
করোনাভাইরাসের কারণে লকডাউন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে মাঠপর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের অত্যন্ত সহনশীলতা, পেশাদারিত্ব ও বিনয়ের সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. জাবেদ পাটোয়ারী।
গত শুক্রবার বিভিন্ন মাধ্যমে প্রায় সোয়া দুই লাখ পুলিশের কাছে এই বার্তা পাঠানো হয়েছে। হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার বিষয়ে সরকারের নির্দেশনা পালন করতে গিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ সদস্যরা সাধারণ পথচারী, রিকশাচালক, দিনমজুরসহ নানা পেশার মানুষকে লাঠিপেটা, কান ধরে উঠবস করানোর অভিযোগ আসার পর এই বার্তা পাঠানো হচ্ছে।
সংবাদপত্র, অনলাইন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে পুলিশ এ সব তথ্য পেয়েছে বলে পুলিশ সদর দফতর থেকে জানানো হয়।
শনিবার পুলিশ সদর দফতরের এআইজি সোহেল রানা জানান, মাঠে কাজ করা কিছু পুলিশ সদস্যের আচরণে নানা প্রশ্ন উঠেছে। এ ধরনের অভিযোগের বিষয়ে আইজিপি বিশেষ বার্তা দিয়েছেন। কনস্টেবল থেকে শীর্ষ পর্যায়ের প্রতিটি পুলিশ সদস্য যেন এই বার্তা ব্যক্তিগতভাবে পান, সে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
এ ছাড়া আইজিপি প্রতিটি ইউনিট প্রধানের সঙ্গে ফোনে এবং গ্রুপভিত্তিক ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলেছেন। আইজিপির এই বার্তা ফ্যাক্স, মোবাইল, মেইলসহ সব ধরনের মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে বলে জানান সোহেল রানা।
আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারী- বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রতিটি সদস্যকে পেশাদরিত্ব, সহনশীল, বিনয়ী আচরণ করতে বলেছেন। একই সঙ্গে ওষুধসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় অত্যাবশ্যক- জরুরি সেবার বিষয়ে জনগণ যেন ভোগান্তিতে না পড়ে সে ব্যাপারে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদানের জন্য নির্দেশ প্রদান করেছেন।
এদিকে বরিশালে দুই সাংবাদিক পিটুনির শিকার হয়েছে বলে জানা গেছে। গত শুক্রবার সরকারি প্রচার-প্রচারণার ছবি তুলতে গিয়ে পুলিশের বেধড়ক লাঠিপেটার শিকার হয়েছেন বরিশালের আঞ্চলিক ‘দৈনিক দেশ জনপদ’ পত্রিকার শাফিন আহমেদ রাতুল ও দৈনিক ‘দখিনের মুখ’ পত্রিকার নাসির উদ্দিন। লাঠিপেটার শিকার দুই সাংবাদিকের সারা শরীর ফুলে গেছে এবং জখমের সৃষ্টি হয়েছে।
আহত সাংবাদিক রাতুল জানান, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোশারফ হোসেন শুক্রবার সন্ধ্যায় জনসচেতনতামূলক প্রচারণা চালাতে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যান।
এ সময় তার বহরে পুলিশের দুটি পিকআপ ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় পৌঁছানোর পর মাস্ক পরিহিত এবং নেইম প্লেট ছাড়া একজন পুলিশ সদস্য তাদের পরিচয় জানতে চান। তারা নিজেদের আঞ্চলিক দুটি দৈনিকের ফটো সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দেন। এরপরও ওই পুলিশ সদস্য তাদের বেদম লাঠিপেটা করেন। এতে তারা হতভম্ব হয়ে যান।
এ ঘটনা তারা লজ্জায় কাউকে বলনেনি উল্লেখ্য করে বলেছেন, রাগে ক্ষোভে শনিবার তারা এ ঘটনা সহকর্মীদের জানিয়েছে।
এ ব্যপারে কথা বলেছেন বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন এবং জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমান। এরকম কিছু ঘটেছে জানেন না উল্লেখ্য করে দুঃখ প্রকাশ করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। এছাড়া জেলা প্রশাসক এই ধরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না হয় সেজন্য সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও সম্মানের জন্য সম্ভব সব কিছু করা হবে বলে জানিয়েছেন।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান বলেন, বর্তমান সংকটময় পরিস্থিতিতে জনগণের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করে তাদের বুঝিয়ে-শুনিয়ে নিজ নিজ ঘরে রাখতে সকল পুলিশ সদস্যদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
শুধু সাংবাদিক নয়, সাধারণ জনগণের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করলেও সেটা কাম্য নয়। দুই সাংবাদিককে লাঠিপেটার খবর তিনি শুনেছেন। এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের শনাক্ত করে শাস্তির আওতায় আনা হবে বলে জানান মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার।
/এসএস

