হয়রানি ও মাদকের আখড়া বরিশালের ৪ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

প্রকাশিত: ১০:৫৭ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ১১, ২০১৯

এতদিন বরিশালের যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে এক বাক্যে বলা হতো, নীতি ও আদর্শে এটা অনন্য। আগে যেখানে তৈরি হতো সেরে বাংলা একে ফজলুল হক সেখানে এখন তৈরি হয় খুনী, চাঁদাবাজ ও মদকব্যবসায়ী। তৈরি হয় কথিত ছাত্রনেতারা।

বুয়েটের আবরার হত্যাকাণ্ডের পর বুয়েট শিক্ষার্থীরা র‍্যগিং নিয়ে মুখ খোলার পর বরিশালের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়ে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। একটি রাজনৈতিক সংগঠনের নামে এসব অপকর্ম করা হলেও কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পর্যন্ত পান না। তাদের ব্যাপারে প্রশাসনকেও অসহায় দেখা গেছে।

এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলির কক্ষগুলো কথিত ছাত্রনেতাদের কব্জায় থাকায় তাদের ব্যাপারে প্রশাসনকেও অসহায় দেখা গেছে। জানা গেছে, মাদকের আখড়া ও টর্চার সেল হিসেবে এখন পরিচিত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরেবাংলা হলের ১০০১ নং কক্ষটি । এত বর্বরতা অহরহ ঘটলেও অজানা আতঙ্কে কেউ মুখ খুলছেন না। ক্যাম্পাসে সংঘর্ষের কোনো ঘটনা ঘটলেই এই কক্ষ থেকেই বের হতে থাকে ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোটা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকটি সূত্র বলছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলের পঞ্চম তলায়ও অনুরূপ আরেকটি কক্ষ রয়েছে, যা নিয়ে ছাত্রদের অভিযোগের শেষ নেই। নির্যাতনের ভয়ে কেউ প্রকাশ্যে মুখ খুলতে সাহস পান না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরেবাংলা হলের প্রভোস্ট ইব্রাহিম মোল্লা অভিযোগ সম্পর্কে গণমাধ্যম কে বলেন , ১০০১ নং কক্ষটি দীর্ঘদিন সিলগালা করা ছিল। কিন্তু হঠাৎ একদিন ৭-৮ জন ছাত্র তালা ভেঙে কক্ষে ঢুকে বসবাস শুরু করে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চেয়েও অদৃশ্য কারণে পারিনি।

ছাত্র নেতা নামধারী শিক্ষার্থীরা নানা অজুহাতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওই কক্ষে ডেকে নিয়ে করা হয় মারধর। কয়েকজন ছাত্র বলছেন, এই কক্ষটিতে ইয়াবা, মদ ও গাঁজা সেবনের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। পান থেকে চুন খসলেই সাধারণ ছাত্রদের ওই কক্ষে ডেকে নিয়ে মারধর করা হয়। এই কক্ষের ছাত্রদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ আসছিল। সতর্কও করা হয়েছিল, কিন্তু কোনো কিছুই কাজে আসেনি। প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কাউন্সিলর সভায় তখন রুটিন দায়িত্বে থাকা ভিসিকে বিষয়টি এজেন্ডাভুক্ত করার কথা বলা হলেও তিনি এড়িয়ে যান। কেউ-ই কর্নপাত করছে না। ছাত্রদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েছি একাধিকবার। আমার হাত-পা বাঁধা। হায়ার অথরিটি না চাইলে কিছুই করার নেই।

সরকারি ব্রজমোহন কলেজের অশ্বিনী কুমার হলের এ ব্লকের ৩১০ নং কক্ষে ইয়াবা সেবন ও বিক্রি দেদার চলে।  সূত্র বলছে, এই কক্ষে প্রতি রাতে প্রায় ৫০ হাজার টাকার ইয়াবা ক্রয়-বিক্রয় হয়। কোনো ছাত্র প্রতিবাদ করলেই তাকে মারধর করা হয়। কলেজের ফ্লাইট সার্জেন্ট ফজলুল হক হল ও জীবনানন্দ দাশ হলেও একাধিক কক্ষকে টর্চার সেল বানানো হয়েছে। পাশাপাশি চলে মাদকের বেচাকেনা।

কথা হয় হলের কয়েকজন আবাসিক ছাত্রের সঙ্গে। তারা বলেন, শিক্ষক বা কলেজ কর্তৃপক্ষ তো সব জানে। তারাও কিছু বলেন না। আমরা তো দূরের কথা। এসব বিষয়ে বরিশাল সরকারি ব্রজমোহন কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর শফিকুর রহমান সিকদার গণমাধ্যম কে বলেন, আমাদের কলেজের বিভিন্ন হলে মাদক সেবনের বিষয়ে আমি অবগত রয়েছি। এই বিষয়ে আমরা কঠোর অবস্থানে রয়েছি।

হল সুপারদের ডাকা হয়েছে, তাদের কাছে তথ্য চাওয়া হয়েছে কোন কক্ষে কী সমস্যা হচ্ছে।বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। ক্যাম্পাসের পরিবেশ নষ্ট করতে দেয়া হবে না। বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজের ছাত্রাবাসেও এ ধরনের অভিযোগ রয়েছে। ২ নং ছাত্রাবাসের টিভি রুমে সাধারণ ছাত্রদের ওপর একাধিকবার টর্চারের ঘটনা ঘটেছে। বর্তমানে ১ নং হলের দ্বিতীয়তলায় ৪৭তম ব্যাচের বেশ কয়েকজন ছাত্রের বিরুদ্ধে মাদকের রমরমা বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে। গাঁজা, ইয়াবা ও মদ প্রায় প্রতিদিনই এই হলের দ্বিতীয়তলার একাধিক কক্ষে ঢোকে।

কলেজের এক শিক্ষক জানান, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকার কারণে এদের কিছু বলেও লাভ হয় না। এরা নেশাগ্রস্ত হওয়ায় কোনো কিছুই পরোয়া করে না। পাশাপাশি সরকারি বরিশাল পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের প্রধান ছাত্রাবাসের কয়েকটি কক্ষে অস্ত্র থাকার অভিযোগ রয়েছে। একটি রাজনৈতিক দলের নামে তারা নানা অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে।

মুহসিন/পাবলিকভয়েস

মন্তব্য করুন