হিন্দু বৌদ্ধ খৃস্টান ঐক্য পরিষদের পরিচয়ে হোয়াইট হাউজে গিয়েছেন প্রিয়া সাহা

প্রিয়া সাহা

প্রকাশিত: ১২:৫৭ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ২১, ২০১৯

আমেরিকার বর্ণবাদী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশের ব্যাপারে ভিত্তিহীন এবং মনগড়া নালিশ দেওয়া প্রিয়া বিশ্বাস সাহা এখন বাংলাদেশ জুড়ে এক দেশদ্রোহী নারীর নাম। যিনি নিজের দেশের নাক ডুবিয়ে সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন অভিযোগ দিয়ে এসেছে আমেরিকার প্রেসিডেন্টের কাছে।

দেশদ্রোহী প্রিয়া সাহার এই নালিশের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর কেউ তার ব্যাপারে দায় নিতে রাজি হচ্ছে না। বর্তমানে ‘হিন্দু বৌদ্ধ খৃস্টান ঐক্য পরিষদ’র কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে থাকলে ওই সংগঠন প্রিয়া সাহার বক্তব্যের দায় নিতে অস্বিকৃতী জানিয়েছে। তারা বলছে, এ বক্তব্য প্রিয়া সাহার নিজস্ব বক্তব্য। প্রিয়া সাহা কীভাবে সেখানে গেছে জানেন না দাবি করে পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশ গুপ্ত বলেন, এটা তার ব্যক্তিগত বক্তব্য। তিনি সংগঠনের প্রতিনিধি হিসেবে সেখানে যাননি। দেশে ফিরলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে’।

তবে অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রিয়া সাহা আমেরিকার প্রেসিডেন্টের কাছে তথা হোয়াইট হাউজে গিয়েছিলেন ‘হিন্দু বৌদ্ধ খৃস্টান ঐক্য পরিষদ’র পরিচয়ে। গত ১৭ জুলাই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নির্যাতিত সংখ্যালঘুদের নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প যে অপেন প্রোগ্রাম করেছেন সেখানে বিভিন্ন দেশের মোট ২৭ জন অংশগ্রহণ করেছেন। তারা বিভিন্ন পরিচয়ের সূত্র ধরেই সেখানে উপস্থিত হতে পেরেছিলেন। যেমন তালিকায় থাকা প্রথম নামটি ছিলো ফরিদ আহমাদ যিনি নিউচিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে উগ্র খৃস্টান সন্ত্রাসী কর্তৃক নির্মম গুলির আঘাতে নিজের স্ত্রীকে হারিয়েছিলেন। তেমনিভাবে আরও যারা উপস্থিত ছিলেন সেখানে তারা বিভিন্ন পরিচয় ও সূত্র ধরে সেখানে গিয়েছিলেন। বাংলাদেশ থেকে যাওয়া প্রিয়া বিশ্বাস সাহার নামের তালিকা সেখানে ১৮ নাম্বারে রয়েছে। যেখানে তার পরিচয় দেওয়া হয়েছে, ‘বাংলাদেশের একজন হিন্দু মহিলা, যিনি বাংলাদেশে হিন্দু খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ নামের একটি সংগঠনের জেনারেল সেক্রেটারী’।

মূলত ‘ফ্রিডম হাউজ ডট ও আর জি’ নামের একটি ওয়েবসাইটে ট্রাম্পের সাথে দেখা করা এই ২৭ জনের নাম, পরিচয় ও দেখা করার কারণ বর্ণনা করেছে। সেখানে প্রিয়া বিশ্বাস সাহার নামে উপরোল্লিখিত তথ্য সংযুক্ত রয়েছে। যা থেকে প্রতীয়মান হয় এই প্রিয়া সাহা ওই সংগঠনের প্রতিনিধি হিসেবেই আমেরিকায় গিয়েছেন। এখন ওই সংগঠন অস্বীকার করলেও দেশদ্রোহীর মতো একটি অপরাধ আমলে নিয়ে তাদেরকে কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া উচিত হবে না বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

