

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবরোধে লকডাউন কার্যকরে ৬দফা পরামর্শসহ সারাদেশে আনুষ্ঠানিক লকডাউনের দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে খোলা চিঠি লিখেছেন কবি, লেখক ও তরুণ সংবাদকর্মী শাহনূর শাহীন।
গত ১২ এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশের সর্বশেষ পরিস্থিতির বিশ্লেষণ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি তিনি সারাদেশে একযোগে লকডাউনের আহ্বান জানান।
চিঠিতে শাহনূর শাহীন মানননীয় প্রধানমন্ত্রীকে মমতাময়ী প্রধানমন্ত্রী সম্বোধন করে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতদের লাশের সাথে স্বজনদের বিচ্ছিন্নতার কথা তুলে ধরে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যার পর স্বজনদের লাশ দেখতে না পারার সাথে তুলনা করেন।
তিনি বলেন, প্রিয় মমতাময়ী শেখ হাসিনা! স্বজন হারানোর বেদনা কেমন হয়- তা আপনি খুব ভালো করেই জানেন। আপনি এও জানেন, আপনজনের মৃত্যুর পর তাদের লাশটুকু শেষবারের মতো দেখতে না পারার যন্ত্রণাটাও।
এই নশ্বর পৃথিবীতে আজ লাখো মানুষ তাদের আপনজনকে চোখের সামনে থেকে হাসপাতালে পাঠনোর পর আর দ্বিতীয়বারের মতো মুখটাও দেখতে পারেনি। এইমূহুর্তে আপনি এবং আপনার সরকার যথেষ্ট চেষ্টা করছে এদেশের মানুষকে নিরাপদ রাখার জন্য।
বিশেষ করে আপনার চেষ্টা, ভাবনা, চিন্তা-ফিকির ও আন্তরিকতার ব্যাপারে আস্থার কোনো ঘাটতি নেই এই মূহুর্তে। কিন্তু কেন যেন মনে হচ্ছে আমরা ভয়ঙ্কর এ ভাইরাসের পিছন পিছন ছুটছি। কিন্তু প্রশ্ন হলো, আমরা কেন করোনার পিছনে ছুটবো? আমরা কি করোনার আগে যেতে পারিনা?
চিঠিতে নেপালের পরিস্থিতি তুলে ধরে শাহনূর শাহীন দাবি করেন মাত্র ১৪ দিনের কার্যকর কোয়ারেন্টাইনে বাংলাদেশকে করোনামুক্ত করা সম্ভব। এবং এটার সর্বোচ্চ সময়সীমা ২৮দিন উল্লেখ্য করে তিনি বাংলাদেশকে করোনামুক্ত করা সম্ভব বলে জোর দাবি করেন।
এছাড়াও ঘোষিত লকডাউনের ১৪ কিংবা ২৮ দিনে কোয়ারেন্টাইন কার্যকরে একটি সুপারিশ এবং ৬ দফা পরামর্শ তুলে ধরেন তরুণ এ সংবাদকর্মী।
৬৪ জেলার ৬৪ জন জেলা প্রশাসক এর নেতৃত্বে স্থানীয় সকল সংসদ সদস্য, স্ব স্ব উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা চেয়ারম্যান, ওসি, একজন মান্যবর আলেম, একজন স্বাস্থ্যবিশেজ্ঞ এবং আরো এক-দু’জন বিশিষ্ট নাগরিকের সমন্বয়ে একটি করে কমিটি গঠনের কথা উল্লেখ্য করে এই কমিটির ৬ দফা করণীয় তুলে ধরেন শাহনূর শাহীন।
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তরুণ এই সংবাদকর্মী বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী- সবগুলো মানুষকে নীতিবান হওয়া লাগবে না। সবাইকে আপনার মনিটরিং করা লাগবে না। আপনি শুধুমাত্র ৬৪ জন জেলা প্রশাসককে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করবেন। আর বিশেষ ক্ষমতাবলে তাদেরকে সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা দিবেন। তারাই যাবতীয় কার্যক্রম মনিটরিং করবেন।
খোলা চিঠিতে শাহনূর শাহীন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সমালোচনা করেন। এছাড়াও স্বাস্থমন্ত্রীর সমালোচনা করে তিনি বলেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রণালায়ের মতো গূরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে একজন ব্যবসায়ী রাজনীতিবিদের থাকা বেমানান।
এছাড়াও কোয়ারেন্টাইন চলাকালীন সময়ে দেশের নাগরিকরা সরকারের থেকে কেমন সেবা পেতে পারে সে ব্যপারেও একটি আর্থিক বাজেট বিশ্লেষণ তুলে ধরে তিনি সারাদেশের মানুষকে ত্রাণ সহায়তার আহ্বান জানিয়েছেন।
এক্ষেত্রে তিনি বিভিন্ন সামজিক সেবামূলক সংগঠন এবং সেনাবাহিনীর সহায়তা নেওয়ারও প্রস্তাব করেছেন। এছাড়াও তিনি সরকারদলীয় নেতাদের চাল চুরির ঘটনারও সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রীকে লেখা খোলা চিঠিতে।
অল্প অল্প করে লকডাউনের সীমানা ও সময় বৃদ্ধিকে সময়ক্ষেপণ উল্লেখ্য করে প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে আশঙ্কা প্রকাশ করেন শাহনূর শাহীন। ক্ষুধার্ত মানুষগুলো খাবারের অভাবে রাস্তায় বেরিয়ে পড়লে পরিস্থিতি কোনোভাবেই সামাল দেওয়া যাবে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
এজন্য সারাদেশে সরকারীভাবে ত্রাণ সহায়তার জন্য একটি সংক্ষিপ্ত বাজেট বর্ণনা করে তিনি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সারাদেশে একযোগে কার্যকর লকডাউন ঘোষণার দাবি জানান।
নিম্নে পূর্ণাঙ্গ খোলা চিঠির পিডিএফ সংযুক্ত করা হলো। পাঠক চিঠিটি ডাউনলোড কতে চাইলে সরাসরি এই লিংকে ক্লিক করে ডাউনলোড করতে পারবেন। ডাউনলোড লিংক।
সম্পূর্ণ চিঠির পিডিএফ