
ভারতের জাতীয় জনসংখ্যা নিবন্ধনের (এনপিআর) নির্দেশিকায় হিন্দু, খ্রিস্টানসহ বিভিন্ন ধর্মের উৎসবের তালিকা থাকলেও নেই মুসলিমদের উৎসব। সদ্য প্রকাশিত ওই নির্দেশিকায় মুসলিমদের প্রতি এই বৈষম্য নজরে আসার পর শুরু হয়েছে সমালোচনা। তবে এই নির্দেশিকায় মুসলিমদের উৎসবের তালিকা না থাকার ঘটনা এই প্রথম নয়, এর আগে ২০১১ সালে মনমোহন সিংহের কংগ্রেস সরকারের আমলেও এতে মুসলিমদের ধর্মীয় উৎসবের নাম ছিল না।
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) নিয়ে বিক্ষোভের মধ্যেই ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে এনপিআর করার ঘোষণা দিয়েছে ভারত সরকার। তালিকায় অর্ন্তভুক্ত হতে যে ফরম পূরণ করতে হবে, সেখানে বাবা-মায়ের জন্ম তারিখ ও জন্মস্থল উল্লেখ করার নির্দেশনা রয়েছে। এছাড়া পার্লামেন্টের ভেতরে-বাইরে অনেকবারই দেশব্যাপী জাতীয় নাগরিক তালিকা (এনআরসি) প্রণয়নের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে দেশটির সরকার। বিতর্কিত এসব পরিকল্পনায় মুসলিমদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের অভিযোগ উঠেছে নরেন্দ্র মোদির সরকারের বিরুদ্ধে।
কলকাতাভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের ধর্মভিত্তিক জনসংখ্যার ক্ষেত্রে হিন্দুদের পরেই মুসলিমদের অবস্থান। ৩৭ পাতার এনপিআর নির্দেশিকার ৩২ নম্বর পাতায় সংযুক্তি ৫-এ ভারতের গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উৎসবের একটি তালিকা দেওয়া হয়েছে। সেখানে হিন্দু ছাড়াও বৌদ্ধ-খ্রিস্টান-শিখসহ বিভিন্ন ধর্মের উৎসবের সময়কাল উল্লেখ করাআছে। তবে সংখ্যায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা মুসলিমদের কোনও উৎসব বা স্মরণীয় দিনের কোনও উল্লেখ নেই।
২০১১ সালের এনপিআর ম্যানুয়ালে মুসলিমদের উৎসব তালিকা না থাকার কোনও ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। তবে এবার ওই তালিকার ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে- অনেকেই নিজের জন্মের দিনক্ষণ সঠিক বলতে পারেন না। সে জন্য বড় কোনও ঐতিহাসিক ঘটনা অথবা বিভিন্ন সম্প্রদায়ের উৎসব বা ধর্মীয় রীতির কথা মনে করিয়ে সম্ভাব্য জন্ম তথ্য নথিবদ্ধ করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে নির্দেশিকায়।
কলকাতা হাইকোর্টের সাবেক বিচারপতি সমরেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো আরও অনেকেই এনপিআর’র এই নির্দেশিকায় ধর্মীয় বিভাজন বা বৈষম্যের অভিযোগ তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, ‘দেশের কোনও ধর্ম নেই। রাষ্ট্র ধর্মনিরপেক্ষ। এখানে যেন ফের একবার বিভাজন করা হচ্ছে। সংবিধানে জাত-পাতের বিষয়ে উল্লেখ নেই। এনপিআরের নির্দেশিকায় মুসলিম ধর্মীয় উৎসবের উল্লেখ না থাকা অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়।’
সিএএ’র প্রতিবাদে ইতোমধ্যেই বিরোধীরা এক জোট হতে শুরু করেছে। এই আইন ভারতীয় সংবিধানবিরোধী বলেও দাবি তাদের। ‘ধর্মের’ ভিত্তিতে কোনও আইন কার্যকর করা ঠিক নয় বলে সমালোচনা করছেন বিরোধীরা। এবার এনপিআর নির্দেশিকায় মুসলিমদের উৎসব তালিকা বাদ পড়ায় ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত হানা হয়েছে বলে মনে করছেন তারা।
আই.এ/

