২১ নয়, ৪৯ দিনের লকডাউনে মিলবে সমাধান: রিচার্জ গেট

বাঙালি বিজ্ঞানীর গবেষণা

প্রকাশিত: ৬:৫২ অপরাহ্ণ, মার্চ ২৯, ২০২০

২১ নয়, ৪৯ দিনের লকডাউনে করোনাভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব বলে এক গবেষণা গ্রাফের মাধ্যমে দেখিয়েছেন ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনারত বিখ্যাত গণিতবিদ ও পদার্থবিদ রণজয় অধিকারী এবং তার সহকর্মী গণিতবিদ রাজেশ সিং।

ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় ও ইনস্টিটিউট অফ ম্যাথমেটিক্যাল সায়েন্স ভারতের চেন্নাইয়ের দুই গবেষক যৌথভাবে এই গবেষণা চালিয়েছেন।

  • ভারতজুড়ে চলছে ২১ দিনের লকডাউন। এই লকডাইনে বিপর্যস্ত একশো তিরিশ কোটির দেশটি। কিন্তু একুশ দিন পরে কি আবার জনজীবন স্বাভাবিক হবে? নাকি ফের মানুষের মেলামেশায় শরীর থেকে শরীরের সেতুতে ছড়িয়ে পড়বে প্রাণঘাতী ভাইরাস তার সুবিপুল গতিতে, যে গতি অংকের ভাষায় এক্সপোনেনশিয়ালি বাড়ে।

সে প্রসঙ্গে গবেষকরা জানিয়েছেন, এই লকডাউন যদিও ভাইরাস-আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বেশ খানিকটা কমিয়ে আনতে পারবে, তবু ২১দিন পরে স্বাভাবিক মেলামেশা শুরু হলে, আবার ২০ এপ্রিল নাগাদ নতুন করে ভাইরাস-আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকবে যা ভয়ানক এক্সপোনেনশিয়াল কার্ভে চলে যাবে ১৩ মে নাগাদ, প্রায় ৬ হাজার মানুষকে আক্রান্ত করে ফেলে। তারপর ৬ থেকে ১২ হাজার, ১২ থেকে ২৪ হাজার করে লাখে পৌঁছতে সময় লাগবে মাত্র কদিন। আর লক্ষ থেকে কোটির হিসেবটা নাহয় আমরা আর নাই করলাম!

গবেষকদের মতে, যদি ২১ দিনের জায়গায় টানা ৪৯ দিন লকডাউন চালানো যায়, তাহলে ১৩ মে-র মধ্যে এই ভয়ানক ক্ষুদ্র শত্রুকে সম্পূর্ণ বাগে আরা সম্ভব। যদি সত্যিই লকডাউন ফলপ্রসূ হয় দেশ জুড়ে, ১৩ মে নাগাদ হয়তো একশোর অনেক নীচে নেমে আসবে আক্রান্তের সংখ্যা। কিন্তু এমন লকডাউনের অনেক অন্য প্রভাবও তো থাকে। অর্থনীতি দুমড়ে মুচড়ে যায়। দিন-আনি-দিন-খাই মানুষের পেটে অন্ন জোটে না। দেশে নেমে আসতে পারে ভয়ানক অরাজকতা। তাই, মাঝখানে মাঝখানে একটু বিরতি দিতে হতে পারে। অংকের সাহায্যে এমন অনেক লকডাউন প্যাটার্ন বা নক্সার সম্ভাবনা দেখিয়েছেন এই বিজ্ঞানীরা।

যদি প্রথম ২১ দিনের পরে ৫ দিন বিরতি দিয়ে, আরো ২৮ আঠাশ দিন, এবং আবার ৫ দিন বিরতি দিয়ে আরো মাত্র ১৮ দিন লকডাউন রাখা যায়, তাহলে ১০ জুনের মধ্যে আবারো আমরা জিতে যাবো করোনা-ভাইরাসের সঙ্গে লড়াইয়ে। আক্রান্তের সংখ্যা নেমে আসবে একশোর অনেক নীচে।

আবার শুরু হবে স্বাভাবিক দিন। যেহেতু কম্পিউটার প্রোগ্রামিং ও অংকের সাহায্যে করা হয়েছে এই গবেষণাটি, আমাদের সরকারে প্রয়োজন অনুযায়ী, ঠিক ঠিক কীভাবে কোন বিষয়সূচী মাথায় রেখে, অর্থনীতির উপর প্রভাব ইত্যাদি কমাতে, মানুষের সার্বিক আক্রান্ত হবার হার, বা বৃদ্ধদের মৃত্যুর হার কমাতে, ঠিক কি ভাবে সামাজিক দূরত্ব এবং লকডাউনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে তার আলাদা আলাদা পরিকল্পনা দিতে সক্ষম এই বিজ্ঞানীদের কম্পিউটেশনাল মডেলটি।

যারা অঙ্কে উৎসাহী তাদের জন্য জানানো হল যে মহামারী বিস্তারের গতিপ্রকৃতি হিসাব করার জন্য এক জটিল এসআইআর মডেল (epidemiological SIR model) ব্যবহার করা হয়েছে, পূর্বানুমানে ব্যবহৃত তথ্যের ছিদ্রপূরণের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে প্রসিদ্ধ বেসিয়ান ইমপিউটেশন (Bayesian imputation model)। ইটালি ও চীনের মানুষের সামাজিক যোগাযোগ ও ছোঁয়াছুঁয়ির যে কাঠামো, তাকে যেমন ব্যবহার করা হয়েছে, তেমনই ভারতবর্ষের পরিবারে যেভাবে তিন-প্রজন্মের মানুষ মিলেমিশে থাকেন সেখানে কিভাবে রোগ এক বয়স থেকে অন্য বয়সে আরো বেশি ছড়িয়ে যেতে পারে, তার হিসেবও রেখেছে এই গবেষণাপত্রটি।বাংলা।

এমএম/পাবলিকভয়েস

মন্তব্য করুন