হেফাজতে ইসলামকে মোকাবিলা করতে মাঠে নামছে নতুন মোর্চা

প্রকাশিত: ৮:৪১ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২১

হেফাজতে ইসলাম নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে জাতীয় দৈনিক মানবকণ্ঠ। সেখানে বলা হয়েছে, মোর্চার সঙ্গে জড়িত আছেন এমন কয়েকটি ইসলামী সংগঠনের নেতারা জানিয়েছেন,  হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের ‘অপতৎপরতা’ মোকাবিলায় শিগগিরই একটি নতুন মোর্চা মাঠে নামছে। মদিনা সনদের আলোকে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠাসহ বেশ কয়েকটি লক্ষ্য সামনে নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে সংগঠনটি।

নেতারা জানিয়েছেন, দেশের ভেতরে ইসলাম ধর্মের ধারক-বাহক হয়ে যারা অপব্যাখ্যা দেবেন তাদের প্রতিরোধ করাই হবে তাদের অন্যতম লক্ষ্য। দেশে ঘুষ-দুর্নীতি-অনিয়ম অপশাসনের বিরুদ্ধেও স্বোচ্ছার থাকার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। তবে মোর্চাটি কি নামে কার্যক্রম শুরু করবে তা এখনো চ‚ড়ান্ত হয়নি।

তারা বলছেন, বর্তমান সময়ে দেশের রাজনীতিতে অনেক রাজনীতিক দল, জোট, নানা কারণে পিছিয়ে পড়েছে। লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও আদর্শ ঠিক না থাকায় দলগুলো এমন পরিস্থিতিতে পড়েছে বলে মন্তব্য তাদের। সে কারণে নির্দিষ্ট লক্ষ্যকে সামনে রেখে নতুন মোর্চা নিয়ে মাঠে নামার কার্যক্রম শুরু করেছে তারা।

এদিকে এ মোর্চার মূল উদ্যোক্তা হচ্ছে ইসলামী গণতান্ত্রিক পার্টির চেয়ারম্যান ও তরিকত ফেডারেশনের সাবেক মহাসচিব লায়ন এমএ আউয়াল। তিনিই প্রথম যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ এনে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের নিবন্ধন বাতিলের জন্য হাইকোর্টে মামলা করেন। পরবর্তীতে মামলার সূত্র ধরেই দলটির শীর্ষ রাজাকার নেতাদের বিচার শেষে ফাঁসির কার্যকর করেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার। একই সঙ্গে জামায়াতের নিবন্ধনও বাতিল করে আদালত। যদি মামলাটি এখনো আপিলাধীন রয়েছে।

নতুন মোর্চার ব্যাপারে এমএ আউয়াল একান্ত আলাপে বলেন, মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণে সমাজে ঘুষ-দুর্নীতি অনিয়ম বেড়েইে চলছে। পরিত্রাণের জন্য ধর্মের সঠিক চর্চা প্রচারের মধ্য দিয়ে তা রোধ করা সম্ভব। সে জন্য আমরা থানা, জেলা, বিভাগীয় পর্যায়ে প্রচার-প্রচারণায় কার্যক্রম শুরু করব। এ লক্ষ্যে মুক্তি যুদ্ধের চেতনা, ধর্মীয় মূল্যবোধে মদিনা সনদের আলোকে একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সমমনা ইসলামী দলগুলোকে নিয়ে একটি বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার জন্য কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে অনেক ধর্মীয় নেতা যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন। সরকারের উন্নয়ন ধারাটাকে জনগণের কাছে ফোকাস করার ইচ্ছা রয়েছে এ নতুন মোর্চার। কবে মোর্চার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হবে এমন প্রশ্নে এমএ আউয়াল খুব কম সময়ের মধ্যে আমাদের যাত্রা শুরু হবে। মূর্তি ও ভাস্কর্যের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি করা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশ বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামী গণতান্ত্রিক পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য এমএ আউয়াল।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মূর্তি হচ্ছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উপাসনার অংশ, ভাস্কর্য সভ্যতার ধারা বিবরণী। মুসলিম সভ্যতাসহ পৃথিবীর বিভিন্ন সভ্যতার একটি বড় নিদর্শন মানুষের সামনে উন্মোচিত হয়েছে ভাস্কর্য-শিল্পের মধ্য দিয়ে। যারা আধুনিক পৃথিবীর শিক্ষা-শিল্পকলা সম্পর্কে অজ্ঞান, তাদের ব্যবহার করেই এই ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।

ভাস্কর্য নিয়ে কয়েক আলেমের হুমকি-ধমকির প্রতিবাদ জানিয়ে এমএ আউয়াল বলেন, আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে অতীতে লক্ষ্য করছি, কিছু আলেম দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে ভিন্ন কোনও পক্ষের এজেন্ডা বাস্তবায়নে মাঠে নেমেছে। তারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যকে মূর্তির সঙ্গে তুলনা করার ধৃষ্টতা দেখাচ্ছে।

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের বিরোধিতা করা দেশের শান্তি বিনষ্টের ষড়যন্ত্রের অংশ উল্লেখ করে এমএ আউয়াল বলেন, বাংলাদেশের সৃষ্টি যার হাত ধরে, দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানের জন্য যার প্রাণ নিবেদিত, তার ভাস্কর্যকে মূর্তির সঙ্গে তুলনা করা মানে বঙ্গবন্ধু ও মহান মুক্তিযুদ্ধকে অবমাননা করা।

এমএ আউয়াল বলেন, বিগত দিনে যেসব আলেম পরিচয়ধারী বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার হুমকি দিয়েছিল, এদের সঙ্গে উগ্রপন্থি জঙ্গিদের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, তালেবানদের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক আছে কি না, তা খতিয়ে দেখতেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতি তিনি আহ্বান জানান।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লক্ষ্মীপুর-১ আসনের প্রার্থিতাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট জটিলতায় বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব পদ থেকে এমএ আউয়ালকে সরিয়ে দেন দলটির চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারি। ওই সময় আউয়ালের অভিযোগ ছিল, ওই আসনে তরিকত চেয়ারম্যান আর্থিক কারণে তাকে মনোনয়নবঞ্চিত করেন।

পরে ওই আসনে আওয়ামী লীগের একজনকে মনোনয়ন দেয়া হয় ১৪ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে। তারপর থেকে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে সম্প্রতি নতুন মোর্চার বিষয়ে গ্রিন সিগন্যাল পেয়েছেন এমএ আউয়াল। পেশায় ব্যবসায়ী এই নেতা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সক্রিয় থেকে মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন।

মন্তব্য করুন