থার্টি ফাস্ট নাইটের ইতিহাস ও সাম্রাজ্যবাদীদের মতলব

প্রকাশিত: ১০:১৯ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৯

এইচ এম আবু বকর সিদ্দীক
সহকারী বার্তা সম্পাদক

চলমান যে খৃস্ট বর্ষপঞ্জী আছে তার পেছনে রয়েছে লম্বা ইতিহাস। এই গণনার শুরু যতোটা না বর্ষপঞ্জীর জন্য তারচেয়ে বেশি রোমানদের একটা ভ্রান্ত বিশ্বাস থেকে। এমনকি রোমানদের কাছে একসময় বছর গণনা হতো ১০ মাসে। মার্চ থেকে মার্চ।তাদের বছর ছিলো ৩০৪ দিনে। আরো মজার ব্যাপার শীতের দুই মাস তারা বর্ষ গণনার মধ্যেই আনতো না। পরবর্তীতে জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারি যোগে হয় ১২ মাসের বছর।

রোমানদের বিশ্বাস অনুযায়ী দুই মাথা ওয়ালা জানুস ছিল ভাগ্য দেবতা। তারা মনে করতো, জানুস দেবতাই তাদের ভাগ্য নির্ধারণ করে। এই কারনে রোমানরা জানুসকে পূজা করতো। জানুয়ারি মাসের নামকরণও করা হয় জানুস দেবতার নামানুসারে। যেহেতু রোমানরা জানুসকে ভাগ্য দেবতা মানতো তাই ওরা ৩১শে ডিসেম্বর রাতে জানুসের পিছনের মাথার সামনে গিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এবং পূজা করতো। রোমানরা ওই রাত পেয়েছে তা সবই জানুসের পিছনের মাথার বদৌলতে।

আমোদ-স্ফূর্তিতেও মেতে উঠতো, কারণ ওদের বিশ্বাস ছিল গত বছর যত ভালো উপলক্ষ্য যখনই রাত ১২টা বাজতো, রোমানরা জানুসের সামনের মাথার দিকে চলে যেত। কারণ তাদের বিশ্বাস ছিল আগামী বছর যদি ভালো কিছু পেতে হয়, তাহলে জানুসের সামনের মাথাকে খুশি করতে হবে। এই জন্যই রোমানরা আবার প্রার্থনা করতো। ৩১শে ডিসেম্বর সেই উৎসব-উদযাপন, পূজা- প্রার্থনা সবই ছিল জানুস দেবতা কেন্দ্রিক। সময়ের বিবর্তনে আজ যা হয়ে উঠেছে বিশ্বব্যাপী থার্টি ফাস্ট নাইট।

ঈসা আ. এর জন্মের প্রায় ৪৬ বছর আগে রোম সম্রাট জুলিয়াস সিজার সর্বপ্রথম ইংরেজি নববর্ষ উৎসবের প্রচলন করেন। ১ জানুয়ারি পাকাপোক্তভাবে নববর্ষের দিন হিসেবে নির্দিষ্ট হয় ১৫৮২ সালে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার প্রবর্তনের পর। অবশ্য আমরা যে খ্রিস্ট বছর বা খ্রিস্টাব্দ বলি, তার সূচনা হয় আরো পরে। খ্রিস্ট ধর্মের প্রবর্তক যীশুখ্রিস্টের জন্ম বছর থেকে গণনা করে ডাইওনিসিয়াম এক্সিগুয়াস নামক এক খ্রিস্টান পাদরি ৫৩২ অব্দ থেকে সূচনা করেন খ্রিস্টাব্দের।

১৫৮২ খ্রিস্টাব্দের কথা। রোমের পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরি জ্যোতির্বিদদের পরামর্শে জুলিয়ান ক্যালেন্ডার সংশোধন করেন। তার নির্দেশে ১৫৮২ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর মাস থেকে দেওয়া হয় ১০ দিন। এর ফলে ঐ বছরের ৫ তারিখকে করা হয় ১৫ তারিখ।

