গল্প; হেলুসিনেশন

প্রকাশিত: ২:২৭ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৬, ২০১৯

রায়হান খান, গল্পকার।

২.১৫ মিনিট, গভীর রাত। চারদিক নিস্তব্দ, হঠাৎ আওয়াজ হলো, ঠক! ঠক!

জানালার পাশে শুয়ে আছি, জানালাটা লাগাবো এমন সময় একটা ছায়া সামনে দিয়ে চলে গেল, ভয়ে আঁতকে উঠলাম। পরক্ষনেই অদ্ভুত ঘটনা ঘটতে থাকল, ফ্যানটা নিজে থেকেই ঘুরছে, টেবিলের সবগুলো বই কেঁপে কেঁপে মাটিতে পড়ে গেল, চেয়ারটা নিজে থেকেই আমার সামনে চলে এলো। ঘুম থেকে লাফ দিয়ে উঠে গেলাম, ভীতিকর কান্ডগুলো বন্ধ হয়ে গেল। মনে ভয় নিয়ে বাহিরের দিকে পা দিচ্ছি, কিন্তু কিছুই নেই! ফিরে আসবো এমন সময় এক বিকট শব্দ, শরীরটা এক শিহরণ ঢেউ খেলে গেল।

সবাই ঘুমে মগ্ন, চারদিক অন্ধকার, কিন্তু আমার মনে কৌতুহল আরও বৃদ্ধি পেল। ভয়ে ভয়ে সামনে এগিয়ে যেতে থাকলাম, হঠাৎ দেখতে পেলাম সাদা কাপড়ের একজন মানুষ! এটি এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় না হেটেই চলে যাচ্ছে? আমার ভাবনা ভেঙে গেল, এটা নিশ্চয় কোন মানুষ হতে পারে না। এটা কোন আত্মা হবে। এক দৌড়ে রুমে চলে এলাম।

সারারাত ঘুম হয়নি, অদ্ভুত আত্মাটি চোখের সামনে ভাসতে লাগলো।

সকল বেলা উঠলাম, মা বলল কিরে কি হয়েছে তোর? বললাম কিছুই হয়নি। সারাটা দিন একই ঘটনা মাথায় চেপে বসলো, রাতে ঘুমাতে গেলাম।

পরদিন রাত ২.১৫ মিনিট। হঠাৎ অদ্ভুত সেই ঘটনা। একটা আওয়াজ শুনতে পেলাম। ঘুম ভেঙে গেল। যেনো কোন রেললাইন এ ট্রেন চলার মত শব্দ। হঠাৎ শুনতে পেলাম কে জেনো আমার নাম ধরে ডাকছে; রায়হান! রায়হান!

অচেনা এক অদ্ভুত ডাকের শব্দ, কখনো এমন ডাক শুনিনি। ডাক বন্ধ হয়ে গেল, কে ডাকছে তা জানার জন্য ভয়ে ভয়ে দরজা খুললাম। কিন্তু কেউ ছিল না, দরজার সাথে এক রক্তমাখা খাম পড়ে আছে রক্ত দিয়ে ঘেরা, জেনো কোন মানুষের তাজা রক্ত। ভয়ে শরীর আঁতকে উঠলো, সামনে এগিয়ে যেতে লাগলাম, এই ভেবে ভয় পাচ্ছি যদি সাদা কাপড়ের আত্মাটা আবার দেখতে পাই? সামনে এগিয়ে যেতেই এক ভয়ানক কান্ড দেখতে পেলাম,যা নিজের চোখকে বিশ্বাস করার মত নয়, সেই আত্মাটা, রক্তমাখা মানুষের দেহ হতে হাত চিবিয়ে খাচ্ছে, সারা মুখে লাল রক্ত লেগে আছে, হাতে পায়ে তাজা মানুষের রক্ত, কোন এক মানুষের লাল কলজে সে তৃপ্তি নিয়ে খাচ্ছে। হঠাৎ সে চোখ ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকাল, ভয়ে আমার শরীর দিয়ে ঘাম বের হচ্ছে, তাহলে কি আমার শরীরটা ও এভাবে চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে? আমার দিকে এগিয়ে আসছে, রক্তমাখা সেই মুখটি নিয়ে। আমি চিৎকার দিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেললাম।

