

ইসমাঈল আযহার
পাবলিক ভয়েস
দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে আহত হেফাজতে ইসলামের সহকারী মহাসচিব ও লালবাগ জামিয়ার সিনিয়র মুহাদ্দিস মুফতি জসিমউদ্দিনকে ঢাকা মেডিকেল থেকে বাসায় নেওয়া হয়েছে।
আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দিলে তাকে বাসায় নেওয়া হয়। এ খবর নিশ্চিত করেছেন মুফতি জসিমের খাদেম ইরফান বিন রফিক।
এর আগে, মঙ্গলবার (৯ ফেব্রুয়ারি) আসরের নামাজের পর কর্মস্থল লালবাগ মাদরাসা থেকে টিকশায় করে লালমাটিয়ার বাসায় যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে মারাত্মক আহত হন হেফাজতে ইসলামের এই নেতা।
দুর্বৃত্তরা পেছন দিক থেকে তাকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা রক্তাক্ত অবস্থায় মুফতি জসিমকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেলে প্রেরণ করে।
এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ দেশের কওমি অঙ্গণ
রাজধানী ঢাকার লালবাগ মাদরাসার সিনিয়র মুহাদ্দিস মাওলানা জসিম উদ্দিনের ওপর অতর্কিত হামলার তীব্র নিন্দা এবং অপরাধীকে আইনের আওতায় আনার আহবান জানিয়েছেন বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ-এর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও কওমি মাদরাসার সর্বোচ্চ শিক্ষা অথরিটি আল-হাইয়াতুল উলিয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ-এর চেয়ারম্যান ও যাত্রাবাড়ী মাদরাসার মুহতামিম মুহিউস সুন্নাহ আল্লামা মাহমূদুল হাসান।
বৃহস্পতিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে আল্লামা মাহমূদুল হাসান বলেন, দেশের জনমানুষের পাশাপাশি সকল আলেমদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের মৌলিক দায়িত্ব। একজন মাদরাসার মুহাদ্দিস এভাবে হামলার শিকার হবেন, তা কখনো মেনে নেওয়া যায় না।
হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি তুলে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমীর মুফতী ফয়জুল করীম বলেছেন, আমি সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বলবো, অবিলম্বে মুহতারামের উপর হামলাকারীকে খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করুন।
তিনি বলেন, সরকার আন্তরিকতার সাথে পদক্ষেপ গ্রহণ করলে অল্প সময়ের মধ্যেই প্রকৃত অপরাধীকে সনাক্তপূর্বক বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে পারবে।
হামলায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব আল্লামা মামুনুল হক। মঙ্গলবার রাত সাড়ে আটটার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে তিনি লিছেখেন, হেফাজত নেতা মুফতী জসিমের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা, হামলাকারী সন্ত্রাসী ও গডফাদারদের মুখোশ উম্মোচনের দাবি জানাই!
বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন প্রধান, আমীরে শরীয়ত মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জীও সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার পাবলিক ভয়েসকে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, প্রকাশ্যে-দিবালোকে একজন আলেমের উপর এভাবে সন্ত্রাসী হামলা প্রমাণ করে দেশের জনগণের জান-মালের কোনো নিরাপত্তা নেই। সন্ত্রাসী হামলার কয়েকদিন অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পরও সরকার সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করতে ব্যর্থ হয়েছে। যা আইন-শৃংখলার চরম দৈন্যতার বহিঃপ্রকাশ।
আল্লামা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সরকারের গদি রক্ষায় ব্যস্ত, জনগণের জান-মাল রক্ষায় তাদের কোন সক্রিয় ভূমিকা নেই। একটি ভিডিও ফুটেজে ঘাতকের ছবি স্পট ধরা পরার পরও এখনো কেন তাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না তা বোধগম্য নয়। অবিলম্বে ঘাতক ও তার পৃষ্ঠপোষকদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। অন্যথায় সারাদেশে প্রতিবাদ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়বে।
মুফতি জসিমউদ্দীনকে হামলার একটি সিসিটিভি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে পেছন থেকে দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে গিয়ে এক যুবক মুফতি জসিমকে ছুরিঘাত করেই দৌঁড়ে পালিয়ে যাচ্ছেন। এসময় তাকে ধরতে গেলেও ব্যর্থ হন তার পিছু নেওয়া লোকেরা।
এই অপরাধীর একটি ছবিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। অপরাধীর ছবি প্রকাশ্যে আসার পরও কেন তাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না সে বিষয়ে উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করছেন অনেকে। ফেসবুকেও এ নিয়ে অনেককে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। এদিকে কওমি ও ইসলামি রাজনৈতিক ব্যক্তিদের বিবৃতির পরও অপরাধীকে গ্রেফতারের বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া এখনও পর্যন্ত দেখা যায়নি।