
আজ বুধবার (২২ এপ্রিল) মহামারী করোনাভাইরাসে দেশে নতুন করে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছে ৪৩৪ জন। মৃতদের ৭ জন পুরুষ এবং মহিলা ৩ জন। এরমধ্যে ঢাকার ভিতরে ৭ জন এবং বাইরে ৩ জন।
করোনাভাইরাসে বিশ্বব্যাপী মৃতের সংখ্যা প্রায় পৌনে দুই লাখ। প্রতিমূহুর্ত বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। ১ লক্ষ ৭৭ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা গেছে আজ বুধবার দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত। এরমধ্যে শুধুমাত্র আমেরিকাতেই অর্ধলক্ষ ছুঁতে চলছে মহামারী এ ভাইরাসের মৃতের সংখ্যা।
বাংলাদেশেও প্রতিদিন বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। সেই সাথে পরীক্ষা যতো বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে হু হু করে।
গত ২৪ ঘন্টায় দেশে ৩০৯৬টি পরীক্ষা হয়েছে। এতে আক্রান্ত হয়েছে ৩৯০ জন। এ নিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা হলো ৩৭৭২ জনে। মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২০ জনে।
এছাড়াও গত ২৪ ঘন্টা সুস্থ হয়েছেন ৫ জন, এখন পর্যন্ত মোট ৯২ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। ২৪ ঘন্টায় আইসোলেশনে গেছেন ১৫০ মোট আইসোলেশনে আছেন ৯০০ জন। আইসোলেশন থেকে মুক্ত হয়েছেন ১৫ জন এবং মোট মুক্ত হয়েছেন ৫৮৪
আইইডিসিআর এর অতিরিক্ত মহাপরিচালক ডা. নাসিমা সুলতানা আজ বুধবার দুপুরে নিয়মিত ব্রিফিংয়ের শুরুতে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
এদিকে মরণঘাতী করোনাভাইরাসে সংক্রমণ ঠেকাতে বাংলাদেশে ইতোমধ্যে যাবতীয় গণজমায়েত বন্ধ করা হয়েছে। তারই অংশ হিসেবে মসজিদে গিয়ে জামাত এবং জুমার নামাজেও উপস্থিতি একেবারে সীমিত করে দেওয়া হয়েছে।
আগামী ঈদুল ফিতরের নামাজ পড়া যাবে কিনা তা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে। কারণ বাংলাদেশে প্রতিদিনই বাড়ছে করোনা আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা।
এই যখন অবস্থায় তখন গত সোমবার (২০ এপ্রিল) ঈদুল ফিতরের নামাজের জামাত না হওয়ার ইঙ্গিত দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদিন সকালে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের ৮ জেলার ডিসি, চিকিৎসক ও অন্যান্য প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলার সময় এ ইঙ্গিত দেন তিনি।
আলোচনার এক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী যখন কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসনের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তখন সেখানকার পুরাতন কালেক্টরেট মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা মো. মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদের সঙ্গে কথা বলার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেখানকার শোলাকিয়া ঈদগাহে তো দেশের সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত হয়। এবার তো আমরা হয়তো জামাত করতে পারবো না। এবার আমরা ঈদের নামাজও তো করতে পারব না। সেজন্য ওনার কাছ থেকে একটু শুনি।’
এর আগে ভিডিও কনফারেন্সে রমজানে তারাবীহ নামাজ ঘরে পড়ার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নির্দেশনার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কে কখন কীভাবে সংক্রমিত হবে তা বলা যায় না। এ জন্য আমরা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নির্দেশনা মেনে ঘরে বসে নামাজ পড়ার কথা বলছি। ঘরে নামাজ পড়লে নিশ্চয়ই আল্লাহ ডাক শুনবেন।
পড়ুন: করোনায় শঙ্কিত ইমরান খান কাঁদছেন, ভিডিও ভাইরাল (ভিডিও)
সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেকেই ঘরে বসে নামাজ পড়েন। এই মহামারি থেকে বাংলাদেশের মানুষ যাতে রক্ষা পায়- সেজন্য দোয়া করেন। দেশের মানুষ যাতে বাঁচতে পারে, সেটাই আমাদের একমাত্র চাওয়া।
প্রসঙ্গত: গত বছরের ডিসেম্বর মাসে চীনের উহান শহরে করোনাভাইরাস প্রথমে ধরা পরে। এরপর ধিরে ধিরে তা ইউরোপ আমেরিকাসহ বিশ্বের প্রায় ২০৫ টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিনিয়তই জ্যামিতিক হারে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা।
করোনাভারাসের নিয়মিত আপডেট প্রকাশ করা যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের সংকলিত সর্বশেষ তথ্য অনুসারে বিশ্বব্যাপী আজ বুধবার দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা ২৫ লাখ ৬৫ হাজার ৫৫১ জন।
বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর সংখ্যা দাড়িয়েছে ১ লাখ ৭৭ হাজার ৭৮০ জন। যা প্রতিমূহুর্তে বেড়েই চলছে। একই সাথে বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হয়ে ফিরেছেন ৬ লাখ ৯৬ হাজার ৮০৭ জন।
বিশ্বে করোনায় মৃতের সংখ্যায় সবার উপরে আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে মৃতের সংখ্যা ৪০ হাজার ছাড়িয়েছে আরো দুদিন আগেই। স্থানীয় সময় বুধবার (২২ এপ্রিল) ভোর ৪টা পর্যন্ত (বাংলাদেশ সময় ২টা) দেশটিতে ৪৫ হাজার ৩৪৩ জন মানুষ মারা গেছে। সুস্থ হয়ে ফিরেছেন ৮২ হাজার ৯৭৩ জন।
বিশ্বের যে কোনো দেশের তুলনায় মৃত্যুর সংখ্যায় যুক্তরাষ্ট্রেই সবচেয়ে বেশি। এর পরেই রয়েছে ইউরোপীয় দেশ ইতালির অবস্থান।আকান্তের সংখ্যার দিক থেকেও সবচেয়ে ভয়াভহ অবস্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৮ লাখ ১৯ হাজার ১৭৫ জন।
এটিও পড়ুন: লকডাউনে জীবন পরিবর্তন: ইসলামের ছায়ায় বিশ্ববিখ্যাত বক্সার (ভিডিও)
এছাড়া এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যুবরণ করেছেন ইতালিতে ২৪ হাজার ৬৪৮ জন এবং সুস্থ হয়ে ফিরেছেন ৫১ হাজার ৬০০ জন। আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৮৩ হাজার ৯৫৭ জন।
অন্যদিকে আক্রান্তের দিক থেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যা স্পেনে ২ লাখ ৪ হজার ১৭৮ জন। দেশটিতে মৃত্যুবরণ করেছেন ২১ হাজার ২৮২ জন এবং সুস্থ হয়ে ফিরেছেন ৮২ হাজার ৫১৪ জন।
ভাইরাসটিতে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে গত ২৯ ফেব্রুয়ারি। এরপর গত ৬ এপ্রিল তা ১০ হাজারে পৌঁছায়। তখন থেকে মাত্র পাঁচ দিনের মাথায় সংখ্যাটি হয়ে যায় ২০ হাজার। বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতি ও ক্ষমতাধর দেশটিতে ৩৮ দিনে ৪০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
এতো অল্প সময়ে এতো বেশি আনুপাতিক হারে মৃত্যু হয়নি আর কোনো দেশেই। ধারণা করা হচ্ছে খুব শীঘ্রই দেশটিতে মৃতের সংখ্যা অর্ধলক্ষ পেরিয়ে যাবে।
/এসএস