সকালে আমার জ্ঞান ফিরল, চারদিকে সবাই বসে আছে মা বলল, বাবা কি হয়েছিল তোর? তুই বাহিরেই বা কেন গিয়েছিলি? আমি উত্তরটা এড়িয়ে গেলাম, একা থাকতে চাইলাম, সবাই চলে গেল। কালকের ঘটনায় আমি বাকরুদ্ধ, শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগলাম, কেনই বা আমার সাথে এই অদ্ভুত ঘটনাগুলো ঘটতে থাকে? কোন উত্তর মিলল না, সারাদিন আনমনা হয়ে শুয়ে রইলাম, সবকিছুতেই এই এক ঘটনা মনে আরও ভয় বাড়িয়ে দিল।

নিমিশেই মনে পড়ে গেল রবিনের নৃশংস খুন হওয়ার সেই দৃশ্য। তার সাথেও তো এমন ঘটনাগুলি প্রতিদিন ঘটে যেত, একদিন সে কবরস্থানের রাস্তা দিয়ে হাটছে, সময়টা সন্ধ্যা ছিল। হঠাৎ একটি উজ্জ্বল আলো তার সামনে চলে এল, কিসের আলো সে নিজেও বুজতে পারলো না। কিন্তু আলো থেকে কিছু একটা ধোঁয়ার কুণ্ডলী বের হয়ে তার মাথায় আঘাত করল। সে অজ্ঞান হয়ে রাস্তায় পড়েছিল, পরে সবাই জানতে পেরে তাকে হাসপাতাল নিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু, হাসপাতাল যা ঘটলো তা আরও নৃশংস, আমরা তার কাছ থেকে এইসব ঘটনা শুনার পর তাকে রেখে রুম থেকে বাহিরে গিয়েছিলাম, এমন সময় তার রুম থেকে এক বিকট শব্দের চিৎকার শুনতে পেলাম। সবাই তার রুমের দিকে ছুটে গেলাম, অদ্ভুতভাবে দরজাটি খুলছিল না, সবার মুখের ভয়ের করুণ চিহ্ন, একটু পর রুমের দরজাটি ভেঙে ফেলা হল। রুমে প্রবেশ করতেই এক অবিশ্বাযোগ্য ঘটনার শিকার হলাম আমরা। রবিনের লাশ মেঝেতে পড়ে আছে, হাত দুটি শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন, চোখগুলো উঠিয়ে ফেলা হয়েছে, মাথাটা বিচ্ছিরি রকমে থেতলে ফেলা হয়েছে। এমন ঘটনার শিকার হয়ে সবাই হতভম্ব হয়ে গেল, কারও মুখে কোন শব্দ নেই, ভয় সবাইকে গ্রাস করে ফেলল। রবিনের আম্মু এই ঘটনা দেখে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল, সবাই উনাকে ডাক্তারের রুমে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করাচ্ছেন। এমন ঘটনা দেখার পর আমিও কিছু বলতে সাহস পাচ্ছিলাম না, এমন রহস্যজনক খুন কিভাবে সম্ভব? আমার বুঝতে বাকি রইলো না এটা কোন মানুষের কাজ নয়, এটা নিশ্চয় কোন অশরীরীর কাজ। সেই খুনের পর দুইদিন ধরে কেউ কিছু মুখে নেয়নি।

