উপকূলীয় অঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মুখে হাসি ফোটাতে “ঈদের খুশি বিতরণ”

প্রকাশিত: ৫:০৮ পূর্বাহ্ণ, জুন ৪, ২০১৯

দ্বীপজেলা ভোলার সর্বদক্ষিণের উপজেলা চরফ্যাশনের শষিভূষন থানার উপকূলীয় অঞ্চলের নদী ভাঙ্গনকবলিত এলাকার বিভিন্ন বয়সী বাচ্চাদের মধ্যে পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে নতুন পোশাক বিতরণ করা হয়েছে।


সোমবার (৩ জুন) শশিভূষণ থানার মেঘণা পাড়ের খাজুরগাছিয়া গ্রামের সুবিধাবঞ্চিত শিশু বাচ্চাদের মধ্যে এ পোশাক বিতরণ করা হয়।

“আমরা ক’জন বন্ধুরা” নামের একটি সুসংগঠিত প্লাটফর্ম থেকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদরাসা ছাত্রদের সম্মিলিত উদ্যোগে প্রতিবছর ধারাবাহিকভাবে এ পোশাক বিতরণের কাজ করা হয় বলে জানিয়েছেন পোশাক বিতরনের সাথে সংশ্লিষ্ট চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হাছিব আর রহমান।

নতুন পোশাক পেয়ে হাসিমুখে বাচ্চারা। ছবি : মাহবুব

তিনি বলেন, বিগত দু বছর চরফ্যাশন উপজেলার বেতুয়া নদীর পাড়ে পোশাক বিতরণের কার্যক্রম পরিচালনা করা হলেও এ বছর আরও দুরে ও বেশি অসহায়দের মাঝে পোশাক বিতরণ করা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, ২০১৪-১৫ ব্যাচ সার্কেলের বন্ধুমহলের বেশ কয়েকজনের একত্রিত উদ্যোগে এ আয়োজনটি সম্পন্ন হয়ে থাকে। ঈদের ছুটিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নিজ এলাকায় এলে সবাই মিলে সম্মিলিতভাবে এ আয়োজন করা হয়। প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও প্রায় আড়াইশ বাচ্চাদের মধ্যে ঈদের নতুন পোশাক বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়াও প্রায় ৬০ জনের মতো গরীব অসহায়দের লুঙ্গী, শাড়ি ইত্যাদি দেওয়া হয়েছে।

পোশাক নেওয়ার আগে অপেক্ষমান শিশুরা

এ বছরের পোশাক বিতরণ কার্যক্রমের সাথে বিভিন্নভাবে যারা শুরু থেকেই জড়িত ছিলেন তারা হলেন, চরফ্যাশন কলেজের সালমান রহমান সান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আল আমিন ফাহিম, ডেফোডিল ইউনিভার্সিটির হামিম, আকিব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহান, ঢাকা তেজগাঁও কলেজের নাদিম, আহসান উল্লাহ বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জামশেদ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মোমিন, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়েরর জিহান, ভোলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ফারাবি রহমান, বরিশাল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের নয়ন, ভোলা কলেজের অন্তু হাসান, বাংলাদেশ ম্যারিন অ্যাকাডেমির ইমন, চরফ্যাশন আলিয়া মাদরাসার রাহাতসহ আরও অনেকে।

টোকেন দেখে গোছালো ভাবে দেওয়া হচ্ছে পোশাক। ছবি : মাহবুব

দীর্ঘ পরিশ্রম ও গোছালো ভাবে এই পোশাক বিতরণ কার্যক্রমের সাথে সংশ্লিষ্ট চরফ্যাশন কলেজের অনার্সের ছাত্র এফ সালমান রহমান সান বলেন, “আমরা প্রতি বছরের ন্যায় ও বছরও বাচ্চাদের মধ্যে ঈদের পোশাক বিতরণ করেছি” দুইদিন আগে গিয়ে অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিত বাচ্চাদের খুজে খুজে তাদের নামের তালিকা ও পোশাকের মাপ নিয়ে এসেছি আমরা। তারপর সে মাপমতো প্রত্যেকের জন্য আলাদা করে পোশাক কেনা হয়েছে। এরপর বন্ধুরা সকলে মিলে গিয়ে আমরা আজ যার যার হাতে ঈদের নতুন পোশাক পৌছে দিয়ে এসেছি। নতুন পোশাক পেয়ে বাচ্চাদের আনন্দ ও হাসি আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে এমন কাজ করার ক্ষেত্রে।

পোশাক দেওয়ার পর বাচ্চাদের সাথে আয়োজকদের মধ্যে অন্যতম একজন সালমান রহমান সান। ছবি : মাহবুব

অর্থনৈতিক সাপোর্ট কোথা থেকে আসে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ টাকাই আমরা নিজেদের মধ্য থেকে পরিচিতজনদের কাছ থেকে সংগ্রহ করি এবং পূর্ণাঙ্গ হিসাব রাখি। এ ছাড়াও সোশ্যাল মিডিয়া থেকেও অল্প কিছু টাকা প্রতি বছর আমরা সংগ্রহ করে থাকি। সব মিলিয়ে আমরা টাকার পরিমান মতো পোশাক বিতরণ করি। সম্পূর্ণ টাকাই আমরা পোশাক বিতরণের পেছনেই খরচ করি।

সুন্দর এ আযোজনের আর্কাইভ সংগ্রহ করে থাকেন মাহবুব। (বাচ্চাদের সাথে সবার পেছনে)

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চরফ্যাসন মনপুরাসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকার নদী ভাঙ্গনকবলিত অঞ্চলগুলোতে সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা ঈদের আনন্দে তেমন কোনো অংশগ্রহণ থাকে না। “নুন আন্তে পান্তা ফুরোয়” অবস্থা তাদের পরিবারের। ঈদের সময় তাই এসব অঞ্চলের শিশু বাচ্চাদের মুখে হাসি ফোটাতে এমন আয়োজনের বিকল্প নেই বলেই মতামত স্থানীয় অনেকের।

খেজুরগাছিয়ার আ. হালিম নামের এক ব্যাক্তির সাথে এ বিষয়ে আলোচনা করলে তিনি বলেন, স্কুল কলেজের ছেলেদের এই উদ্যোগ আমরা আনন্দের সাথে গ্রহন করছি। তাদের কারণে অনেক শিশুই নতুন পোশাকে ঈদ করতে পারবে। প্রতি বছরই এমন আয়োজন তারা বজায় রাখবে বলে আমরা আশাবাদী।

এছাড়াও স্থানীয় অনেক বিশিষ্টজনেরাও তাদের এ আয়োজনের ভূয়সী প্রশংসা করে থাকেন এবং প্রতিবছর এর ধারাবাহিকতা বজায় রাখার প্রতি নজর দেওয়ার আহবান জানান।

আয়োজকদের সাথে আলোচনা করলে তারা জানান, এ আয়োজন আমরা প্রতি বছরই করতে চাই এবং বাচ্চাদের পোশাক দেওয়ার এ কার্যক্রমের মাধ্যমে কিছু বাচ্চারা অন্তত যাতে নতুন পোশাকের ঘ্রাণ নিতে পারে সে ধারা অব্যাহত রাখতে চাই। এজন্য সবার সহযোগীতা ও দোয়া কামনা করি আমরা।

এইচআরআর/পাবলিক ভয়েস


কিছু ছবি: 

ছবি তুলেছেন : মাহবুব

মন্তব্য করুন