
আজ ১০ এপ্রিল, বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় দিন। একাত্তরের এই দিন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠন করা হয়েছিল। যার ফলশ্রুতিতে আমাদের বিজয় অর্জন ত্বরান্বিত হয়। কারণ এই সরকার গঠনের পরই আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করা হয়। ১৯৭০ সালের জাতীয় নির্বাচনে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত হয় গণপরিষদ।
পটভূমি
১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা এবং পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে দেশের জনগণের প্রতিরোধযুদ্ধ শুরু হলেও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য মুক্তিবাহিনী সংগঠন ও সমন্বয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন আদায় এবং এই যুদ্ধে প্রত্যক্ষ সহায়তাকারী রাষ্ট্র ভারতের সরকার ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে সাংগঠনিক সম্পর্ক রক্ষায় এই সরকারের ভূমিকা ছিল অপরিসীম। এই সরকার গঠনের সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধযুদ্ধ প্রবল যুদ্ধে রূপ নেয় এবং স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের বিজয় অর্জন ত্বরান্বিত হয়। মুজিবনগর সরকারের কর্মকান্ড বাংলাদেশ ভূখন্ডের বাইরে থেকে পরিচালিত হয়েছিল বলে এ সরকার প্রবাসী মুজিবনগর সরকার হিসেবেও খ্যাত।
যেভাবে গঠিত হয় স্বাধীন বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার
একাত্তর সালের ২৫ মার্চ রাতে পাক সেনাবাহিনী নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। বাঙালির রক্তে হোলি খেলায় মেতে ওঠে পাকিস্তানি বাহিনী। চারিদিকে শুরু হয় শুধু ধ্বংস আর হত্যাকাণ্ড। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। শুরু হয়ে যায় আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ। মানুষের প্রতি মমতা, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এদিন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার গঠন করা হয়। এদিন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণাকে অনুমোদন করা হয়। ঘোষণায় বলা হয় স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি এবং সৈয়দ নজরুল ইসলাম উপ-রাষ্ট্রপতি থাকবেন।
সরকার গঠনের পর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাজউদ্দিন আহমেদ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ভাষণ দেন। এ ভাষণ অবরুদ্ধ দেশবাসীকে আরো সাহস জোগায় ও মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে উজ্জীবিত করে। প্রধানমন্ত্রী তার এ ঐতিহাসিক ভাষণে বলেন, আমাদের এ মুক্তিযুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হবে না বলে স্থির বিশ্বাস। প্রতিদিনই আমাদের শক্তি বাড়ছে। আর এ সংগ্রাম বিশ্ববাসীর স্বীকৃতি লাভ করছে। প্রধানমন্ত্রী তার বেতার ভাষণে দেশের বিভিন্ন এলাকায় যুদ্ধ পরিচালনায় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারদের নামও ঘোষণা করেন। ভাষণে তিনি এ কথাও বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের প্রধান কার্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কোন এক স্থানে।
১৩ এপ্রিল ৬ সদস্যবিশিষ্ট মন্ত্রিসভার সদস্যদের নাম এবং মন্ত্রীদের মাঝে দপ্তর বণ্টন করা হয়। ১৪ এপ্রিল কর্নেল এমএজি ওসমানীকে মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। সরকার গঠনের পর শপথগ্রহণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। ১৭ এপ্রিল আমাদের ইতিহাসে এক গৌরবোজ্জ্বল দিন। মেহেরপুরের সীমান্ত লাগোয়া বৈদ্যনাথ তলার এক বিশাল আমবাগানে অতি গোপনে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের শপথগ্রহণের আয়োজন করা হয়। কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে নতুন সরকার শপথ নেয়। স্থানটির নামকরণ করা হয় মুজিবনগর। প্রবাসী মুজিবনগর সরকার সফলতার সাথে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেন। ১৬ ডিসেম্বর আমাদের চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়।
মাহিন মুহসিন/পাবলিকভয়েস

