
বইপত্রের বদলের ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের কাছে এখন চাপাতি ও অস্ত্র-গুলি পাওয়া যায় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। বুয়েটের বিভিন্ন হলের কক্ষে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করে আগের দিন দুপুরে দেওয়া ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য্যর বক্তব্যের রেশ টেনে শুক্রবার সকালে নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন তিনি।
রিজভী বলেন, ‘বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, গেস্টরুমে শিক্ষার্থীদের কোনো নির্যাতন করা হয় না, বরং ভালো কিছু শেখানো হয়। আজকেও বিভিন্ন পত্রিকায় খবর আছে, গেস্টরুম, গণরুম, পলিটিকাল রুম নামক টর্চার সেলগুলোতে ছাত্রলীগ গেস্টাপো বাহিনীর (হিটলারের গোয়েন্দা সংস্থা গেস্টাপো) কায়দায় নির্যাতন করে ছাত্রদের।’
তিনি বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন আবরার ফাহাদ হত্যার প্রতিবাদে ছাত্রলীগ লোক দেখানো একটি শোকর্যা লি করেছে। এই র্যা লিতেও তারা চরম অমানবিক আচরণ প্রদর্শন করেছে। গুরুতর অসুস্থ রোগীবাহী কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্স দীর্ঘক্ষণ আটকে রেখেছিল। রোগীর স্বজনরা কাকুতি-মিনতি করলেও হাসপাতালের দিকে যেতে দেওয়া হয়নি।’
এই ছাত্রলীগের রুমে এখন বইপত্র, খাতা-কলম থাকে না; থাকে মদের বোতল, রাম দা, চাপাতি, লাঠিসোটা, অস্ত্র ও গোলাবারুদ। এখন সেই ছাত্রলীগই আবার তাদের নেতাকর্মীদের হাতেই খুন হওয়া আরেকজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর জন্য শোক র্যালি করে। এ দ্বিচারিতা কেবল তাদের পক্ষেই সম্ভব।’
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে স্বাক্ষরিত চুক্তির প্রসঙ্গ তুলে রিজভী অভিযোগ করে বলেন, চুক্তির বিপক্ষে ফেসবুকে স্ট্যাটাসে দিলে তা ব্লক করে দেওয়া হচ্ছে।
‘কুষ্টিয়ার এসপি তানভীর আরাফাতের ন্যাক্কারজনক ভূমিকার বিরুদ্ধে স্ট্যাটাস দেওয়ার কারণে শহীদ আবরার ফাহাদের ভাইয়ের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ব্লক করে দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ বিটিআরসি। কুষ্টিয়ায় সরকারি পেটোয়া বাহিনী মারধর করেছে আবরারের ছোট ভাই এবং ভাবীকে।’
বুয়েটে বিভিন্ন হলে শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ জানাতে অনলাইনে রিসার্চ প্রজেক্ট হিসেবে দুই বছর আগে চালু করা ‘ইউ রিপোর্টার’ ওয়েবপেইজটি বন্ধ করে দেওয়া নিয়েও সমালোচনা করেন বিএনপি এই নেতা।
আবরার হত্যা ঘটনার বিচার নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে বিএনপি নেতা রিজভী বলেন, ‘এই দুইটি হত্যাকাণ্ডের পর ছাত্র আন্দোলনে ভীত হয়ে সরকার খুনিদের সাজা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর ছাত্রলীগের খুনীদের সাজাতো দূরে থাক খুন হওয়াদের পরিবারগুলো নিরাপত্তাহীনতায় জীবন কাটাচ্ছে। ‘এই মিথ্যাবাদী রাখাল সরকারের আশ্বাস বিশ্বাস করলে শহীদ আবরারের হত্যাকারীদের বিচার হবে না।’
তিনি বলেন, ‘একটি ফেইসবুক গ্রুপ পেইজে দানবলীগের নির্যাতনের অভিযোগ করছিলেন ছাত্ররা। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বা সিএসই বিভাগের শিক্ষার্থীদের চালু করা সেই পেইজটি ব্লক করে দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ বিটিআরসি। রিজভী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতারা পর্যন্ত অন্যায় চুক্তির বিরুদ্ধে কথা বললে দল থেকে বহিষ্কার হচ্ছেন।’
ভারতের সঙ্গে দেশবিরোধী চুক্তিতে ক্ষুব্ধ হয়ে বিবেকের তাড়নায় ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও বিএমএ খুলনা শাখার সভাপতি ডা. শেখ বাহারুল আলম। তাকে গতকাল বহিষ্কার করেছে আওয়ামী লীগ।’
ছাত্রলীগের হাতে ঢাকা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ৫১তম তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছাত্রদল নেতা আবিদুর রহমান ও সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ছাত্রদল নেতা তাওহীদুল ইসলামের ‘হত্যার’ ঘটনার বিচার হয়নি বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
রিজভী বলেন, ‘২০১১ সালের ১৯ অক্টোবর আবিদুর রহমান আবিদকে ছাত্রদল করার কারণে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে খুনীলীগ। আলোচিত এ খুনের মামলার কোনো আসামির সাজা হয়নি। গত ১০ জুলাই আবিদ হত্যা মামলার রায়ে ১২ জন আসামি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীকে বেকসুর খালাস দিয়েছে আদালত। খুনীচক্রের অন্যতম আসামী তৎকালীন ছাত্র সংসদের ভিপি মফিজুর রহমান জুম্মা, চমেক ছাত্রলীগ সভাপতি সোহেল পারভেজ, সাধারণ সম্পাদক বিজয় সরকার, সহ-সাধারণ সম্পাদক হিমেল চাকমারা এখন বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালে ওসমানি মেডিকেল কলেজে আবু সিনা ছাত্রাবাসে ১০০৩ নম্বর কক্ষে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কলেজ শাখার আপ্যায়ন বিষয়ক সম্পাদক তাওহীদুল ইসলামকে।’
ওসমানী মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সৌমেন দে ও সাধারণ সম্পাদক সাইফুলসহ ছাত্রলীগের খুনী ১৬ নেতাকর্মীকে আসামি করে থানায় হত্যা মামলা হয়। পরে পালানোর সময় সৌমেনকে রেলস্টেশন থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ৮ জুন সৌমেন আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিও দিয়েছিল। তারপরও তাওহীদ হত্যা মামলার সব আসামিকে বেকসুর খালাস দিয়েছে আদালত।’
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবিব উন নবী খান সোহেল, কেন্দ্রীয় নেতা জয়নাল আবেদীন, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, আবদুস সালাম আজাদ, আসাদুল করীম শাহিন প্রমুখ।
আই.এ/

