গুজব প্রতিরোধে দরকার জনগণের সচেতনতা : প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ৯:৫৭ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ২৫, ২০১৯
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সারাদেশে নানা রকম গুজব ছড়িয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে কাজ করে যাচ্ছে একটি মহল। পদ্মা সেতুতে মাথা লাগবে এমন গুজব সারাদেশে একটি আতঙ্ক ছড়ানোর পাঁয়তারা করছে মহলটি। এরিমধ্যে ছেলেধরা বলে বেশ কয়েক জনকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এই গুজব বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সরকারকে বিব্রতকর এবং অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে ফেলানোর জন্যই এ ধরণের ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকার সাংগঠনিকভাবে সক্রিয় হওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি দেশের গুজব প্রতিরোধে জনগণের সাচেতন হওয়ার আহ্বান জানান।

এর আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, গুজব ছড়িয়ে যারাই গণপিটুনিতে অংশ নিবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি বলেন, বাড্ডায় স্কুলে গণপিটুনিতে এক মাকে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় যারা জড়িত আছে ভিডিও ফুটেজ দেখে তাদের শনাক্ত করা হচ্ছে। এছাড়া সারাদেশে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে আটক হয়েছে আরও ১০৩ জন।

দেশের বিভিন্নস্থানে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত-আহত হয়েছে অনেকে। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, জনগণকে সচেতন ও গুজবে কান না দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। পাশাপাশি গণপিটুনির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ারও হুঁশিয়ারি দিয়েছে। এদিকে, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, যারা নিজের হাতে আইন তুলে নেবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, যে আঙ্গিকে গুজব ছড়িয়ে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে এতে একটি মহলের দুরভিসন্ধি রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময়, ৭৫-পরবর্তী সময়ে গুজব ছড়ানো হয়েছে, গুজব ছড়িয়ে বঙ্গবন্ধু পরিবারকে কলঙ্কিত করার অপচেষ্টা করা হয়েছে। সাঈদীকে চাঁদে দেখা গেছে—এমন গুজব ছড়িয়েও তাণ্ডব চালানো হয়েছিল। ওই মহলটি সব দিক দিয়ে পরাজিত হয়ে এখন দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে চায়। কিন্তু তা তারা পারবে না। এরই মধ্যে ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত করা হয়েছে। এ জন্য যারা দায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

এরকম ঘটনা সারাদেশে প্রতিদিন একটা দুইটা ঘটেই চলেছে। এই গুজব ঠেকাতে প্রশাসন সব সময় সচেতন আছেন। মুলত পদ্মাসেতুতে মানুষের মাথা লাগবে এমন গুজব ছড়িয়ে পড়ার পরপরই এ ঘটনা ঘটে।

এ গুজব ঠেকাতে ৬১ লাখ আনসার ও ভিডিপি সদস্য মাঠপর্যায়ে কাজ করবে বলেছেন বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল কাজী শরীফ কায়কোবাদ। গত মঙ্গলবার সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান।

এই গুজব ছড়ানো মধ্যে দিয়ে অনেকে নিজের ফাঁয়দা লুটে নিচ্ছে। অনেকে কয়েকটা ঘটনাতে দেখা গেছে যে ঘটনার সাথে ভিকটিমের কোনো যোগসূত্র নেই।

এ পর্যন্ত মাথাকাটা ও ছেলেধরা গুজবের কারণে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় গণপিটুনির শিকার হয়েছেন অন্তত ৩৫ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ৯ জন।

গত শনিবার (২০ জুলাই) সকালে রাজধানীর উত্তর বাড্ডার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তসলিমা রেনু নামে এক নারীকে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করা হয়। নিহত রেনু তার চার বছর বয়সী সন্তানকে ভর্তি করাতে সেদিন ওই স্কুলে গিয়েছিলেন। আর এই হত্যার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যশে ভাইরাল হওয়ার পর তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এ ঘটনায় নিহত রেনুর ভাগ্নে সৈয়দ নাসির উদ্দিন টিটু মামলা করার পর গত রোববার রাতে চারজন এবং সোমবারে একজন ও বুধবারে একজন কে গ্রেপ্তার করা হয়। এই মামলার আসামি চার থেকে পাঁচশ।

এ ব্যাপারে আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তার দলের নেতাকর্মীদের পাড়া মহল্লায় প্রত্যেকটি এলাকায় আ.লীগের উদ্যোগে নাগরিক কমিটি গঠন করার নির্দেশ দিয়েছেন।

এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী সেতু মন্ত্রীকে ৫ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন। এই ৫ দফা নির্দেশনা পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-

১. প্রত্যেক এলাকায় স্থানীয় আ.লীগ নেতৃবৃন্দর কাছে অবিলম্বে বার্তা দিতে হবে যে, এ ধরনের গুজব এবং আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার ব্যাপারে তারা যেন সতর্ক থাকে এবং জনগণের পাশে গিয়ে যেন তাদের সচেষ্ট করে। জনগণকে যেন তারা সচেতন হতে সহায়তা করে।

২. প্রত্যেক পাড়া মহল্লায় সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করে আ.লীগ নেতৃবৃন্দকে নাগরিক কমিটি গঠন করার নির্দেশ দিয়েছেন।

৩. স্কুলগুলোতে অভিভাবক ও শিক্ষকদের নিয়ে যৌথ সভা করার নির্দেশনা দিয়েছেন।

৪. প্রত্যেকটা পাড়া-মহল্লা, মসজিদ- মন্দিরে এ ব্যাপারে সচেতনতা তৈরির জন্য ইমাম, পুরোহিত বা পাদ্রীদের যেন আ.লীগের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয় সে ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন।

৫. আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাকে এ ব্যাপারে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, সারাদেশে যে গুজব সন্ত্রাস এবং আতঙ্ক সৃষ্টির পাঁয়তারা হচ্ছে সেটা স্পষ্টতই একটা পরিকল্পনা বলে এখন স্পষ্টতত প্রতীয়মান হচ্ছে। এ বাস্তবতায় আমরা দলকে সক্রিয় করবো। আমরা আ.লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে এ ধরণের গুজব সন্ত্রাসকে প্রতিহত করবো। অতীতে যেমন আমরা অগ্নি সন্ত্রাস বা অরাজক পর্যায়ের পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছি এবারও আ.লীগ একইভাবে আতঙ্ক থেকে জাতিকে মুক্তি দিবে।

জিআরএস/পাবলিক ভয়েস

মন্তব্য করুন