পুলিশের দাবি পূরণ না হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর অসন্তোষ

প্রকাশিত: ৫:৫৩ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৫, ২০২০

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার নির্দেশ সত্ত্বেও পুলিশের দাবি পূরণ না হওয়ায় প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ওপর অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এসব দাবির বিষয়ে তিনি সম্মতি দেয়ার পরও কেন পূরণ হয়নি, তা তাকে অতিসত্ত্বর জানাতেও বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।

রোববার (৫ জানুয়ারি) রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স মাঠে বার্ষিক প্যারেডের মধ্য দিয়ে পুলিশ সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর কল্যাণ সভায় সরকারপ্রধান এ অসন্তোষ প্রকাশ করেন।

ওই সভার একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, গত দুই পুলিশ সপ্তাহে যে দাবি উত্থাপিত হয়েছে, তার প্রায় সবই অবাস্তবায়িত রয়ে গেছে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ও আশ্বাস সত্ত্বেও। পুরনো এ দাবিগুলো ফের প্রধানমন্ত্রীর সামনে উত্থাপন করা হলে প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ওপর তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করেন। এসব বিষয়ে তিনি সম্মতি দেয়ার পরও কেন তা বাস্তবায়ন হয়নি তা তাকে অতিসত্ত্বর জানাতেও বলেন প্রধানমন্ত্রী।

সভায় পুলিশ তাদের পুরনো দাবিগুলো তুলে ধরে এবারও। একজন ঊধ্বর্তন কর্মকর্তা দাবির বিষয় তুলে ধরে বলেন, নিম্ন-পদস্থ কর্মচারীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য বিভিন্ন ট্রেড যেমন- টেলিফোন, বিউগল, নার্সিং, ড্রাইভিং, ক্লিনার ইত্যাদি ভাতা যা ট্রেডভেদে ১৫ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত, সেসব ক্ষেত্রে বর্তমান বেতন কাঠামোর সাথে সামঞ্জস্য রেখে বাড়ানোর দাবি তোলে পুলিশ।

প্রধানমন্ত্রী এক্ষেত্রে কিছু সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করে বলেন, বর্তমান বেতন কাঠামোর পূর্ববর্তী কাঠামো অর্থাৎ ২০১৫ সালের কাঠামো অনুযায়ী এই ভাতা বাড়ানো যেতে পারে যা ট্রেডভেদে ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। অন্যান্য সব সরকারি বিভাগের প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে সব শ্রেণির কর্মকর্তা কর্মচারীর জন্য ৩০ শতাংশ প্রশিক্ষণ ভাতা চালু রয়েছে।

পুলিশের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রসমূহের মধ্যে কেবল বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি (সারদা) এবং বাংলাদেশ পুলিশ স্টাফ কলেজে (মিরপুর) কর্মরত এএসপি হতে তদুর্দ্ধ কর্মকর্তাদের জন্য ৩০ শতাংশ ভাতা চালু হয়েছে। অন্যান্য সরকারি দফতরের সাথে এক্ষেত্রে সমতায়নের দাবি তোলা হয় সভায়।

এ দাবির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুলিশের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোতেও একই সুবিধা দেয়া যৌক্তিক। তিনি এ বিষয়ে সম্মতি দেন। পুলিশসহ কয়েকটি সরকারি সংস্থা পাচারকৃত বা চোরাই বা অবৈধ মালামাল উদ্ধার করে থাকে। অন্যান্য সংস্থার সদস্যরা তাদের উদ্ধারকৃত মালামালের মূল্যের ওপর একটি প্রণোদনা পেলেও পুলিশ এ ধরনের কোনো সুবিধা পায় না। তাই পুলিশ উদ্ধারকৃত মালামালের ন্যূনতম ২ দশমিক ৫ শতাংশ প্রণোদনা হিসেবে তাদেরকে দিতে দাবি তোলে। তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে কোনো সম্মতি মেলেনি।

অন্যান্য বিভাগের সরকারি কমকর্তা কর্মচারীরা নানা ধরনের ছুটি মিলিয়ে বছরে প্রায় ১২০ দিন ছুটি ভোগ করে থাকেন। কাজের ধরন ও চাপের কারণে পুলিশ সদস্যরা কখনোই এই ছুটি ভোগ করতে পারেন না। তাই এই সময়টি স্পষ্টতই কর্মকাল বিধায় পুলিশ সদস্যদের কমপক্ষে ষাট দিন বা দুই মাসের মূল বেতনের সম-পরিমাণ আর্থিক প্রণোদনা দেয়ার দাবি তোলা হয় সভায়।

এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী এক মাসের মূল বেতনের সম-পরিমাণ আর্থিক সুবিধা দিতে সম্মত হন। পুলিশ সদস্যরা নানাবিধ ঝুঁকিপূর্ণ ও অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় কাজে থাকেন বলে চাকরি-পরবর্তী সময়ে অন্যরা যখন ভিন্ন কোনো কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারেন, পুলিশ সদস্যরা নানা প্রকার অসুস্থতায় ভোগেন। এ সময় তাদের জীবন ও জীবিকা বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে ওঠে। তাই পুলিশ সদস্যরা তাদের জন্য দুই জন হিসাবে ধরে আজীবন রেশন সুবিধার দাবি তোলেন। এ দাবিটিকে অত্যন্ত যৌক্তিক উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী তা বাস্তবায়নে সম্মতি দেন।

 অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠান বা বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীরা ছুটিতে গিয়ে মারা গেলেও এককালীন আট লাখ টাকা পান; পুলিশের একজন সদস্য জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নিহত হলেও পান পাঁচ লাখ টাকা। অন্যান্য সরকারি দফতরের একজন সদস্য সড়ক দুর্ঘটনা বা অন্য কোনো উপায়ে আহত হলে যেখানে চার লাখ টাকা পান, সেখানে পুলিশের একজন সদস্য সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে গিয়ে গুরুতর আহত হলেও পান এক লাখ টাকা। এ বিষয়ে সমতায়নের জন্য বিগত কয়েকটি পুলিশ তোলা দাবিটি পুনরুত্থাপন করা হয়। এ দাবির বিষয়টি সুরাহা না হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। সাত কার্য দিবসের মধ্যে বিষয়টি সুরাহা করার নির্দেশ দেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) সোহেল রানা জাগো নিউজকে বলেন, পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে আয়োজিত কল্যাণ সভায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিগত বছরে নানা ক্ষেত্রে পুলিশের সাফল্য তুলে ধরা হয়। পাশাপাশি, পেশাগত সেবার মান বাড়ানোর লক্ষ্যে পুলিশের জন্য কিছু যৌক্তিক দাবিও তুলে ধরা হয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে।

ওয়াইপি/

মন্তব্য করুন