বুকের বাঁ পাশে বেদনার ঝড়

প্রকাশিত: ১১:৫৩ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২১, ২০১৯
ছোট গল্প

ইসমাঈল আযহার: রাস্তার পাশে বেখাপ্পা বাড়ির সামনে ছিমছাম ছোট্ট বসার ঘর। বেখাপ্পা হলেও বাড়িটা সামনের দিক থেকে খারাপ লাগে না। আদি-বাড়ির মতো মনে হয় কিছুটা। বারান্দায় সাজানো বুনো ফুল গাছ। পরিচর্যার অভাবে হেলেদুলে পড়েছে। দেখতে বেশ লাগে। আদি বাড়ির পরিবেশের সঙ্গে এটাই জুৎসই। সামনের ছোট্ট ঘরটিতে বসে আছে নিহা। হাতে পুরোনো কবিতার বই। বইয়ের পাতাগুলো খুলে পড়বে পড়বে মনে হয়। অর্থাৎ বই নষ্ট হবার উপক্রম।

নিহা কবিতা লিখতে ভালবাসে। কবিতা করে কথা বলাও তার বেশ পছন্দের। নিহা যখন মায়ের কাজে সাহায্য করে মন থাকে বইয়ের দিকে। কখনও সে গুনগুন করে দু’লাইন কবিতা গানের সুরে গেয়ে ফেলে। গানের সুরে কবিতা সে গেয়ে ওঠে নিজের অজান্তে। নিহা বাঁ পাশের জানালাটা খুলে দিল। বৃষ্টিভেজা আদ্র বাতাস হু হু করে প্রবেশ করছে।

কোমল বাতাস যেন নিহাকে জড়িয়ে ধরে। একজন প্রেমিকের মতো জড়িয়ে ধরে। দীর্ঘদিনের সাক্ষাতে প্রেমিকাকে যেমন জড়িয়ে ধরে একজন পুরুষ ঠিক সেভাবে নিহাকে জড়িয়ে ধরে বাতাস। নিহা গুনগুন করে কবিতার দু’টি লাইন আওড়ায় ‘ বৃষ্টিরা গুন গুন গেয়ে যায় গান, তার শীতলতায় ছুঁয়ে যায় মন-প্রাণ।’

নিহার কি এখন মন প্রাণ ছুঁয়ে যাচ্ছে? হয়ত যাচ্ছে। নিহা বুনো ফুল গাছের দিকে তাকায়। দুটো ফুল ফুটেছে একটি শাখায়। ফুল দুটো দুলছে। ওরা যেন গলা জড়াজড়ি করে বেড়ে উঠছে। শীত শীত লাগছে নিহার। ওড়না দিয়ে জড়িয়ে নিল নিজেকে।

নতুন বধুর মতো মাথায় ঘোমটা টানা। নতুন বধু কথাটা যেন কেমন একটা আবেশ, স্বপ্ন, একটু একটু লজ্জা আর ভালবাসায় মোড়োনো। বধু শব্দটি যেন নিহাকে নতুন এক জগতের দিকে নিয়ে যায়।

নিহা ভাবছে, কল্পনা করছে, যদি সে লাল কাতান শাড়ি পরে, কেমন লাগবে তাকে? সবাইকে বধু সাজলে ভাল দেখায় না। একদিন তো সে বউ সাজবে, সেদিন সে লজ্জা পাবে? নাকি বেহায়ার মতো ঘোমটা ছাড়া বসে থাকবে?

নিহার একটু লজ্জা কম এটা সে প্রায় খেয়াল করে। ও পাড়ার নাপু ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলতে তার মোটেও লজ্জা লাগে না। নিহার তখন মনে হয়, তার মধ্যে লজ্জা শরমের বালাই নেই। তবে তার এই বেহায়াপনা শুধু নাপু ভাইয়ের সঙ্গে।

অন্য কারও সঙ্গে নিহা কথাই বলতে পারে না। লজ্জায় চোখমুখ লাল হয়ে যায়। সেদিন পড়া না পারায় হেডমাস্টারের সামান্য কথায় তার ঠোঁটমুখ লাল হল। হেডমাস্টার বেচারা তাতে বেশ মজাই পেল। বার বার বলতে লাগলো, মুখটা বেশ লাল করে ফেলেছ মুখটা। পুরুষদের এমন ভাড়ামো নিহার খুব খারাপ লাগে।

ক্লাস ছুটি হলে বাড়ি আসার পথে নিহা ভালছে, আচ্ছা ছেলেরা লজ্জা পেলেও কী তাদের মুখ লাল হয়? না ছেলেদের লজ্জা-শরম নেই। ছেলেদেরও যদি মেয়েদের লজ্জা থাকতো তাহলে ভালই হত। আমাদের আপা বেশ মজা নিতে পারত হেডমাস্টারের মতো। কোনো একটা সুন্দর মায়াবি চেহারার ছেলেকে লজ্জা দিয়ে দৃশ্যটা বেশ উপভোগ করতে পারত। সেই সাথে ক্লাসের সব মেয়েরাও মজা পেত। আড়ালে বলাবলি করে বেড়াতো ছেলেটির লজ্জামাখা চেহারার নিরুপায় অবস্থার কথা।

বৃষ্টি বাড়ছে, কমছে। শীত বেড়েই চলেছে। নিহা বড় ঘরটাই গিয়ে শুয়ে পড়ে। খুব আলসেমি লাগছে তার। মন চাচ্ছে লম্বা একটা ঘুম দিতে। কিন্তু সমস্যা হল, ঘুমে চোখটা লেগে আসলেই, নিহার মা ডাক দিয়ে কোনো একটা কাজের কথা বলবে।

মা আগে এমন ছিল না, এখন রোজ রোজ একই কাণ্ড করে। আজ নিহা বিছানা ছেড়ে উঠবে না, ঘুমের ভান করে শুয়ে থাকবে। তার মা যদি বলেন, ‘ও নিহা তোর বাপ আইছে, একটু এগো তো মা’ তাহলেও নিহা আজ উঠবে না।

লেখক, সাব এডিটর (সহসম্পাদক) পাবলিক ভয়েস

আইএ/

মন্তব্য করুন