আজ সকালবেলা, পুলিশের ওসি জহুর সাহেব আমাদের বাসায় এলেন রবিনের খুনের বিষয়ে আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য। উনাকে দেখার পর আমি ভয় পেলাম। কী অদ্ভুত? অচেনা মানুষ দেখলেই আমার সেই ভীতিকর কান্ড মনে হয়ে যায়। উনি বললেন ‘ কি রায়হান, তোমাকে এত চিন্তিত দেখাচ্ছে কেন? আমি কিছু না স্যার বলে না সূচক উত্তর দিলাম, একবার ভাবলাম আমার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলি উনাকে বলব, কিন্তু এই ঘটনাগুলি বলার সাহসটুকুও পেলাম না। উনি আমাকে রবিনের খুনের ব্যাপারে বলে যাচ্ছেন, কিন্তু সে বিষয়ে আমার কোন খেয়াল নেই। পরক্ষণেই আমার মুখ দিয়ে আনমনে বের হল, এটা মানুষের কাজ নয়,এটা তো আত্মার কাজ। আমার উত্তর শুনে উনিও ভয় পেয়ে গেলেন, উনি জিজ্ঞাসা করলেন তুমি কি করে জানলে? আমি কোন উত্তর দিলাম না, শুধু বললাম আমি এ বিষয়ে কোন কথা বলতে চাই না।

সারাদিন এক অন্ধকার ঘরে আবদ্ধ হয়ে আছি, আমার কোন সাড়া, শব্দ নেই। আমার এই অবস্থা দেখে পরিবারের সবাই চিন্তিত হয়ে পড়ল। এদিকে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। আমার ভয় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়ে গেল। আমার সাথে যে ঘটনাগুলো ঘটে তা সবই রাতের ঘটনা, এর মানে? আজকেও আমার সাথে কিছু ঘটতে চলেছে? ভয়ে পুরো শরীর কাঁপতে লাগলো।
আমি ভয় না পাওয়ার জন্য আম্মু ছোট ভাইকে আমার সাথে ঘুমাতে পাঠালো, রাত গভীর হয়েছে, চারদিক অন্ধকার, সবাই ঘুমিয়ে আছে। রাত আনুমানিক ১:৫০ মিনিট। হঠাৎ ঘন্টার ধ্বনি, টং, টং। আমার ঘুম ভেঙে গেল, অদ্ভুত? ঘন্টার ধ্বনি এখানে কিভাবে এলো? ঘন্টার ধ্বনির বিকট আওয়াজ ক্রমশ বৃদ্ধি পেল। ছোট ভাই ঘুমাচ্ছে আম্মু-আব্বু কেউই জেগে উঠলো না এই শব্দ শুনে, এর মানে? এই শব্দটা শুধুমাত্র আমিই শুনতে পাচ্ছি, আর কেউই শুনতে পাচ্ছে না? ভয়ে বুক ধড়ফড় করে উঠল, ঘন্টার শব্দ থেমে গেছে, দরজা খুলে বাহিরে বের হলাম। কিন্তু আজ ত কিছুই দেখতে পেলাম না? হঠাৎ, আমার কাঁধে কে হাত রাখলো, ভয়ে ভয়ে ঘাড় ঘুরাচ্ছি, পিছনের দিকে তাকাতেই, একি ভীতিকর কান্ড? খুন হওয়া রবিন। রবিন এখানে? এ কিভাবে সম্ভব, ওর হাত সরিয়ে দ্রুত একটু সামনে চলে এলাম। রবিনের কি রক্তমাখা চেহারা,হাত দুইটা রক্ত জমাট দিয়ে জোড়া লাগানো, সমস্ত শরীরে লেগে আছে তাজা রক্ত। প্রথম ওকে দেখে আমার এত ভয় করছে, কিন্তু আমরা ত অনেক ভাল বন্ধু ছিলাম। ভয়ে কুকড়ে গেলেও সাহস নিয়ে বললাম,
– রবিন তুই?
-হ্যাঁ আমি, আজ তোদের জন্যই আমার জীবনটা দিতে হলো দোষ কি একা আমার ছিল? আমার সাথে তো তোরাও ছিলি!
– তোর আত্মা এখনও শান্তি পায়নি? তুই কিসের কথা বলছিস?
– কী? কিছুই কি তোর মনে নেই? মনে পড়েনা সেই রাতের গল্পটা।
– তুই আমাকে এতদিন ধরে কেন ভয় দেখাচ্ছিস? আমি তোর কি ক্ষতি করেছি? কেন আমাকে মারার চেষ্টা করছিস?
– আমি তোকে ভয় দেখাইনি, বরং তোদের জন্য আমার জীবনটা দিতে হলো।
– তাহলে কে? আমাকে ভয় কে দেখাচ্ছে!
– তুই পিছনে তাকিয়ে দেখ।
ভয়ে ভয়ে ঘাড় ঘোরাচ্ছি, পিছনে তাকানোর পরই যা দেখলাম! আমি হতভম্ব! আলী ভাই? তার মানে, রবিনকে সেই আলি ভাই ই খুন করলো, আর সে আমাকেও মারার চেষ্টা করছে? আলি ভাইয়ের সমস্ত শরীর কালো লম্বা পোষাকে ঢাকা, এটা আলি ভাইয়ের আত্মা। হঠাৎ রবিন বলল, তুই ও নিজের কর্মফল পাওয়ার জন্য তৈরী হ। রবিন আমার সামনে এগিয়ে এসে গলা চেপে ধরলো, শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিল আমার। মৃত্যু দেখতে পাচ্ছিলাম চোখের সামনে। হঠাৎ ফজরের আজান দিলো, রবিনের আত্মা ধোঁয়াশার মত উধাও হয়ে গেল। গোঙাতে গোঙাতে পিছনে তাকিয়ে দেখি আলি ভাইয়ের আত্মা নেই। আমি মাটিতে পড়ে গেলাম। নিজের কর্মের কথা ভেবে নিজের প্রতি ঘৃনা হচ্ছে। ক্লান্ত শরীরে কোন রকম রুমে চলে এলাম, খুব কান্না পাচ্ছে। এতটা অপরাধবোধ নিজেকে কখনোই মনে হয়নি। সবকিছু বুঝদে পারলাম, কেন আমার সাথে এমন অদ্ভুত ঘটনা ঘটছে আর কেনই বা রবিনের খুন হতে হলো।

