রাশিয়ায় করোনার প্রকোপ কম: নেপথ্যে পুতিনের সতর্কতা ও কঠোর প্রস্তুতি

করোনাভাইরাস পরিস্থিতি

প্রকাশিত: ১১:৩২ অপরাহ্ণ, মার্চ ২৮, ২০২০
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, ছবি: সিএনবিসি, সিএনএন ও দ্য দার্ডিয়ান

ভৌগলিক অবস্থানে বিশাল দেশ রাশিয়া। পূর্ব ইউরোপের এই দেশটি পৃথিবীর বৃহত্তমও। করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল চিনের সাথে রয়েছে দুই হাজার ৬০০ মাইলের বিশাল লম্বা সীমান্ত। বলা যায় করোনার প্রতিবেশি হয়েও নিজেদের রক্ষা করতে পেরেছে রাশিয়া।

রাশিয়ার একমাত্র সংবাদপত্র ‘দ্য মস্কো টাইমস’ এর বিভিন্ন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে দেশটিতে নেয়া পুতিনের নানান সিদ্ধান্তের কথা। মস্কো টাইমস অবলম্বনে আমাদের এই প্রতিবেদন।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে অনেকেই স্বৈরাচারী শাসক হিসেবে চেনেন। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় চিহ্নিত স্বৈরাচারী না হলেও নিঃসন্দেহে বিশ্বের সব থেকে কঠোর শাসক পুতিন। পুতিনের এই কঠোর শাসনই রাশিয়াকে করোনাভাইরাসের প্রকোপ থেকে রক্ষা করতে মুখ্য ভুমিকা রেখেছে।

চিনের প্রতিবেশী হওয়া সত্তেও এখন পর্যন্ত সাড়ে ১৪ কোটি জনসংখ্যার রাশিয়ায় করোনা সংক্রমণ সংখ্যা মাত্র ১২৬৪জন। এরমধ্যে মারা গেছেন ৫জন। রাশিয়ায় প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয় জানুয়ারির ৩০ তারিখে।

এরপরই কঠোর ব্যবস্থা ও প্রস্তুতি গ্রহণ করে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন। প্রথম কোনো নাগরিক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথেই চিনের সাথে সীমান্ত বন্ধ করে দেন পুতিন। আক্রান্ত রোগীদের জন্য স্বাস্থ্য তহবিল গঠন করেন। রোগী প্রতি ২ লক্ষ রাশিয়ান রুবল স্বাস্থ্যবীমা ঘোষণা করেন পুতিন।

করোনাভাইরাস রোগী পরিদর্শনে যাওয়ার আগে প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন পুতিন, ছবি: সিএনএন

বিভিন্ন শহরে গড়ে তোলেন কোয়ারেন্টাইন জোন। পরীক্ষা করতে থাকেন সামান্যতম সন্দেহভাজন রোগীকেও। এভাবে জানুয়ারি থেকেই কোয়ারেন্টাইন ও পরীক্ষায় ব্যস্ত রয়েছে রাশিয়া। যেখানে মাত্র মার্চে ব্যাপকহারে পরীক্ষার ওপর জোর দিয়েছিলো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

কিন্তু তার আগেই এসব সতর্কতামূলক ব্যবস্থা জারি করেন পুতিন। আস্তে আস্তে পুরো দেশে লকডাউন জারি করেন। বৈতনিক ছুটি ঘোষণা করেন সমস্ত অফিস আদালত। ২৮ শে মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পুরো এক সপ্তাহ নাগরিকদের ঘরে থাকতে কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন পুতিন।

মস্কোভিত্তিক একমাত্র জাতীয় দৈনিক ‘দ্য মস্কো টাইমস’ জানায়, বৃহস্পতিবার (২৬ মার্চ) জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে প্রেসিডেন্ট পুতিন ২৮ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত বেতনসহ ছুটি ঘোষণা করেছেন। রেস্তোঁরা এবং ক্যাফে সরবরাহের পরিষেবাগুলি বাদ দিয়ে এই নির্দেশনা কার্যকর করার কথা বলা হয়েছে।

