
দ্বীপজেলা ভোলার সদর থানা উপশহরে সৌন্দর্য বর্ধনের দাবিত রাস্তার মোড়ে মোড়ে ও ভোলা বাংলা স্কুল মাঠের কোনায় স্থাপন করা মূর্তি বা ভাস্কর্য স্থাপনের বিপক্ষে প্রতিবাদ শুরু করেছে “জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ”। ধাপে ধাপে বিভিন্ন জনসচেতনতামূলক কর্মসূচির পালন করছে তারা।
আগামীকাল ১৩ মে সকাল ১০ টা ৩০ মিনিটে ভোলা কালীনাথ রায়ের বাজার হাটখোলা মসজিদ চত্বরে একত্রিত হয়ে ভোলা উপশহরের বিভিন্ন স্থানে মূর্তি বা ভাস্কর্য স্থাপনের প্রতিবাদে জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপার বরাবর স্মারকলিপি প্রদান ও জনসচেতনায় লিফলেট বিতরণসহ বিক্ষোভ-মিছিল কর্মসূচি দিয়েছে সংগঠনটি।
সংগঠনটির দাবীসমূহ :
– বাপ্তা বাসষ্টান্ড মোড়ে ও কালীবাড়ি মোড়ে স্থাপিত মূর্তি আগামী ৭২ ঘন্টার মধ্যে অপসারন করতে হবে। প্রয়োজনে ওইসব স্থানে বাংলাদেশের জাতীয় ফল বা ফুল কিংবা ইসলামিক ভাস্কর্য স্থাপন করা যেতে পারে।
– ভোলার আর কোথাও নতুন করে (ভাস্কর্য বা প্রতিকৃতির নামে কোন প্রাণী, জীব-জন্তু বা মানুষের মূর্তি স্থাপন করা যাবে না।
সংগঠনটির শাখা সেক্রেটারি মাও. মিজানুর রহমান এ বিষয়ে পাবলিক ভয়েসকে বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণ ও গোছালো আন্দোলনের মাধ্যমে এই অনৈসলামিক কাজটিকে প্রতিরোধ করতে চাই” সে ধারাবাহিকতায় আমরা আমাদের কর্মসূচি দিয়েছি। আমরা আশা করবো জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটিয়ে ইসলামবিরোধী এ কাজটি বন্ধ করা হবে। প্রয়োজনে এসব স্থানে জাতীয় ফুলসহ দেশীয় সংস্কৃতি প্রকাশ করে এমন কিছু স্থাপন করা যেতে পারে। এসব জন্তু জানোয়ারের মূর্তি দেশের সংস্কৃতিকে কোনোভাবোই উপস্থাপন করে না।
জানা যায়, ভোলা উপশহরে রাস্তার মোড়ে মোড়ে এবং ভোলা সরকারী স্কুল মাঠের কোনায় বিভিন্ন জন্তু ও প্রানীসহ মানুষের ভাস্কর্য স্থাপন করা হচ্ছে ভোলা পৌরসভার পক্ষ থেকে। এই মূর্তি বা ভাস্কর্য স্থাপনের বিপক্ষে স্থানীয় জনগণ ধিরে ধিরে প্রতিবাদী হয়ে উঠছেন। এ উপলক্ষে জনগণের মধ্যে একটি লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। লিফলেটে এই মূর্তি বা ভাস্কর্য স্থাপন কেন ইসলাম সমর্থন করে না তার স্পষ্ট কারণ উল্ল্যেখ করা হয়েছে।
প্রচারিত লিফলেট
লিফলেটের লেখাগুলো এখানে হুবহু দেওয়া হলো :
প্রিয় ভোলাবাসী,
আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ, সম্প্রতি আপনারা লক্ষ করেছেন যে, ভোলা পৌরসভার বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে মোড়ে ভাস্কর্যের নামে মূর্তি স্থাপন করে বিচ্ছিন্ন এই দ্বীপজেলায় আল্লাহর আজাব-গজব আসার রাস্তা উম্মোচন করতে যাচ্ছে। আমাদের এই দ্বীপজেলার তিন দিকে নদী ও এক দিকে সাগর বেষ্টিত উপকুলীয় অঞ্চল হিসাবে পরিচিত। সব সময় আমরা আল্লাহর রহমতের আশায় বসে থাকি। আর এই মূর্তি ও ভাস্কর্য স্থাপনের মাধ্যমে আমরা ভোলাবাসী আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত ও গুনাহে নিমজ্জিত হবো। তাই আসুন, ভাস্কর্যের নামে এই মূর্তি স্থাপনকে “না” বলুন।
