

করোনাভাইরাসের কবল থেকে বাঁচতে ও করোনাভাইরাসে নিহত এবং আওয়ামীলীগের দুই নেতার মৃত্যুতে শোকপ্রস্তাব পাশ করে একাদশ জাতীয় সংসদের সপ্তম অধিবেশনে অশ্রুসজল চোখে বিশেষ দোয়া মুনাজাত করেছেন সংসদ সদস্যরা।
সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়ার নেতৃত্বে আজকে জাতীয় সংসদের সংক্ষিপ্ত অধিবেশনের শেষে আল্লাহ তায়ালার কাছে পানাহ্ চেয়ে আবেগঘণ এই দোয়া-মুনাজাত করা হয়।
দোয়ায় অংশগ্রহণ করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, স্পিকারসহ জাতীয় সংসদ অধিবেশনে যোগ দেওয়া সকল সদস্যরা। দোয়ায় প্রধানমন্ত্রীসহ অনেকেরই দু চোখ অশ্রুসজল হয়ে উঠতে দেখা যায়। দীর্ঘ চার মিনিটব্যাপী মুনাজাতে সংসদে এক আবেগঘণ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। মনে হচ্ছিলো- দেশের সর্বোচ্চ এই প্রতিষ্ঠানের সদস্যরা সবাই যেন মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ তায়ালার দরবারে নিজেদেরকে সমর্পিত করে দিয়েছেন কিছু সময়ের জন্য।
আবেগঘণ দোয়ায় মুনাজাত পরিচালনাকারী ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া কেঁদে কেঁদে আল্লাহর কাছে পরিত্রাণ চান করোনাভাইরাসের এই আজাব থেকে মুক্তির জন্য।
তিনি কান্নাবিজড়িত কন্ঠে সবাইকে নিয়ে আল্লাহর কাছে হাত তুলে বলেন, হে আল্লাহ- করোনায় যারা মারা গেছেন তাদেরকে তুমি ক্ষমা কর। আমাদেরকে তুমি এই আজাব থেকে রক্ষা করো। আল্লাহ আমরা তোমার কাছে দোয়া করছি, তোমার কাছে ফরিয়াদ জানাচ্ছি, তোমার কাছে তওবা করছি- ‘আল্লাহ আমাদেরকে তুমি মাফ করে দাও’। ‘আমাদেরকে তুমি মাফ করে দাও’। মাফ করে দেওয়ার সাথে সাথে আল্লাহ তুমি বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের করোনা ভাইরাসে যারা আক্রান্ত হয়েছে তাদেরকে সুস্থ করে দাও।
দোয়ায় তিনি বলেন, হে আল্লাহ- সারা বিশ্ববাসীকে তুমি হেফাজত করো। বাংলাদেশকে, বাংলাদেশের মানুষকে তুমি এই আজাব থেকে হেফাজত করো। রক্ষা করো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে করোনা ভাইরাস প্রতিরক্ষার জন্য বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তা যেন সফল হয়- সেই তৌফিক তুমি দান করো আল্লাহ। একই সাথে তিনি বলেন, করোনা প্রতিরক্ষায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেভাবে একটির পর একটি প্রোগ্রাম ঘোষণা করছেন সেই প্রোগ্রাম এবং সতর্কতা বাংলাদেশের মানুষ আমরা যেন মেনে চলি সেই তৌফিক তুমি দান করো।
তিনি আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করে বলেন, আল্লাহ তুমি সব পারো, তুমি বলার সাথে সাথেই সব কিছু হয়ে যায়। তোমার শক্তির তুলনা নেই। তোমার নির্দেশ হলো ‘কুন-ফাইয়াকুন’। (হয়ে যাও বলার সাথে সাথেই হয়ে যায়)। মাওলা তোমার নির্দেশ ছাড়া একটি গাছের পাতাও নড়ে না। তুমি দয়া করে আমাদের রক্ষা করো। সারা বিশ্ববাসীকে তুমি হেফাজত করো আল্লাহ।
তিনি বলেন, হে আল্লাহ- বাংলাদেশের মুসলমানেরর মত এমন ধর্মপ্রাণ মুসলমান বিশ্বে কম আছে। আমাদেরকে তুমি ক্ষমা করো। বিশ্বের মুসলমানকে তুমি রক্ষা করো আল্লাহ। তিনি বলেন বাংলাদেশের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান হলো এই সংসদ ভবন- আমরা এই সংসদ ভবনে বসে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও মাননীয় স্পিকার কে নিয়ে তোমার কাছে হাত তুলেছি। তুমি আমাদেরকে ক্ষমা করো এবং এই করোনাভাইরাস-এর আজাব থেকে আমাদেরকে রক্ষা করো।
পূর্ণাঙ্গ দোয়ার ভিডিওটি নিউজের শেষে সংযুক্ত করে দেওয়া হলো।
সংসদ অধিবেশনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব থেকে দেশের জনগণকে বাঁচাতে সকলকে নিজ নিজ অবস্থানে অবস্থান করে স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে চলার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
তিনি বলেন, বার বার আপনাদেরকে অনুরোধ করছি যে, যেখানে আছেন সেখানেই থাকেন। অর্থাৎ এটাকে (করোনা ভাইরাস) যদি আমরা একটা জায়গায় ধরে রাখতে পারি এবং সেখান থেকে যদি মানুষকে সুস্থ করতে পারি তাহলেই কিন্তু এটা আর বিস্তার লাভ করতে পারবে না।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটা যেহেতু মুখ থেকে ছড়ায়, তাই, একজন মানুষ অন্য একজন মানুষের কাছ থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকুন।’ ‘দেশবাসীকে বলবো দয়া করে সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। যে যেখানে আছেন সেখানেই অবস্থান করেন, ’ যোগ করেন তিনি।