২ মাস আগের কথা, ইন্টারমিডিয়েট পরিক্ষা দেয়ার পর আমরা বন্ধুরা সবাই অবসর। আমি রবিন, আর আদনান তিনজন মিলে আমাদের পাড়ায় তাশ খেলতাম। প্রতিদিন সন্ধ্যার পরেই সব বন্ধুরা মিলে আলি ভাইয়ের বাড়ির সামনে এই খেলার আড্ডা জমাতাম। আলি ভাই এবার মাস্টার্স শেষ করেছে, বয়স ২৮ হবে। খুব ধার্মিক তাই সবাই উনাকে সম্মান করে। কিন্তু আলি ভাই এশার নামাজে যাওয়ার সময় আমাদের তাসের খেলা দেখে রোজ চেঁচামেচি করেন। ভয় দেখায় আমাদের এ খেলার কথা চেয়ারম্যান সাহেবের কাছে নালিশ করবে। আমরা তার বাধা অতিক্রম করেও রোজ তাসের খেলায় মেতে থাকতাম।

একদিন আলী ভাই আমাদের তাসের খেলায় এসে কঠোর বাধা দেন, এবং আমাদের সবগুলো তাস ছিড়ে ফেলে দিয়ে এই বলেন যে, এটা আমাদের শেষ সতর্কবার্তা। সব বন্ধুরা তাসের আসর ছেড়ে চলে গেল, কিন্তু আমি রবিন আর আদনান থেকে গেলাম। আলি ভাইয়ের এমন আচরনে আমরা সবাই রাগান্বিত, রবিন বলল, এর একটা বিহিত করতেই হবে। রবিন একটা পরিকল্পণা করে ফেলল। আলি ভাইকে কিভাবে ফাঁসানো যায়, এবং সকলের কাছে অপমান করা যায়।

