্যই স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জারি করা নির্দেশসমূহ কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে।

৪) হাটবাজার, দোকানপাটে ক্রয়-বিক্রয়কালে পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ অন্য স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে। শপিংমলের প্রবেশমুখে হাত ধোয়ার ব্যবস্থাসহ স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রাখা এবং শপিংমলে আগত যানবাহনকে অবশ্যই জীবাণুমুক্ত করতে হবে। বিকেল ৪টার মধ্যে সব দোকানপাট বন্ধ করতে হবে।

৫) আইন-শৃঙ্খলা, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা কাজে নিয়োজিত সংস্থা ও জরুরি পরিষেবা, যেমন- ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ও অন্য জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দরসমূহের কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট সেবাসহ অন্য জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিস, তাদের কর্মচারী এবং যানবাহন এ নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবে।

৬) সড়ক ও নৌপথে সব ধরনের পণ্য পরিবহনের কাজে নিয়োজিত যানবাহন চলাচল অব্যাহত থাকবে।

৭) কৃষিপণ্য, সার, বীজ, কীটনাশক, খাদ্য, শিল্প পণ্য, রাষ্ট্রীয় প্রকল্পের মালামাল, কাঁচাবাজার, খাবার, ওষুধের দোকান, হাসপাতাল ও জরুরি সেবা এবং এসবের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মীরা এ নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবে। পাশাপাশি চিকিৎসক-নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী এবং ওষুধসহ চিকিৎসা সরঞ্জামাদি বহনকারী যানবাহন ও কর্মী, গণমাধ্যম এবং ক্যাবল টিভি নেটওয়ার্কে নিয়োজিত কর্মীরা এ নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত নয়।

৮) উৎপাদন ও রপ্তানিমুখী শিল্পসহ সব কলকারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করে চালু রাখতে পারবে। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ প্রণীত বিভিন্ন শিল্প কারখানায় স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতকরণে নির্দেশনা সঠিকভাবে প্রতিপালন করতে হবে।

৯) সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। তবে অনলাইন কোর্স, ডিসট্যান্স লার্নিং অব্যাহত থাকবে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো তাদের প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে।

১০) অঞ্চলভিত্তিক নিয়ন্ত্রিত ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু রাখার ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে।

১১) অনুমোদিত অঞ্চলে শর্তসাপেক্ষে সীমিত পরিসরে নির্দিষ্টসংখ্যক যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন (বাস, নৌযান, রেল ও প্লেন) চলাচল করতে পারবে।

১২) সভা-সমাবেশ, গণজমায়েত ও অনুষ্ঠান আয়োজন বন্ধ থাকবে। ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত স্বাস্থ্যবিধি মেনে মসজিদে জামায়াতে নামাজ আদায় এবং অন্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে প্রার্থনা অনুষ্ঠান অব্যাহত থাকবে।

১৩) স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রণীত সংক্রমণের ভিত্তিতে সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল আইন- ২০১৮ অনুসরণে রেড জোন, ইয়োলো জোন এবং গ্রিন জোনে ভাগ করে জেলা/উপজেলা/এলাকা/বাড়ি/মহল্লাভিত্তিক যান চলাচল এবং জীবনযাত্রা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। এক্ষেত্রে প্রত্যেকটি জোনের জান্য কোভিড নমুনা পরীক্ষা, কোভিড-ননকোভিড স্বাস্থ্যসেবা প্রটোকল, কোয়ারেন্টাইন, আইসোলেশন, অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস, যান চলাচল, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, খাবার ও ওষুধ সরবরাহ, দরিদ্র লোকদের জন্য মানবিক সহায়তা, মসজিদ-মন্দিরসহ সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে ধর্মচর্চা, জনসচেতনতা তৈরি, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, ব্যাংকিং সুবিধাসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠান/শিল্পপ্রতিষ্ঠান/বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান পরিচালনার বিষয়ে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর তৈরি করতে হবে।

১৪) সিটি কর্পোরেশন এলাকায় অঞ্চলভিত্তিক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করার সার্বিক দায়িত্ব থাকবে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষের। সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বাইরের অঞ্চল সমন্বয় করবে জেলা প্রশাসন। আর এ কার্যক্রম সমন্বিতভাবে বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান, জেলা-উপজেলা প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ অন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তর। এ কাজে সংসদ সদস্যসহ অন্যান্য জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা ও স্বেচ্ছাসেবীদেরও সম্পৃক্ত করতে হবে।

১৫) রেড ও ইয়োলো জোনে অবস্থিত সামরিক বা বেসামরিক সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত বা বেসরকারি দপ্তরসমূহ এবং এই অঞ্চলে বসবাসকারী বর্ণিত দপ্তরের কর্মকর্তারা সাধারণ ছুটির আওতায় থাকবে। (পরে সংশোধন করে শুধু রেড জোনে সাধারণ ছুটির করা কথা বলা হয়)।

১৬) গ্রিন জোনে সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত বা বেসরকারি দপ্তরসমূহ নিজ ব্যবস্থাপনায় সীমিত পরিসরে খোলা থাকবে। এই সময়ের মধ্যে কেউ কর্মস্থল ত্যাগ করতে পারবে না। অসুস্থ কর্মচারী ও সন্তানসম্ভবা নারীরা কর্মস্থলে উপস্থিত হওয়া থেকে বিরত থাকবেন। বাকিদের স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতকরণের জন্য স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ থেকে জারি করা ১৯ দফা নির্দেশনা কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে।

১৭) স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অনুরোধ অনুসারে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ জোন সংক্রান্ত বিষয়াদি সমন্বয় করবে।

এমএম/পাবলিকভয়েস

মন্তব্য করুন