সংসদ অধিবেশনের মধ্যে এক অধিবেশন থেকে অন্য অধিবেশনের দূরত্ব অনধিক ৬০ দিন হওয়ায় ১৮ ফেব্রুয়ারির পর এদিন সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে এদিন করোনাভাইরাস পরিস্থিতির মধ্যেই একাদশ সংসদের এই ৭ম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। তবে, সংসদ সদস্যদের মধ্যে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে স্বল্প সংখ্যক সংসদ সদস্যের অংশগ্রহণে অত্যন্ত সংক্ষিপ্তাকারে এই অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদ নেতা শেখ হাসিনা অধিবেশনে সরকার দলীয় সংসদ সদস্য শামসুর রহমান শরিফের মৃত্যুতে উত্থাপিত শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন এবং একইসঙ্গে সমাপনী ভাষণও প্রদান করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেখানে হাজার হাজার মানুষ দৈনিক মারা যাচ্ছে সেখানে অন্য দেশের সঙ্গে আপনারা যদি একটু তুলনা করেন তবে, আমরা অনেক ভাল আছি। কিন্তু আমি একটু আমার দেশের মানুষকে বলবো-আপনারা ঘরে থাকেন।’
তিনি এ সময় উদাহারণ দেন-কেউ যেন একটু বেশিই সাহসী হয়ে যাচ্ছে। ঘরে থাকার নির্দেশনা না মেনে স্ত্রীকে নিয়ে বেড়াতে গেল শিবচর, সেখান থেকে আবার টুঙ্গিপাড়া গিয়ে হাজির হল। ব্যস করোনাভাইরাস টুঙ্গিপাড়া পর্যন্ত পৌঁছিয়ে গেল। কিংবা নারায়ণগঞ্জ থেকে কেউ বরগুনা চলে গেল কেউ, ভাইরাসও গিয়ে সেখানে পৌঁছলো।
সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়টি অনেকে মানতেই চাইছে না উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা সকলকে ঘরে থাকার অনুরোধ করছি, আইনশৃংখলা রক্ষাকারি সংস্থা যথেষ্ট কষ্ট করছে দিনরাত, তারপরেও এখানে গল্প, ওখানে বসে আড্ডা। কারণ, এটাতো কোন সিমটমে বোঝা যায় না যে কার শরীরে আছে আর কার শরীরে নেই।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের যত সংসদ সদস্য এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি রয়েছেন তাঁদেরসহ সকল নেতা-কর্মী এবং দেশের সর্বস্তরের মানুষের কাছে আহ্বান করবো সকলে স্বাস্থ্য সম্পর্কে যে সচেতনতা, যেটা বার বার ঘোষণা করা হচ্ছে, যে নির্দেশনাগুলো দেওয়া হচ্ছে সবাই দয়াকরে সেই নির্দেশনাগুলো মেনে চলবেন।’
সংসদ নেতা বলেন, এই নির্দেশনাগুলো মেনে চললে নিজে যেমন সুরক্ষিত থাকতে পারবেন অপরকেও সুরক্ষিত রাখতে পারবেন। কারো এতটুকু ঝুঁকি নিজেকে যেমন অসুস্থ করে তুলতে পারে তেমনি অন্যেরও অসুস্থ হবার কারণ হবেন, সেটা যেন না হয়।
তিনি বলেন, ধান কাটার জন্য আইনশৃংখলা রক্ষাকারি বাহিনীকে বলা রয়েছে। যারা যেখানে ধান কাটতে যাবে তাঁদের পৌছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কারণ, এই ধানটা যদি আমরা সঠিকভাবে ঘরে তুলতে পারি তাহলে আর খাবারের অভাব হবে না।
তিনি এসময় প্রশাসন এবং আইন শৃংখলা রক্ষবকারি বাহিনীসহ ছাত্র-শিক্ষক, এবং জনপ্রতিনিধিদের কৃষকের ধান আহরণে সহযোগিতায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। এ সময় দেশে এক টুকরো জমিও যেন অনাবাদি না থাকে সে দিকে সকলকে লক্ষ্য রাখার আহ্বান জানিয়ে উৎপাদিত পণ্য বাজার জাত করার ব্যবস্থা সরকার এবং স্থানীয় প্রশাসন করে দেবে এবং দিচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, কৃষি উৎপাদনটা যেন অব্যাহত থাকে সেজন্য আমরা ৪ শতাংশ সুদে কৃষি ঋণ প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছি। এছাড়া বর্গাচাষীদের জন্য বিনা জামানতে ঋণ প্রদান এবং কৃষি সামগ্রীসহ অন্যান্য সামগ্রীও বিনামূল্যে এবং স্বল্পমূল্যে প্রদান করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, নির্দিষ্ট দিনে বড় খোলা মাঠে হাট বসিয়ে এবং নিরাপদ দূরত্বে পণ্য নিয়ে বসে কেনা-বেচা করা সুযোগ প্রদানেও নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের একটাই চেষ্টা মানুষের জীবনটা যেন চলে এবং তাঁরা যেন সুরক্ষিতও থাকতে পারে।’ এইচআরআর/পাবলিক ভয়েস
সংসদে পরিচালনা করা দোয়ার ভিডিও দেখুন