ভোল পাল্টে ক্ষমা চাইলেন ও নুরুল হকদের সুস্থতা কামনা করলেন গোলাম রাব্বানী

প্রকাশিত: ৩:২২ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৯

গত রোববার (২২ ডিসেম্বর) ডাকসু ভবনে গেট আটকে কথিত মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নামে একটি সংগঠনের নেতাকর্মীদের নির্মম মারধরের শিকার হওয়া ডাকসু ভিপি নুরুল হক ও তার সমর্থকদের ব্যাপারে ঔদ্ধত্ব মন্তব্য করেছিলেন ডাকসুর জিএস ও অর্থ কেলেঙ্কারীসহ দুর্নীতির দায়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে বহিস্কৃত নেতা গোলাম রাব্বানী। নৃশংস মারধরের শিকার হওয়া নুরুল হকদের ব্যাপারে গোলাম রাব্বানী রোববার বিকেলে সাংবাদিকদের সামনেই মন্তব্য করেছিলেন ‘নুরুল হক বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে ডাজ নট ম্যাটার, আমরা নুরুল হককে আর ডাকসু ঢুকতে দেবো না’।

এমনকি তিনি এই ঘটনার জন্য নুরুল হককেই দায়ী করেছিলেন। যদিও প্রত্যক্ষদর্শী ও বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ থেকে দেখা গেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বর্বোরচিত হামলায় জড়িত ছিলেন কথিত মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের এবং ছাত্রলীগের কিছু চিহ্নিত নেতাকর্মীরা। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস এবং ঢাবি ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের ব্যাপারে অভিযোগ করেছেন মারধরের শিকার হওয়া ব্যাক্তিরা। তারা ঘটনার সূত্রপাত সম্পর্কে বলেন, সেদিন ঢাকসু ভবনে সাদ্দাম হোসেন ও সনজিত চন্দ্র দাস প্রবেশ করলে সনজিতকে উদ্দেশ করে নুরুল হক বলেন, ‘আপনি তো ডাকসুর কেউ নন। আপনি কেন এখানে এসেছেন।’ তখন সনজিত বলেন, ‘আমি কে, তা কিছুক্ষণ পরই বুঝবি।’

কিন্তু ডাকসু জিএস গোলাম রাব্বানী তারই সিনিয়র নেতা ডাকসু ভিপির অমানুষিক মার খাওয়ার পরও তার ব্যাপারে করা এমন ঔদ্ধত্বপূর্ণ মন্তব্যের জেরে বেশ সমালোচিত হচ্ছিলেন এবং অনেকেই তার এই ঔদ্ধত্বের ব্যাপারে কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এরপর ২৪ ঘন্টা না পেরোতেই তিনি ওই উক্তির জন্য ফেসবুকে ক্ষমা চেয়েছেন এবং ভোল পাল্টে নুরুল হকদের মধ্যে যারা অসুস্থ ও আহত হয়েছে তাদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন। সাথে সাথে তিনি তার পোস্টের সাথে ডাকসুর ফেসবুক মেসেঞ্জারের সিক্রেট গ্রুপের কিছু স্ক্রীনশটও সংযুক্ত করে দিয়েছেন। এ বিষয়ে লেখা তার ফেসবুক পোস্টটি পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো। তিনি তার ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লেখেন,

আমি চোখের সমস্যার কারণে বিগত এক সপ্তাহ যাবত বাসাতেই অবস্থান করছি। গতকাল দুপুর পৌনে একটার দিকে আমাদের ডাকসুর ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে কথোপকথন থেকে জানতে পারি ভিপি নুর গ্রুপের সাথে মুক্তিযোদ্ধা মঞ্চের সদস্যদের মারামারি চলছে।

নূরের সাথে থাকা ৫০-৬০ জন বহিরাগত দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ডাকসু ভবনের প্রবেশ গেটে ও ভিতরে অবস্থান নিয়েছে এবং আমাদের ডাকসুর আন্তর্জাতিক সম্পাদক Shahrima Tanjina Arni এবং রাইসা নাসের ভিতরে আটকা পরেছে। স্বভাবতই অজানা আশংকা থেকে আমি অসুস্থতা নিয়েও ক্যাম্পাসে ছুটে যাই। যানযটে বিলম্ব হওয়ায় মারামারি শেষ হবার বেশ কিছুক্ষণ পরে ডাকসুতে পৌঁছাই। ততক্ষণে আমাদের প্রক্টর গোলাম রাব্বানী স্যার এসে অর্নি ও রাইসাকে উদ্ধার করেন এবং মারামারিতে আহতদের নিজ দায়িত্বে ডিএসসিতে পাঠান।

সেখানে উপস্থিত কয়েকটি মিডিয়া উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে শুরুতে বলি, ‘আমি ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলাম না। মারামারির আদ্যোপান্ত আমার আমার জানা নেই। তবে ভিপি নূর হামলা বা ঘটনার বিষয়ে ডাকসুর কারো সাথে কথা না বলে ৫০-৬০ জন বাহিরাগত এনে যেভাবে ডাকসু ভবন অবরুদ্ধ করে রেখেছে এবং যেখানে যে অরাজকতা হয়েছে, সেগুলো মেনে নেয়া যায় না।

‘নূর আহত না নিহত মুখ্য না, সে কাউকে না জানিয়ে ডাকসুতে বহিরাগত নিয়ে এসে কেন এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করলো?’ ডাকসুর দুই ছোটবোন অবরুদ্ধ থাকা নিয়ে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ থেকেই মন্তব্যটি করেছিলাম, যা ডাকসুর জিএস হিসেবে আমার বলা উচিত হয় নাই। সেজন্য আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি।

তবে উক্ত ঘটনায় বরাবরের মতই, ছাত্রলীগকে জড়িয়ে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। ডাকসুর এজিএস সাদ্দাম হোসেন ও ঢাবির সিনেট সদস্য সঞ্জিত চন্দ্র দাস মারামারির কথা শুনে ভিপি নুরকে উদ্ধার করতে সেখানে গিয়েছিলো। নুরের সাথে থাকা সহযোগীদের অসৌজন্যমূলক আচরণে ও তীর্যক মন্তব্যে তারা ফিরে আসে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে। তবুও যা ঘটেছে সেটা অত্যন্ত দুঃখজনক। উক্ত অনভিপ্রেত ঘটনায় যারা হতাহত হয়েছে তাদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেয়ার আহবান জানাই।

মন্তব্য করুন