
সারা বিশ্বে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দুই হাজার ছাড়িয়ে গেছে। যার অধিকাংশই চীনের নাগরিক সেখানে এবং এ রোগটিতে এ পর্যন্ত ৫৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ভাইরাস নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মত বাংলাদেশও উদ্বিগ্ন। করোনা ভাইরাস আতঙ্কে দেশে ফিরতে শুরু করছে বাংলাদেশি নাগরিকরা।
চীন থেকে আসা বাংলাদেশিদের বিমানবন্দরে স্ক্যানিং মেশিনের মাধ্যমে পরীক্ষা করা হচ্ছে। শনিবার রাত পর্যন্ত চীন থেকে ১৭৮৩ জন বাংলাদেশি এসেছেন। তবে তাদের টেলিফোন ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে ভেরিফিকেশন করে দু’জনকে সেম্পল নিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছে বলে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআরের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
গতকাল রোববার দুপুর ১২টায় রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা এসব তথ্য দেন।
করোনা ভাইরাস নিয়ে বাংলাদেশ উদ্বিগ্ন নয় জানিয়ে সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাস নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন নই, বরং আমরা প্রস্তুত।
রোগটি চীন থেকে আসার সম্ভাবনা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, যেহেতু চীনের সঙ্গে আমাদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ, সুতরাং সেখান থেকে রোগটি বাংলাদেশে আসার সম্ভাবনা আমরা উড়িয়ে দিচ্ছি না।
সেটা মাথায় নিয়েই আমরা আরও আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়েছি, এই সপ্তাহ থেকে সেটা আরও ইনটেনসিভ করার চেষ্টা করছি। করোনা ভাইরাস নিয়ে আমরা একটা কন্ট্রোল রুম খুলেছি, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শক্রমে আমরা কাজ করছি। আমরা এই ভাইরাস মোকাবেলা করব।
‘তিনটি স্ক্যানারের মধ্যে দুটি স্ক্যানার ভালো আছে। স্ক্যানারগুলো যাত্রীর কাছে থেকে ধরলে যদি তার জ্বর-সর্দি থেকে থাকে, তাহলে খুবই দ্রুত শনাক্ত করতে পারে। রোববার সকালের প্রোগ্রামে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সেখানে আরও দুটি স্ক্যানার দেয়া হবে। প্রতিদিন কতজন যাত্রীকে স্ক্যানিং করা হচ্ছে, তার মধ্যে কেউ অসুস্থ আছে কিনা, এগুলো আমরা দেখাবো।’
এ পর্যন্ত কতজনকে পরীক্ষা করা হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাব সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, আমাদের কাছে ফোনকল এসেছে ৯ জনের। ৯ জনকেই আমরা টেলিফোন ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে ভেরিফিকেশন করে ২ জনকে সেম্পল নিয়ে পরীক্ষা করেছি। এ ছাড়া বাকিদের কারও মধ্যে প্রাসপেক্টিভ কেস আমরা পাইনি, তাই পরীক্ষার প্রয়োজন হয়নি।
পরীক্ষাকৃত দু’জনকে সন্দেহভাজন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে ধরা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তাদের সন্দেহভাজন হিসেবে ধরা ঠিক হবে না। কারণ, তারা চীন থেকে আসলেও আক্রান্ত এলাকা থেকে আসেননি। আমরা অতি সতর্ক হয়েই তাদের পরীক্ষা করেছি।
ডা. সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউএসইডিসিকে নিয়ে আমরা একটি টিম তৈরি করেছি। তারা প্রতিদিন এটা রিভিউ করবে, গতকালের অবস্থা অনুযায়ী আমাদের পরবর্তী করণীয় কি, এর প্রেক্ষিতে আমরা রোববার বসেছিলাম।
সেখান থেকে আমরা বিশ্লেষণ করে দেখেছি যে, এই মুহূর্তে স্থলবন্দরগুলোকে সতর্ক রাখব। কিন্তু যেভাবে চীন থেকে আগত ফ্লাইটগুলোকে মনিটরিং করেছিলাম, সেটা এখনও অব্যাহত রাখব। এ ক্ষেত্রে আমরা চীনকেই অধিকতর গুরুত্বের মধ্যে রাখছি। তার কারণ হল, অন্য দেশে যতগুলো এ রোগী পাওয়া যায়, কিছু সাসপেক্টেড (সন্দেহভাজন) পেশেন্ট আর কিছু আক্রান্ত।
তিনি বলেন, যদি কারও মধ্যে এই রোগ চিহ্নত হয়, তাহলে তাদের জন্য প্রাথমিকভাবে কুর্মিটোলা হাসপাতালকে আমরা প্রস্তুত রেখেছি। দ্বিতীয়ত আমরা ইনফেকশন ডিজিজ হসপিটালকে প্রস্তুত করার প্রক্রিয়ায় আছি, বিকালে আমরা এটা নিয়ে আরেকটা মিটিংয়ের মাধ্যমে বিস্তারিত আরও সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
আই.এ/

