
আব্দুল্লাহ জোবায়ের (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গ্রেফতার আতঙ্কে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। সম্প্রতি জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) উপজেলা শাখার প্রধান সমন্বয়কারী মোজাম্মেল হকের উপর হামলার ঘটনায় থানায় দায়ের করা মামলার পর থেকে চিকিৎসক সহ হাসপাতালের কর্মীদের মধ্যে চরম উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। ডাক্তার কর্মচারীদের অনুপস্থিতিতে হাসপাতালে আগত রোগিরা পড়েছে চরম বিপাকে।
জানা যায়, গত ১২ নভেম্বর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চত্বরে দালালচক্র ও অনিয়মের বিরুদ্ধে আয়োজিত মানববন্ধনে এনসিপি নেতা মোজাম্মেল হকের ওপর হামলা হয়। হামলার ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে থানায় এজাহার দায়ের করেন। সেই এজাহারের ভিত্তিতে পুলিশ ১৩ নভেম্বর রাতে হাসপাতালের নিরাপত্তাকর্মী শাকিল (৩৮) কে ডিউটিরত অবস্থায় আটক করে। এই ঘটনায় হাসপাতালের অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে গ্রেফতার আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে।
সোমবার সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, শিশু, অ্যানেসথেসিয়া, অবস অ্যান্ড গাইনী, অর্থোপেডিকস, সার্জারি ও এনসিডি কর্নারসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি কক্ষই ফাঁকা। মেডিকেল অফিসার ২২ নম্বর কক্ষের সামনে রোগীদের দীর্ঘ লাইন থাকলেও চিকিৎসক ছিলেন না। স্বাস্থ্য পরিদর্শকের ইনচার্জ কক্ষটিও খোলা থাকলে ভিতরে কাউকে পাওয়া যায় নি।
সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ ছিল ইপিআই কক্ষের সামনে। সকাল ৯টা থেকে শিশুকে কোলে নিয়ে মায়েরা নিয়মিত টিকার অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ইলিয়াস খান উপস্থিত না থাকায় টিকা কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হয়নি। ডিউটিরত স্বাস্থ্যসহকারী শরিফউল্লাহ জানান, ইলিয়াস খানকে মামলার আসামি করা হয়েছে শুনেছি। তাই তিনি গ্রেফতার আতঙ্কে আসছেন না। তাকে ছাড়া টিকা দেওয়া সম্ভব না। এহেন পরিস্থিতিতে সাংবাদিকদের উপস্থিতির খবর পেয়ে ইলিয়াস খান এসে টিকা কার্যক্রম শুরু করেন। উপস্থিত নার্সসহ অন্যান্য কর্মচারীদের মাঝেও চরম আতঙ্ক লক্ষ্য করা যায়।
ইপিআই মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ইলিয়াস খান বলেন, ঘটনার দিন আমি টাইফয়েড টিকা কার্যক্রমে ব্যস্ত ছিলাম। তারপরও শুনছি আমাকে মামলার আসামি করা হয়েছে।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. সুমাইয়া হোসেন লিয়া বলেন, হাসপাতালের একমাত্র নিরাপত্তাকর্মীকে ডিউটিরত অবস্থায় পুলিশ নিয়ে গেছে তাই সবাই ভয়ে আছে। শুনেছি বেশ কয়েকজনের নাম উল্লেখসহ আরো কিছু অজ্ঞাত রেখে মামলা করা হয়েছে। আমিও ছুটিতে ছিলাম, তারপরও শুনছি আমাকেও নাকি আসামি করা হয়েছে। এতে স্বাভাবিক কার্যক্রম কিছুটা ব্যাহত হলেও জরুরি বিভাগসহ গুরুত্বপূর্ণ সেবা চালু রয়েছে। আমরা রোগীদের সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জাকির হোসেন বলেন, ঘটনাটি হাসপাতালের বাইরে ঘটেছে। আমার হাসপাতালের কেউ তাতে জড়িত ছিল না। তারপরও শুনছি আমাকে মামলার প্রধান আসামি করা হয়েছে। আমার স্টাফদেরও এই মামলায় জড়ানো হচ্ছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষেকে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত আমার সকল দাপ্তরিক কার্যক্রম জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয় হতে পরিচালনার জন্য বলা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, মামলায় কাকে আসামী করা হয়েছে সে বিষয়টিও পুলিশ কর্তৃক ক্লিয়ার না করায় হাসপাতালের সকল চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীদের মধ্যে গ্রেফতার আতঙ্ক বিরাজ করছে। নিরাপত্তাকর্মীকে আটক করার পর হাসপাতাল পুরোপুরি অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীরা আতঙ্কে দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না।
এ বিষয়ে ঈশ্বরগঞ্জ থানার ওসি মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, ঘটনার ভিডিও ও তথ্য যাচাই করা হচ্ছে। যারা জড়িত নয় তাদের কাউকে আটক করা হবে না। আতঙ্কের কিছু নেই।
পিস প্যাসিলেটেটর গ্রুপের (পিএফজি) ময়মনসিংহ আঞ্চলিক কো- অর্ডিনেটর সাইফুল ইসলাম তালুকদার জানান, চিকিৎসকদের অনুপস্থিতি ও আতঙ্কজনিত অচলাবস্থার কারণে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা মানুষদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। শিশু, বৃদ্ধ ও জরুরি প্রসূতি সেবা প্রত্যাশী রোগীদের অবস্থাই সবচেয়ে করুণ। দ্রুত এ অচলাবস্থা নিরসন করা প্রয়োজন। চিকিৎসা–কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে স্বাস্থ্যসেবাকে প্রভাবমুক্ত রেখে জনগণের সেবা নিশ্চিত করা জরুরী।