রাত ১ টা, রবিন আমি আর আদনান একত্রিত হলাম। রবিনের পরিকল্পনা, সে নিজের বাড়িতেই চুরি করবে, এবং সেই জিনিসপত্র আলী ভাইয়ের বাড়িতে রেখে দিবে। রবিনের কথায় আমরা সায় দিলাম, রবিন তার বাসার দরজা খুলে এসেছিল, তাই ঘরে ঢুকে সে তার বাবার মোবাইল, আলমারি থেকে ৩০ হাজার টাকা এবং একটা স্বর্নের আংটি নিয়ে এলো। রবিন আমাকে এইসব আলী ভাইয়ের ঘরে রাখতে বলল, আমি ভয় পেয়ে না বললাম। রবিন নিজেই দেয়াল টপকে আলি ভাইয়ের বাড়িতে এইসব জিনিসপত্র রেখে দিলো। সকাল হলো, রবিনের বাড়িতে চুরির কথা সবাই জেনে গেল। কিন্তু কাউকেই সন্দেহ করা যাচ্ছে না। হঠাৎ রবিন মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়ে বলল, কাল রাত আলী ভাই তার বাসায় গিয়েছিল, সে ঘুমিয়ে গিয়েছিল তারপর আলী ভাই তার বাসা থেকে চলে যায়। চেয়ারম্যান সাহেবে বললেন, আলির বাড়িতে তল্লাশি করো, দেখো কিছু পাওয়া যায় কি না। আলী ভাইয়ের বাড়িতে তল্লাশি করে চুরি হয়ে যাওয়া জিনিসপত্র পাওয়া গেল। আলি ভাইকে অনেক অপমান করা হল, এবং পাড়া থেকে বের করে দেয়া হলো। কিন্তু কিছুদিন পরেই আমরা শুনতে পেলাম,
আলি ভাই রহস্যজনকভাবে মৃত্যুবরন করেছেন।
আজ এইসব কথা মনে পড়ে নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে। রবিনকে কেন খুন করা হয়েছিল তাও বুজতে পারলাম, কেননা সবকিছুর মূলে সে ছিল। আমার মনেও ভয় জাগছে তার মানে আমাকে ও কি মেরে ফেলা হবে? অনেকক্ষন সজাগ থাকার পর রাতে ঘুমালাম। হঠাৎ আমার রুমে ঘন ধোঁয়া দেখতে পেয়ে ঘুম ভেঙে গেল।
আশ্চর্য? এই ঘন ধোয়াসা কোথা থেকে এলো? আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে, তাড়াতাড়ি রুম থেকে বের হয়ে গেলাম, বাহিরে যেতেই ধোঁয়াশার মধ্য হতে হঠাৎ একটা কালো পোষাকধারী বের হয়ে এলো! এ কি? আলী ভাই? আমি খুব মিনতি করে বললাম আমাকে যেন ক্ষমা করে দেয়। কিন্তু আলি ভাইয়ের আত্মা আমাকে আক্রমণ করলো, আমার হাতে ছুরির আঘাতে কেটে রক্ত টপটপ করে পড়ছে। আমি কান্না করে বললাম, আমাকে যেন ক্ষমা করে দেয়, আমার কোন দোষ ছিল না। আলী ভাই থেমে গেলেন! অস্ফুট স্বরে উনি বললেন,
কি দোষ ছিল আমার? একটা পাপাচার থেকে বিরত রাখাই কি ছিল আমার অপরাধ? কেন আমাকে এমন শাস্তি দিলে। আমি বেঁচে থাকার জন্য অনেক চেষ্টা করেছি, কিন্তু নিজের কাছে হেরে গিয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় হয়ে গেলাম। আমি মনে মনে কষ্ট পেলাম। কান্না করে হাটু গেড়ে বসে পড়লাম, একটু পরই দেখলাম আলি ভাইয়ের আত্মা আর নেই। সকালে আমার হাতে রক্ত দেখে মা আমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেল, ডাক্তার আমাকে বলল কিভাবে কেটেছে? আমি রাতের ঘটনা বলে দিলাম। কিন্তু ডাক্তার সাহেব হাসতে শুরু করে দিলেন, উনি বললেন তোমার বন্ধু রবিনের খুন হওয়াতে তুমিও এইসব কান্ড মনের মধ্য পুষে রেখে দিয়েছো! হয়তো কোন কাচের উপরে পড়ে কেটে গেছে। এটা নাকি আমার হেলুসিনেশন’। কিছুদিন পর শুনতে পেলাম আদনানের সাথেও এমন অদ্ভুত ঘটনা ঘটা শুরু হয়ে গেল। ভাবলাম আদনানও কী তবে হেলুসিনেশনে ভুগছে?

মন্তব্য করুন