প্রতিরক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভর করতে পারছে না সৌদি

প্রকাশিত: ৭:২৩ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৩০, ২০১৯

নিজেদের প্রতিরক্ষার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর আর নির্ভর করতে পারছে না তেল সমৃদ্ধ দেশ সৌদি আরব। এজন্য, নিজেদের কঠোর অবস্থান পরিবর্তন করে আঞ্চলিক বিরোধ নিষ্পত্তি করতে শত্রুদের সাথে আলোচনা শুরু করেছে দেশটি।

অবিরাম ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলায় সউদী আরবের প্রধান দুই তেল ক্ষেত্র যখন ব্যপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়, তখন আঞ্চলিক শত্রুদের সাথে উত্তেজনা কমানোর জন্য সৌদি ক্রাউন প্রিন্স ভিন্নধর্মী কূটনীতি গ্রহণ করেন। চার বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান ইয়েমেনে যে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন, কৌশল বদল করে তাদের সাথেই সরাসরি শান্তি আলোচনা শুরু করেছেন।

এ ক্ষেত্রে তিনি প্রথমেই যে সফলতা পেয়েছেন তা হলো, দুই পক্ষের মধ্যে যুদ্ধবিরতিতে সমঝোতা। তিনি সউদীর ছোট কিন্তু ধনী প্রতিবেশী দেশ কাতারের উপরে মার্কিন মিত্রদের সাথে মিলে চাপানো নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে না নিলেও, তা সহজ করার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। এমনকি চির শত্রু ইরানের সাথেও শীতল যুদ্ধ অবসানের চেষ্টা হিসেবে তিনি পরোক্ষ আলোচনায় শুরু করেছেন।

বিশ্লেষকদের মতে, কঠোর অবস্থান থেকে সড়ে এসে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে সৌদি আরবের আগ্রহী হয়ে উঠার কারণ হচ্ছে, এক দশক ধরে মধ্য প্রাচ্যে মার্কিন নীতির মূল ভিত্তি ছিল যে, যুক্তরাষ্ট্র সৌদি তেল শিল্পকে বিদেশী হামলা থেকে রক্ষা করবে। কিন্তু তার উপরে এখন আর আস্থা রাখতে পারছে না রিয়াদ।

যদিও আমেরিকান এবং সৌদি কর্মকর্তারা একমত হয়েছেন যে, ১৪ সেপ্টেম্বর আব্বাইক এবং খুরাইসে পেট্রোলিয়াম প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রের উপর হামলার পিছনে ইরানের হাত ছিল, যা সউদী তেল উৎপাদন সাময়িকভাবে থামিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রতিকারে উত্তপ্ত বক্তব্য দেয়া ছাড়া আর কিছুই করেননি।

হামলার প্রতিক্রিয়ায় সৌদি কর্তৃপক্ষ যে চরম সত্য উপলব্ধি করে তা হলো, আমেরিকান অস্ত্রের জন্য বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করলেও যুক্তরাষ্ট্র তাদের সহায়তায় এগিয়ে আসবে, কিংবা তাদের জন্য অন্তত কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেবে, এমনটি তারা আর বিশ্বাস করতে পারছে না।

উল্লেখ্য, ১৯৭৩ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে অস্ত্র কিনতে ১ লাখ ৭০ হাজার কোটি ডলারের বেশি ব্যয় করেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, শক্তিশালী আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্ধীদের আকষ্মিক হামলা নিয়ে উদ্বিগ্ন সউদী নীরবে তাদের শত্রুদের সাথে দ্বন্দ্ব নিরসনে নমনীয় পন্থা গ্রহণ করতে শুরু করেছে।

এ বিষয়ে লন্ডনের কিংস কলেজের গবেষক ডেভিড বি রবার্টস বলেন, ‘আমি মনে করি, আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর আমরা উপসাগরের ইতিহাসের এক চূড়ান্ত মুহূর্ত দেখব।’ তিনি বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদেরকে রক্ষা করবে এই ধারণাটি ভেঙে পড়ায় তারা আরও উপযুক্ত কৌশল গ্রহণের প্রয়োজন অনুধাবন করছে।’

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য, কূটনীতির দিকে সউদীর অগ্রসর হওয়ার বিষয়টি একটি তিক্ত অভিজ্ঞতা। ট্রাম্প প্রশাসন এবং কংগ্রেস সৌদিদের উপর ইয়েমেনের যুদ্ধের অবসান ঘটাতে চাপ দিচ্ছিল এবং তাদেরকে কাতারের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য চাপ দিয়েছিল। কিন্তু সবই মূলত বৃথা গিয়েছিল। এখন, আমেরিকান চাপের থেকেও ইরানের সম্ভাব্য হামলার আশঙ্কা আরও কার্যকরিভাবে তাদেরকে সেই দিকে যেতে বাধ্য করছে।

আই.এ/

মন্তব্য করুন