নাগরিকদের সচেতনতা বাড়াতে জোর দিয়েছেন মাস্ক পড়া, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যাবহার করাসহ কোয়ারেন্টাইনে থাকায়। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, রাশিয়ায় শুরুতে থেকে এমন ব্যবস্থা নেয়ায় দেশটিতে সংক্রমণের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়নি।

রাশিয়ায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি ডা. মেলিতা ভজনোভিচ বলেছেন, ‘পরীক্ষা ও শনাক্ত করা, সংক্রামিত রোগী কাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে তাদের পরীক্ষা করা, আইসোলেশনের মতো ব্যবস্থা যা ডব্লিউএইচও প্রস্তাব করেছে সেগুলো রাশিয়ায় শুরু থেকেই ছিল। সেই সঙ্গে ছিল সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, যা সত্যি তুলনামূলকভাবে খুবই দ্রুত শুরু হয়েছিল।’

আর রাশিয়ার এই পূর্ব প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থাগ্রহণের কারণেই করোনাভাইরাস রাশিয়ায় প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি বলে স্বাস্থ্যকর্মীদের মত।

এদিকে আজ শনিবার (২৮ মার্চ) প্রকাশিত একটি সরকারী আদেশে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস বিস্তার রোধে ৩০মার্চ থেকে রাশিয়া তার সব সীমানা বন্ধ করবে। ব্যবস্থাটি সমস্ত যানবাহন, রেল ও পথচারী চেকপয়েন্টগুলিতে কার্যকর হবে এবং রাশিয়ার সমুদ্রসীমাতে প্রয়োগ হবে।

এছাড়াও অভ্যন্তরীণ চলাচলেও আরোপ করা হয়েছে বিধিনিষেধ। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া নাগরিকদের ভ্রমণ করতে অনুৎসাহিত করে বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত দেশের সমস্ত রিসোর্ট, শিশু পার্কসহ অন্যান্য যাবতীয় ভ্রমণ স্পটগুলোতে গমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করার কথা ভাবছেন পুতিন। ইতোমধ্যে রিসোর্টগুলো চালু রাখতে নিরুৎসাহিত করে বিভিন্ন কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে।

হাসপাতালে করোনাভাইরাস রোগী পরিদর্শনে পুতিন, ছবি: দ্য গার্ডিয়ান

অন্যদিকে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে জি -২০ নেতাদের প্রতি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার আহ্বান করে পুতিন বলেছেন, ‘এটি জীবন ও মৃত্যুর বিষয়। অবরুদ্ধ দেশগুলি থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া উচিত’।

এছাড়া নিজ দেশের ব্যবসায়ীদের সাথে এক বৈঠকে পুতিন আশা প্রকাশ করে বলেন, তিন মাসেরও কম সময়ের মধ্যে এই পরিস্থিতির সমাধান হতে পারে।

এদিকে মস্কো টাইমস জানিয়েছে, রাষ্ট্রপতি প্রশাসনের এক কর্মকর্তা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তবে পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেস্কভ জানিয়েছেন, আক্রান্ত ব্যক্তির পুতিনের সাথে কোনো যোগাযোগ ছিল না।

এদিকে আগামী ২২ এপ্রিল রাশিয়ার মধ্যবর্তী নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও করোনাভাইরাসের কারণে তা পিছিয়ে গেছে। প্রেসিডেন্ট পুতিন পরবর্তীতে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন বলে জানিয়েছে বিট্রিশ গণমাধ্যম ‘বিবিসি ইংরেজী‘ এবং ‘দ্য গার্ডিয়ান’। ইতোমধ্যে রাশিয়ার সংসদ ও আদালত এ বিষয়ে একটি আইন অনুমোদন দিয়েছে।

‘দ্য মস্কো টাইম’  ও বিট্রিশ গণমাধ্যশ ‘বিবিসি ইংরেজী‘ এবং ‘দ্য গার্ডিয়ান’ অবলম্বনে শাহনূর শাহীন

/এসএস

মন্তব্য করুন