‘রমজান সামনে রেখে সিন্ডিকেট: বন্দরে আমদানীকৃত পণ্য জটের আশঙ্কা’

প্রকাশিত: ৯:৫২ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ১৬, ২০২০

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় সবক’টি মুসলিম রাষ্ট্রে রমজান মাস এলে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য দ্রব্যের দাম কমে। রমজান উপলক্ষ্যে ভোক্তাদের ডিসকাউন্ট অফার দেন ব্যবসায়ীরা। রীতিমতো এ নিয়ে প্রতিযোগীতা চলে ব্যবসায়ীদের মাঝে।

অন্যদিকে বাংলাদেশ অন্যতম বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র হওয়া সত্ত্বেও এখানে চিত্রটা পুরো উল্টো। এখানকার ব্যবসায়ীরা যেন সারা বছর এই মাসের জন্য মুখিয়ে থাকেন। রমজান মাস এলেই ব্যবসায়ীদের মুনাফা লোভ ওঠে চরমে।

প্রতিবছরই রমজান মাস এলে মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য দ্রব্যের দাম হয়ে যায় আকাশ ছোঁয়া। আর বরাবরের মতোই রমজানে লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি রোধে ব্যর্থ হয় সরকার বা প্রশাসন।

সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী বা কর্তাব্যক্তিরা মাঝে মাঝে গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে সিন্ডিকেটধারীদের ব্যপারে হুশিয়ারি উচ্চারণ কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। অন্যান্য বছরের চেয়ে এবছর মনে হচ্ছে আগে থেকেই এই লাগামহীন সিন্ডিকেট তৈরির প্রকাশ্য প্রস্তুতি নিয়ে নামছেন বড় ব্যবসায়ীরা।

রমজান মাস সামনে রেখে আমদানি করা পণ্য যথাসময়ে ডেলিভারি না নিয়ে বন্দরে ফেলে রাখছেন আমদানিকারকরা। এতে পণ্যের বাজার অস্থিতিশীল হওয়ার পাশাপাশি বন্দরের স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহতের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এমন পরিস্থিতিতে রমজানের অত্যাবশ্যকীয় পণ্য দ্রুত ডেলিভারি নিতে আমদানিকারকদের অনুরোধ জানিয়েছে স্বয়ং চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।

বন্দরসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বারবার তাগাদা দেয়ার পরও আমদানিকারক বা তাদের এজেন্টরা কনটেইনার ডেলিভারি নিচ্ছেন না। তারা বন্দরকে গোডাউন হিসেবে ব্যবহার করছেন। হয়তো বাজারে পণ্যের দাম বাড়ার অপেক্ষায় আছেন তারা।

দাম বাড়লে তখন ডেলিভারি নিয়ে যাবেন। আমদানিকারকদের এ ধরনের মানসিকতার কারণে অতীতে বিভিন্ন সময় আমদানি কনটেইনারের জট সৃষ্টি হয়।

এবারও রমজান সামনে রেখে একই পরিস্থিতি হতে পারে। এজন্য রমজানের আগেই দ্রুত আমদানি পণ্যের কনটেইনার ডেলিভারি নিতে চট্টগ্রাম চেম্বারসহ বিভিন্ন পক্ষকে চিঠি দেয়া হয়েছে।

তবে আমদানিকারকদের এজেন্টরা বলছেন, প্রতি বছরই রমজান সামনে রেখে বন্দর কর্তৃপক্ষ পণ্যজটের আশঙ্কা করে থাকে। এবার করোনাভাইরাসসহ বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে জাহাজের আগমন কমে যাওয়ায় তেমন পরিস্থিতি নাও হতে পারে।

চট্টগ্রাম বন্দর ইয়ার্ডের কনটেইনার ধারণক্ষমতা ৪৯ হাজার টিইইউএস (২০ ফুট সমমানের)। তবে রোববার পর্যন্ত কনটেইনারের সংখ্যা ছিল ২৯ হাজার টিইইউএস। গত মাসে অবশ্য এ সখ্যা ৪৪ হাজার পর্যন্ত পৌঁছেছিল। ইয়ার্ডে কনটেইনার বাড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে ৪ মার্চ চেম্বারসহ বন্দর ব্যবহারকারী বিভিন্ন পক্ষকে চিঠি দেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ।

পরিচালক (ট্রাফিক বিভাগ) স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, বিভিন্ন জাহাজে করে আমদানিকারকদের অনুকূলে চট্টগ্রাম বন্দরে যে পরিমাণ এফসিএল ও এলসিএল কনটেইনার আসছে, সে অনুযায়ী ডেলিভারি হচ্ছে না।

ফলে বন্দরে এ ধরনের কনটেইনারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। রমজান মাস উপলক্ষে ইতোমধ্যে ছোলা, খেজুর, সতেজ ফলমূল, আদা, পেঁয়াজ, রসুন ইত্যাদি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসহ অন্যান্য পণ্যবোঝাই কনটেইনার চট্টগ্রাম বন্দরে ডেলিভারির অপেক্ষায় আছে। এছাড়াও বিপুল পরিমাণ নিত্যপ্রয়োজনীয় ও অন্যান্য পণ্যবোঝাই কনটেইনার বিভিন্ন দেশের বন্দরে অপেক্ষমাণ রয়েছে।

চিঠিতে আরো বলা হয়, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য দ্রুত ডেলিভারি নেয়া না হলে বাজারে সরবরাহ ঘাটতি দেখা দিতে পারে। আর এই ঘাটতির কারণে দ্রব্যমূল্য বেড়ে গেলে ভোক্তাদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

রমজান মাসে খাদ্যদ্রব্যসহ অন্যান্য পণ্যের বাজার স্থিতিশীল, বন্দরের কনটেইনার ও জাহাজ হ্যান্ডলিং স্বাভাবিক রাখতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে আমদানি কনটেইনার ডেলিভারি নেয়া প্রয়োজন।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘চিঠি দেয়ার পর ডেলিভারি কিছুটা বেড়েছে। বর্তমানে ইয়ার্ডে ২৯ হাজার কনটেইনার রয়েছে। এটা সহনীয় পর্যায়।’

তিনি বলেন, ‘কনটেইনার ধারণক্ষমতা ছাড়িয়ে গেলে জরিমানা আরোপ কিংবা নিলামে তোলাসহ নানা ব্যবস্থা নেয়া হয়। তবে আমরা একটা ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ বজায় রাখতে চাই। সেজন্য মাঝেমধ্যে চিঠি দিয়ে তাগাদা দেই। এটা রুটিন কাজ।’

চট্টগ্রাম সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু বলেন, ‘প্রতি বছর রমজানের আগে পণ্য আমদানি বেড়ে যায় । তাই এ সময়ে স্টকহোল্ডারদের চিঠি দেয়াটা ঠিক আছে।

বন্দরতো আর গুদাম নয় যে, যত দিন ইচ্ছা সেখানে পণ্য ফেলে রাখা যাবে। তবে এবার কনটেইনার জটের মতো পরিস্থিতি নাও হতে পারে। কারণ করোনাভাইরাসসহ নানা কারণে জাহাজ আসা কমেছে। আমদানিকারকরা পণ্য কম ডেলিভারি নেয়ার একটা কারণ হতে পারে যে, বন্দরে মাঝেমধ্যে কিছু পণ্যের শুল্ক ছাড় দেয়া হয়। হয়তো তারা সেই অপেক্ষায় আছেন। আবার এমনও হতে পারে, বাজারে হয়তো এই মুহূর্তে পণ্যের চাহিদা কম।

/এসএস

মন্তব্য করুন