ইসলামের দৃষ্টিতে মূর্তি ও ভাস্কর্য।
কোনো প্রাণীর-মূর্তি নির্মাণ করা ইসলামী শরীয়তে কঠিন কবীরা গুনাহ ও হারাম। মূর্তি সংগ্রহ, মূর্তি সংরক্ষণ এবং মূর্তি বেচাকেনা ইত্যাদি সকল বিষয় কঠিনভাবে নিষিদ্ধ। মূর্তিপূজার কথা তো বলাই বাহুল্য, মূর্তি নির্মাণেরও কিছু কিছু পর্যায় এমন রয়েছে যা কুফরী। কেউ কেউ মূর্তি ও ভাস্কর্যের মধ্যে বিধানগত পার্থক্য দেখাতে চান। এটা চরম ভুল। ইসলামের দৃষ্টিতে মূর্তি ও ভাস্কর্য দুটোই পরিত্যাজ্য। কুরআন মজীদ ও হাদীস শরীফে এ প্রসঙ্গে যে শব্দগুলো ব্যবহৃত হয়েছে সরগুলো মূর্তি ও ভাস্কর্য দুটোকেই নির্দেশ করে। এ প্রসঙ্গে কুরআন মজীদের স্পষ্ট নির্দেশ-“তোমরা পরিহার কর অপবিত্র বস্তু অর্থাৎ মূর্তিসমূহ এবং পরিহার কর মিথ্যাকথন।’ -সূরা হজ্জ : ৩০ কুরআন মজীদে মূর্তি ও ভাস্কর্যকে পথভ্রষ্টতার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এক আয়াতে এসেছে-‘ইয়া রব, এরা (মূর্তি ও ভাস্কর্য) অসংখ্য মানুষকে পথভ্রষ্ট করেছে!’ -সূরা ইবরাহীম : ৩৬ হাদীস শরীফেও নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মূর্তি ও ভাস্কর্য সম্পর্কে পরিষ্কার বিধান দান করেছেন।
হযরত আমর ইবনে আবাসা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন আল্লাহ তা’আলা আমাকে প্রেরণ করেছেন আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার, মূর্তিসমূহ ভেঙ্গে ফেলার, এবং এক আল্লাহর ইবাদত করার ও তাঁর সঙ্গে অন্য কোনো কিছুকে শরীক না করার বিধান দিয়ে। -সহীহ মুসলিম হাদিস. ৮৩২
আবু হুরায়রা রা. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, আল্লাহ তাআলা বলেন ওই লোকের চেয়ে বড় জালেম আর কে যে আমার সৃষ্টির মতো সৃষ্টি করার ইচ্ছা করে। তাদের যদি সামর্থ্য থাকে তবে তারা সৃজন করুক একটি কণা এবং একটি শষ্য কিংবা একটি যব! -সহীহ বুখারী হা. ৫৯৫৩ [ সহীহ বুখারীর বিখ্যাত ভাষ্যকার হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী রাহ. লেখেন-এই ভাস্কর ও চিত্রকর সর্বাবস্থাতেই হারাম কাজের মধ্যে লিপ্ত । আর যে এমন কিছু নির্মাণ করে যার পূজা করা হয় তার পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ। আর যে স্রষ্টার সামঞ্জস্য গ্রহণের মানসিকতা পোষণ করে সে কাফের।’ -ফতহুল বারী ১০/৩৯৭।
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. ও আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-এই প্রতিকৃতি নির্মাতাদের (ভাস্কর, চিত্রকরদের) কিয়ামত-দিবসে আযাবে নিক্ষেপ করা হবে এবং তাদেরকে সম্বােধন করে বলা হবে, যা তোমরা সৃষ্টি করেছিলে তাতে প্রাণসঞ্চার কর! -সহীহ বুখারী হা, ৭৫৫৭, ৭৫৫৮; এই হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, ভাস্কর্য নির্মাণ অত্যন্ত কঠিন কবীরা গুনাহ। আর বোনো কোনো ক্ষেত্রে তা কুফরীরও পর্যায়ে পৌছে যায়।


