ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে শতাব্দির সেরা বিশ্বাসঘাতকতা ‘ডিল অব দ্যা সেঞ্চুরি’: ইরান

প্রকাশিত: ৯:৩৮ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ২৯, ২০২০

আমেরিকার পক্ষ থেকে উত্থাপিত ‘ডিল অব দ্যা সেঞ্চুরি’ বা কথিত ‘শতাব্দির সেরা চুক্তি’কে ‘শতাব্দির সেরা বিশ্বাসঘাতকতা’ বলে উল্লেখ করেছে ইরান। তেহরান বলেছে, ফিলিস্তিনিদের ওপর আমেরিকার পক্ষ থেকে চাপিয়ে দেয়া এই লজ্জাজনক শান্তি পরিকল্পনা ব্যর্থ হতে বাধ্য।

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সাইয়্যেদ আব্বাস মুসাভি মঙ্গলবার রাতে এক প্রতিক্রিয়ায় এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট এ পরিকল্পনা উত্থাপন করে মূলত ফিলিস্তিনি জনগণের পাশাপাশি গোটা মুসলিম উম্মাহর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। মুসাভি এ পরিকল্পনা প্রতিহত করার জন্য মধ্যপ্রাচ্যসহ গোটা বিশ্বের স্বাধীনচেতা দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান।

ফিলিস্তিনি জনগণকে ইসরাইলসহ গোটা ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের প্রকৃত মালিক বলে উল্লেখ করেন সাইয়্যেদ মুসাভি। তিনি বলেন, ফিলিস্তিনি ভূমি জবরদখল করে অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। কাজেই সেখানকার সংকট সমাধানের একমাত্র উপায় ফিলিস্তিনের প্রকৃত অধিবাসী মুসলমান, ইহুদি ও খ্রিস্টানদের মধ্যে গণভোটের ব্যবস্থা করা যাতে তারা নিজের ভাগ্য নির্ধারণ করতে পারে। বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে ধরে আনা অবৈধ ইহুদি অভিবাসীরা এই গণভোটের বাইরে থাকবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

ইরানের দৃষ্টিতে ফিলিস্তিন ও জেরুজালেম আল-কুদসকে মুসলিম বিশ্বের এক নম্বর সমস্যা হিসেবে আখ্যায়িত করে ইরানের এই মুখপাত্র। তিনি বলেন, দুঃখজনকভাবে কিছু মুসলিম দেশ ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকার সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করার এই পরিকল্পনা মেনে নিয়েছে।

ফিলিস্তিনিদের প্রবল বিরোধিতা উপেক্ষা করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শেষ পর্যন্ত ইহুদিবাদী পরিকল্পনা ‘ডিল অব দ্যা সেঞ্চুরি’ উপস্থাপন করেছেন।তিনি মঙ্গলবার হোয়াইট হাউজে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে পাশে নিয়ে তার একপেশে এই আপোষ প্রক্রিয়া উপস্থাপন করেন।

মার্কিন-ইহুদিবাদী এই পরিকল্পনায় ঐতিহাসিক জেরুজালেম আল-কুদস শহরকে ইসরাইলি ভূখণ্ডের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।সেইসঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত ফিলিস্তিনি শরণার্থীদেরকে তাদের মাতৃভূমিতে ফিরে যাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এ ছাড়া, জর্দান নদীর পশ্চিম তীরের অবশিষ্ট অংশ ও গাজা উপত্যকা নিয়ে একটি দুর্বল ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের কথা বলা হয়েছে।

ফিলিস্তিনিদের পাশাপাশি বিশ্বের বহু মুসলিম দেশ ট্রাম্পের এই একতরফা বা বর্ণবাদী পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছে। ফিলিস্তিনের স্বশাসন কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, “আমি হাজার বার বলেছি, এ পরিকল্পনা মানি না, মানি না, মানি না।”

‘ডিল অব দ্যা সেঞ্চুরি’ উপস্থাপনের পর ডোনাল্ড ট্রাম্প মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে কথা বলার জন্য তাকে টেলিফোন করলেও তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি। তিনি বলেছেন, যে পরিকল্পনায় জেরুজালেম আল-কুদসকে রাজধানী করে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের কথা না থাকছে সে পরিকল্পনা তিনি মেনে নেবেন না।

পুরনো সংবাদ:

আফগানে নিহত সোলাইমানিকে হত্যার পরিকল্পনাকারী

আফগানিস্তানের মধ্যাঞ্চলীয় গজনি প্রদেশে সোমবার আমেরিকার যে গোয়েন্দা বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে তাতে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার অপারেশন বিভাগের প্রধান মাইকেল ডি আন্দ্রেয়া নিহত হয়েছেন। রাশিয়ার কয়েকটি গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে আমেরিকার ভেটারন্স টুডের ওয়েবসাইটে এ খবর দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থার মোট ছয়জন নিহত হয় যার মধ্যে আন্দ্রেয়া রয়েছেন।

মাইকেল আন্দ্রেয়া ইরাক, ইরান এবং আফগানিস্তানে গোয়েন্দা অপারেশন চালানোর দায়িত্ব ছিলেন। বলা হচ্ছে, তিনিই ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বা আইআরজিসি’র কুদস ফোর্সের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে হত্যার অভিযান পরিচালনা করেছেন।

গত ৩ জানুয়ারি মার্কিন সামরিক বাহিনী ইরাকের বাগদাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে ড্রোন থেকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে জেনারেল সোলাইমানি এবং ইরাকের পপুলার মোবিলাইজেশন ইউনিটের সেকেন্ড ইন-কমান্ড আবু মাহদি আল মুহান্দিসসহ তাদের ১০ নিরাপত্তারক্ষীকে হত্যা করে। এই ড্রোন হামলার নেতৃত্ব দেন মাইকেল আন্দ্রেয়া।

এদিকে আফগান তালেবান জানিয়েছে, বিধ্বস্ত বিমান উদ্ধার আফগানিস্তানের সরকারি সেনারা কয়েক দফা চেষ্টা চালালেও তাদের প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দেয়া হয়েছে। তালেবান দাবি করেছে, বিমানটি তারা ভূপাতিত করেছে এবং বিমানের আরোহী গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের লাশ উদ্ধারের জন্য কোন টিম গেলে শুধুমাত্র তাদেরকে লাশ উদ্ধারের অনুমতি দেয়া হবে। গতকাল আমেরিকার বোম্বার্ডিয়ার ই-১১এ বিধ্বস্ত হয়। তবে বিমানে আরো কেউ ছিল কিনা তা পরিষ্কার নয় কারণ বিমানটি বিধ্স্ত হলে তাতে আগুন ধরে যায় এবং বেশিরভাগ জিনিস পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

আই.এ/

মন্তব্য করুন