শুধু ইউরোপে নয় সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এখন গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নববর্ষ পালন করা হয়। সাধারণভাবে প্রাচীন পারস্যের পরাক্রমশালী সম্রাট জমশীদ খ্রিস্টপূর্ব ৮০০ সালে নওরোজের প্রবর্তন করেছিলেন। এ ধারাবাহিকতা এখনো পারস্য তথা ইরানে নওরোজ ঐতিহ্যগত নববর্ষের জাতীয় উৎসব পালিত হয়। ইরান হতেই এটা একটি সাধারণ সংস্কৃতির ধারায় মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন মুসলিম দেশ এবং ভারত উপমহাদেশে প্রবেশ করে। ধীরে ধীরে শুধু ইউরোপে নয় সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নববর্ষ পালিত হচ্ছে।

৩১ ডিসেম্বরের মধ্যরাতে বর্ষবরণের নামে বাঙালি মুসলমানসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মুসলমানরা মেতে উঠে বেপর্দা, বেহায়াপনা, বেলেল্লাপনা আর মাতলামির আনন্দে। আসলে এই উৎসবের পেছনে বানিজ্যিক সাম্রাজ্যবাদের মতলব রয়েছে। বিভিন্ন উৎসবকে জমকালো করে তারা মানুষের পকেটের পয়সা খসানোর ধান্ধায় থাকে। উৎসবের নাম করে নতুন পোশাক, নতুন খাবারসহ বিভিন্ন নতুন আইটেম বাজারজাত করাই তাদের মূল টার্গেট। কিন্তু সাধারণ জনগণ এসব সূক্ষ্ম জিনিস না বুঝে মেতে ওঠে উন্মাদনায়। এতে করে নিজেদের আর্থ-ধর্মীয় ক্ষতি চূড়ান্ত করছে চিন্তার অগোচরেই।

এসব বিধর্মীয় উৎসবের ইমাম আবু হাফস কবীর রহ. কঠোরভাবে সতর্ক করে বলেছেন, নওরোজ বা নববর্ষ উপলক্ষে যদি কেউ একটা ডিমও দান করে তার ৫০ বৎসরের আমল থাকলে তা বরবাদ হয়ে যাবে। অর্থাৎ তিনি নববর্ষ পালনের কারণে তার জিন্দেগির সমস্ত আমল বরবাদ হয়ে যাবার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

হাদীস শরীফে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। বিশ্বনবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে, সে তাদের দলভুক্ত এবং তার হাশর-নশর তাদের সাথেই হবে।(সুনানে আহমদ, সুনানে আবূ দাউদ)

থার্টি ফাস্ট নাইট যে ইসলামী সংস্কৃতির অংশ নয় তাইতোমধ্যে পরিস্কার হয়ে গেছে। তবুও আমাদেরকে এসব গর্হিত কাজ থেকে বিরত রাখতে মহান রাব্বুল আলামিনের ইরশাদ উল্লেখ করছি। তিনি সূরা আল ইমরানের ১৯ নম্বর আয়াতে বলেন-“নিশ্চয় ইসলামই আল্লাহপাকের কাছে একমাত্র মনোনীত দ্বীন”। মহান আল্লাহ আল কোরআনে সূরা মায়িদার ৩ নম্বর আয়াতে আরো ইরশাদ করেন, ‘আজ আমি তোমাদের দ্বীনকে (ইসলামকে) পরিপূর্ণ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার নিয়ামতসমূহ সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং আমি ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসেবে মনোনীত করে সন্তুষ্ট রইলাম।’

সুতরাং নিজেকে প্রশ্ন করুন, অশ্লীল গানবাজনায় মেতে থাকব নাকি যাপিত জীবনের জন্য অনুতপ্ত হবো। গভীর রাতে পর নারীর সঙ্গে অন্তরঙ্গ হবো নাকি জায়নামাযে দাঁড়িয়ে আল্লাহর রহমত কামনায় নিরত হবো। আসুন, নববর্ষ নয়, আমাদের জীবনের প্রতিটি দিনের শুরু হোক সুন্দর কাজ দিয়ে। আল্লাহর সন্তুষ্টি নিয়ে।

আই.এ/

মন্তব্য করুন