
গাজীপুরের সড়ক যোগাযোগ নিরবচ্ছিন্ন করতে বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত পৃথক বাস র্যাপিড ট্রানজিটের (বিআরটি) নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে গাজীপুর থেকে ২০ মিনিটে পৌঁছা যাবে বিমানবন্দর।
ছয় লেনের রাস্তার দুই লেন দিয়ে শুধু দ্রুত গতির বাসই চলবে, অন্য কোনো যানবাহন নয়। এই প্রকল্পের আওতায় ঢাকার অদূরে টঙ্গীতে ১০ লেন বিশিষ্ট আধুনিক ব্রিজ নির্মাণ করা হচ্ছে। উড়াল সড়কের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই ব্রিজটি নির্মাণ করছে সরকার। বলা হচ্ছে, এ ধরনের ব্রিজ বাংলাদেশে এই প্রথম।
টঙ্গী ব্রিজ এলিভেটেড হবে। যাত্রী সাধারণের জন্য ব্রিজে উঠতে থাকছে এস্কেলেটর (সচল সিঁড়ি), লিফট ও সাধারণ সিঁড়ি। ১০ লেন বিশিষ্ট টঙ্গী ব্রিজের মোট দৈর্ঘ্য হবে ৮০০ মিটার।
ঢাকা থেকে আশুলিয়া হয়ে দুটি র্যাম্প নামবে এবং আশুলিয়া থেকে ঢাকায় দুটি র্যাম্প উঠবে ব্রিজে। চারটি লেন ব্যবহার করা হবে পৃথক বাস রুটের জন্য, বাকি দুই লেনে সাধারণ মানুষ পায়ে হেঁটে চলাচল করতে পারবেন।
ঢাকা শহরসহ এর নিকট জেলাগুলোর জন্য একটি সমন্বিত, বহুমুখী, সময় ও অর্থসাশ্রয়ী যোগযোগ ব্যবস্থা নির্মাণে এ প্রকল্পটি মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে। প্রকল্পের মাধ্যমে অর্জিত সুফল এরইমধ্যে বিআরটির অন্য প্রকল্পের সঙ্গে সমন্বয় করে সরকার ২০৩৫ সালের মধ্যে একটি আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারবে।
গাজীপুর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার সড়কে নিরবচ্ছিন্ন যান চলাচলে দুই পাশে বিশেষ লেন (বিআরটি) নির্মাণের কাজ শুরু হয় ২০১২ সালে। উত্তরা হাউজবিল্ডিং থেকে চেরাগ আলী পর্যন্ত সাড়ে চার কিলোমিটার এলিভেটেড সড়ক নির্মাণ করা হবে।
এই এলিভেটেড সড়কের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই টঙ্গীতে ১০ লেন আধুনিক ব্রিজ। ১০ লেন টঙ্গী ব্রিজসহ সাড়ে চার কিলোমিটার এলিভেটেড সড়ক নির্মাণে মোট ব্যয় হবে ৯৩৫ কোটি টাকা। ২০১৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর পযর্ন্ত ব্রিজ ও এলিভেটেড সড়ক কাজের অগ্রগতি ২৫ শতাংশ। সাড়ে চার কিলোমিটার এলিভেটেড সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ছয়টি স্টেশন, রোড , ড্রেন ও মাটির কাজও করা হবে।
শুধু ১০ লেন বিশিষ্ট টঙ্গী ব্রিজ নির্মাণ নয়, পাশাপাশি ৩ হাজার ৮৯ মিটার দৈর্ঘ্যের ছয়টি ফ্লাইওভারও নির্মাণ করা হবে। ছয়টি ফ্লাইওভারের মধ্যে রয়েছে বিমানবন্দর ফ্লাইওভার ৮১৫ মিটার, জসিমউদ্দিন ফ্লাইওভার ৫৮০ মিটার, কুনিয়া ফ্লাইওভার ৫৫০ মিটার, ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি ফ্লাইওভার ৫৫০ মিটার, ভোগড়া ফ্লাইওভার ৫৮০ মিটার ও জয়দেবপুর ফ্লাইওভার ২ হাজার ১৪ মিটার।
প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতির কারণে ইতোমধ্যে বেড়েছে প্রকল্প ব্যয়। প্রথম সংশোধোনিতে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ২ হাজার ৩৯ কোটি টাকা। দ্বিতীয় সংশোধনীতে আরও ২ হাজার ২২৫ কোটি টাকা বাড়িয়ে মোট ব্যয় ৪ হাজার ২৬৫ কোটি টাকা করা হয়েছে।
প্রকল্পটির কাজ ২০১৬ সালে শেষ করার লক্ষ্য ছিল। এরপর প্রকল্পের ব্যয় আরও দুই বছর বাড়ানো হয়। নতুন সংশোধনী প্রস্তাবে বাস্তবায়ন মেয়াদ ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), ফরাসি দাতা সংস্থা এএফডি, গ্লোব্যাল এনভায়রনমেন্ট ফ্যাসিলিটি (জিইএফ) প্রকল্পে ঋণ দিচ্ছে ১ হাজার ৬৫০ কোটি ৭০ লাখ টাকা। প্রকল্পের আওতায় ১ দশমিক ৯০ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ, বিমানবন্দরে ৫৫০ মিটার আন্ডারপাস, প্রকল্প এলাকায় ২০ হাজার বর্গমিটারের একটি বাস ডিপো নির্মিত হবে। ফুটপাতসহ উভয়পাশে উচ্চ ধারণক্ষমতা সম্পন্ন ২৪ কিলোমিটার ড্রেন, আটটি কাঁচাবাজার ও ১৯টি বিআরটি স্টেশন নির্মাণ করা হবে।
আই.এ

