করোনা; আগামী ১৪ দিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ

প্রকাশিত: ১১:৫৮ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ১৮, ২০২০

আগামী ১৪ দিন সতর্কতার সঙ্গে স্রেফ দুটি শর্ত পালন করলে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে পারে বাংলাদেশ। শর্ত দুটি হচ্ছে- এক. বিদেশ থেকে কেউ প্রবেশ করতে পারবে না ও দুই. ইতোমধ্যে বিদেশ ফেরতদের এবং তাদের সংস্পর্শে আসা লোকজনের যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণ করে আগামী ১৪ দিন প্রাতিষ্ঠানিক অথবা হোম কোয়ারেনটিন নিশ্চিত করতে হবে। এর অন্যথা হলে এ দেশে প্রাণঘাতী ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়তে পারে। সে ক্ষেত্রে ভয়াবহ এক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়বে ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশ।

দেশে গতকাল মঙ্গলবার আরও দুজন করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে শনাক্তকৃত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ জনে। এ ১০ জনের কেউ বিদেশ ফেরত, কেউবা তার পরিবারের সদস্য যিনি সংক্রমিত হয়েছেন বিদেশ ফেরত লোকটির মাধ্যমে। এর বাইরে এখনো পর্যন্ত দেশে আক্রান্ত হননি কেউ। এ কারণেই দ্বিতীয় শর্তটি পালন করা অত্যাবশ্যক।

জানা গেছে, শুধু যুক্তরাজ্য ছাড়া ইউরোপের সব দেশ ও আমেরিকার সঙ্গে বিমান যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে বাংলাদেশের। তবে এখনো থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে আকাশ যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। এসব দেশ থেকে যেসব প্রবাসী বাংলাদেশি ও বিদেশি বাংলাদেশে প্রবেশ করবেন, তারা করোনা ভাইরাস ছড়ানোর ক্ষেত্রে ঝুঁকির কারণ হতে পারেন।

গত আট দিনে লক্ষাধিক বাংলাদেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে দেশে ফিরেছেন। তাদের যথাযথ পদ্ধতিতে হাসপাতালে বা বাসায় কোয়ারেনটিনে রাখা খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় এটিই এখন বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

সারা দেশে এখন যারা হোম কোয়ারেনটিনে আছেন, তাদের মধ্যে অনেকেই যথাযথভাবে কোয়ারেনটিনে থাকছেন না বলে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে। কেউ কেউ কোয়ারেনটিনে থাকাবস্থায় বাজার-সদাই করছেন; বিয়েবাড়ির ভিড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ইতোমধ্যে কয়েকজনকে জেল-জরিমানাও করা হয়েছে।

আইইডিসিআরের পরিচালক গতকাল প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, বাংলাদেশে আরও যে দুজনের শরীরে করোনা ভাইরাস পাওয়া গেছে; তাদের একজন ইতালি ফেরত, অন্যজন এক মার্কিন-প্রবাসীর সংস্পর্শে আসা বাংলাদেশি নাগরিক। আক্রান্ত দুজনকে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, আইইডিসিআরে গত ২৪ ঘণ্টায় কল করেছেন ৪২০৫ জন। এসব কলের মধ্যে করোনা ভাইরাস সম্পর্কিত কলের সংখ্যা ৪১৬৪টি। আইইডিসিআরে সরাসরি এসেছেন ২০ জন। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ১৬ জন এবং প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেনটিনে আছেন ৪৩ জন।

তিনি বলেন, ইউরোপসহ করোনা আক্রান্ত দেশগুলো থেকে বাংলাদেশে আসায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। গত সোমবার কাতার এয়ারওয়েজের ফ্লাইটের পর আর কেউ বাংলাদেশে আসেননি। যারা এসেছেন, তাদের মধ্যে কারও করোনা সংক্রমণ হয়ে থাকলে ২ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে উপসর্গ দেখা পাবে। এই সময়ের মধ্যে করোনার লক্ষণ প্রকাশ না পেলে পরে আর ভাইরাসটি ছড়ানোর ঝুঁকি থাকবে না। কারণ এখন বিদেশ থেকে আসা বন্ধ রেখেছে সরকার, নতুন করে কেউ আসার কথা না।

আইইডিসিআরের এই পরিচালক আরও বলেন, ভাইরাসটি কমিউনিটি পর্যায়ে ছড়িয়েছে কিনা, তা শনাক্তকরণে আমরা পরীক্ষা করেছি। এ পর্যন্ত কাউকে পাওয়া যায়নি। আমরা আমাদের পরীক্ষা অব্যাহত রাখব।

ডা. ফ্লোরা যোগ করেন, ১৪ দিনের মধ্যে যারা এসেছেন, তাদের ক্ষেত্রে হোম কোয়ারেনটিন প্রযোজ্য। সিভিল সার্জনদের দপ্তর থেকে পাঠানো তথ্যাদির ভিত্তিতে দেশে যারা হোম কোয়ারেনটিনে আছেন, তাদের সংখ্যা আমরা জানিয়েছিলাম। এর বাইরে কিছু জায়গা আছে, হোম কোয়ারেনটিন নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। তাই আমরা প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়েছি। যারা হোম কোয়ারেনটিনে থাকছেন না, তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন যে কোনো ধরনের আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারে। হোম কোয়ারেনটিনই আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের বিষয়। তাই আমরা এ ব্যবস্থা নিয়েছি। স্থানীয় পর্যায়ে মোবাইল টিম বাড়ি বাড়ি যাচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে।

তিনি জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) পরামর্শ অনুযায়ী হোম কোয়ারেনটিনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যারা বিদেশ থেকে এসেছেন, তাদের হোম কোয়ারেনটিনের বিষয়টি যেন নিশ্চিত করা যায়, আমাদের সেই ব্যবস্থা নিতে হবে। যাদের বাড়িতে কোয়ারেনটিন করা সম্ভব নয়, আমরা তাদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেনটিনে রাখার ব্যবস্থা করছি।

এমএম/

মন্তব্য করুন