
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অসুস্থতা নিয়ে নানা গুজবের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেছেন, যতক্ষণ দেহে প্রাণ আছে দেশের জন্য কাজ করে যাব। গতকাল শনিবার (৩ আগস্ট) লন্ডনের স্থানীয় সময় বিকালে লন্ডনের কেন্দ্রস্থলের ওয়েস্ট মিনিস্টার এলাকার বিখ্যাত সেন্ট্রাল হলে আয়োজিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ৪৪তম শাহদাত বার্ষিকীর শোক সভায় দেওয়া ভাষণে এ কথা বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমার চোখের অপারেশন ঢাকায় কেউ করতে চায়নি। তাই লন্ডনে আসতে হয়েছে। আগের বার চিকিৎসা করে খুব তাড়াহুড়ো করে ফিরে গিয়েছিলাম। তাই বেশ কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছিল।
সম্প্রতি দেশের ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাব সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রশাসন ছাড়াও তার দলীয় কর্মীরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযানে অংশ নিয়ে ডেঙ্গু প্রতিরোধে মাঠে রয়েছেন।
এছাড়া দেশের দুধের মান সম্পর্কিত গুজবের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদেশে এ সম্পর্কিত যথাযথ পরীক্ষায় গুজব ভিত্তিহীন বলে প্রমাণিত হয়েছে।
বিএনপিকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক দেরিতে হলেও বিএনপি বুঝতে পেরেছে। তাই তাদের ৫ জন সংসদ সদস্য সংসদে যোগ দিয়েছেন।
১৫ আগস্টের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর কন্যা বলেন, ৩৯ বছর আগে জীবনকে হাতের মুঠোয় নিয়েই আমি দেশে ফিরেছিলাম। জাতির জনকের হত্যার বিচারের দাবিতে ৩৯ বছর আগে ১৯৮০ সালের ১৬ আগস্ট লন্ডনের ইয়র্ক হলে আমি প্রথম বক্তব্য রেখেছিলাম। যদিও ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলাম।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৮০ সালে লন্ডনে আসি আমি। ইয়র্ক হলে ‘৮০ সালের ১৬ আগস্ট প্রথম দায়িত্ব নিয়েছিলাম। আমি ভাবিনি সেদিন এই দায়িত্ব নিতে হবে।
স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের স্মৃতিচারণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৮১ সালে লন্ডনে বসে দলের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার সংবাদ পাই। যে মাটিতে শুধু কবর আর কবর, আমি মৃত্যুকে হাতে নিয়ে বাংলাদেশে ফিরেছিলাম। আমার মনে হয়েছিল এইসব হত্যাকাণ্ডের বিচার না হলে বাংলাদেশ অভিশাপ মুক্ত হবে না। স্বজন হারানোর কষ্ট নিয়ে ফিরেছিলাম, কিন্তু লাখো মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি।
তিনি বলেন, আমার পাওয়ার কিছু নেই। হারাবারও কিছু নেই। শুধু বাবার আদর্শ ও আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ করে যাব।
তিনি আরও বলেন, ১৯৯৬ সালে যখন ইনডেমিনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করি সমালোচনা করেছিলাম, বলেছিলেন আমি প্রতিশোধ নিচ্ছি। বিএনপি সেদিন খুনীদের রক্ষা করতে হরতাল ডেকেছিল। বিচারপতির পরিবারের ওপর হামলা হয়েছিল। একজন সাধারণ মানুষের হত্যার বিচার যেভাবে হয়, জাতির জনকের হত্যার বিচারও সেভাবেই হয়েছে।
দেশের মানুষের ভালোবাসায় আ.লীগ বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ সালের হত্যাকারীরা কল্পনাও করেনি আ.লীগ কোনোদিন ক্ষমতায় আসবে। কিন্তু দেশের মানুষের ভালবাসায় আ.লীগ ক্ষমতায় এসেছে।
প্রবাসীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের শিল্পায়নে এবং জনগণের কর্মসংস্থানের জন্য আমরা দেশব্যাপী ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছি। দেশের বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশের সুযোগ নিয়ে আপনারাও এখানে বিভিন্ন মিল, ফ্যাক্টরি গড়ে তুলতে পারেন।’
তিনি বলেন, বিগত নির্বাচনে বাংলাদেশের সব ব্যবসায়ীরা আ.লীগকে সমর্থন দিয়েছিল। কারণ দেশে এখন হাওয়া ভবন নাই। তারা সৎভাবে ব্যবসা বাণিজ্য করছেন।
যুক্তরাজ্য আ.লীগের সভাপতি সুলতান মোহাম্মদ শরীফের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুকের পরিচালনায় সাংবাদিক আব্দুল গাফফার চৌধুরী, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ফারুক খান (অব. কর্নেল) পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমসহ আ.লীগের সব অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা সেখানে যোগ দিয়েছিলেন।
৫ তারিখে আবার ডাক্তার প্রধানমন্ত্রীর চোখ পুনঃপরীক্ষা করার পর ৭ আগস্ট দেশে ফিরবেন বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
জিআরএস/পাবলিক ভয়েস