প্রসঙ্গত: মহিলা ঐক্য পরিষদ’র কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়া সাহা আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে অভিযোগ করে বলেন, বাংলাদেশের প্রায় ৩৭ মিলিয়ন (৩ কোটি ৭ লাখ) সংখ্যালঘুদেরকে বিভিন্ন ভাবে খুন, গুম করা হয়েছে। এমনকি সে নিজেও দাবি করেছে তার ঘর বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে মুসলিমরা। এবং এসবই হয়েছে রাষ্ট্রীয় মদদে মুসলিম ফান্ডামেন্টাল গ্রুপের মাধ্যমে। কিন্তু বাস্তবিকভাবে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা সবচেয়ে নিরাপদ এবং সুন্দর জীবন যাপন করে থাকে যা বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত বিষয়। কেবলমাত্র হিংসার বশবর্তি হয়ে দেশের বিরুদ্ধে এমন ভয়ংকর মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে সারাদেশে নিন্দিত হচ্ছেন এই প্রিয়া সাহা।

এদিকে প্রিয়া সাহার এই রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকান্ডের প্রতিবাদ জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল বলেছেন, বাংলাদেশ নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ট ট্রাম্পের কাছে নালিশের বিষয়টি চক্রান্তের অংশ ছাড়া কিছু নয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশে এ ধরণের কোনো ঘটনা ঘটেনি। শুক্রবার সন্ধ্যায় স্বরাস্ট্রমন্ত্রী তার নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘নালিশ সংক্রান্ত ভিডিওটি দেখলাম। এ ধরণের ঘটনা বাংলাদেশে ঘটেনি। আমাদের বাংলাদেশটা প্রধানমন্ত্রীর কঠোর পরিশ্রমের ফলে আমরা পেয়েছি, যেটা কিনা বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন দেখেছিল। এই মহিলাটি আমাদের কাছেও কখনো এ ব্যাপারে আসেননি কিংবা পুলিশ প্রশাসনের কাছেও যাননি। আমাদের পুলিশ প্রশাসন অত্যন্ত সজাগ থাকেন যাতে কোথাও কোনো সংখ্যালঘু নির্যাতনের শিকার না হন’।

মন্ত্রী আরও বলেন, ‘এই মহিলা যা বলেছেন তা চক্রান্তের অংশ বলে মনে করছি। আমি এখনো বলব, কোথাও এ ধরনের ঘটনা থাকলে আমাদের বলুক বা পুলিশকে বলুক’।

কে এই প্রিয়া সাহা: খোজ নিয়ে জানা গেছে, প্রিয়া সাহা মহিলা ঐক্য পরিষদ’র কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন, উনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ইউনিয়ন করতেন এবং রোকেয়া হলে থাকতেন। এখন একটি এনজিও আছে ওনার। বিভ্রান্তিমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য গতবছর তাকে মহিলা ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। নিজের বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার নাটক করে প্রচুর বিদেশি ফান্ড কালেক্ট করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তার গ্রামের বাড়ি পিরোজপুর জেলার নাজিরপুরের মাটিভাঙ্গার চরবানী এলাকায়।

তার স্বামী মলয় সাহা দূর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক। তাদের দুই মেয়ে কয়েক বছর ধরে আমেরিকায় বসবাস করছে বলে জানা গেছে। এমনকি প্রিয়া সাহা আমেরিকা যাওয়ার আগে মলয় সাহা নিজেই তাকে বিমানবন্দরে পৌঁছে দিয়েছে বলেও জানা গেছে। জানা যায়, সকালের ফ্লাইট মিস করায় ওই দিন রাতের ফ্লাইটে আমেরিকায় যান প্রিয়া সাহা। এসময় যুদ্ধাপরাধী আকবর কবিরের কন্যা তথাকথিত মানবাধিকার কর্মী খুশী কবির বিমানবন্দরে উপস্থিত প্রিয়ার সাহার এই দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের সঙ্গী হওয়ায় তার স্বামী মলয় সাহাকে অভিযুক্ত করে শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন অনেকে। সোশ্যাল মিডিয়ায় তার ব্যাপারে সর্বস্থরের জনগণ প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন। কঠোর প্রতিবাদ জানিয়ে তাকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন নেটিজেনরা।

/এসএস

মন্তব্য করুন