
মৃত্যুদণ্ডের রায় কার্যকর করার আগে পাকিস্তানের সাবেক সামরিক শাসক পারভেজ মোশাররফ মৃত্যুবরণ করলে তার মরদেহ রাস্তায় তিন দিন ঝুলিয়ে রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন পেশোয়ার হাইকোর্টের তিন সদস্যের বেঞ্চের মুখ্য বিচারপতি ওয়াকার আহমেদ শেঠ। এমন অদ্ভুত রায় দেয়ায় পাকিস্তান সরকার ওই বিচারপতি মানসিকভাবে অসুস্থ বলে অভিহিত করেছে।
বিচারপতি আহমদ শেঠ এর অপসারণ চেয়ে সরকার সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে আবেদন করবে বলেও জানিয়েছে দেশটির আইনমন্ত্রী ফারোগ নাসিম।
পাকিস্তানের আইনমন্ত্রী ফারোগ নাসিম বলেছেন, এই ধরনের রায় পাকিস্তানের আইনের বিরোধী। ফেডারেল গভর্মেন্ট এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাছে আবেদন জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনি বলেন, কোনো বিচারপতি যদি এমন রায় দেন তাহলে তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ এবং অযোগ্য।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, ২০০৭ সালে সংবিধান লঙ্ঘন করায় উচ্চতর রাষ্ট্রদ্রোহের প্রমাণ পাওয়ার পর গত মঙ্গলবার ৭৬ বছর বয়সী সাবেক এই একনায়ককে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
রায়ে বলা হয়, একটি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ১৯৯৯ সালে তিনি ক্ষমতা দখল করেছিলেন। তার মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করতে পলাতক পারভেজ মোশাররফকে (বর্তমানে দুবাইয়ে চিকিৎসাধীন) গ্রেফতার করতে নিরাপত্তা বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
কিন্তু গ্রেফতারের বা মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আগে তিনি মারা গেলে ইসলামাবাদে পার্লামেন্টের বাইরে ডি-চত্বরে তার মরদেহ তিনদিন ঝুলিয়ে রাখতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে রায়ে। পারভেজ মোশাররফের আইনজীবী এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন বলে জানিয়েছেন।
পাকিস্তানের আইনমন্ত্রী ফারোগ নাসিম বলেন, ওই তিন সদস্যের বিচারক প্যানেলের প্রধানকে অপসারণ করতে চাচ্ছে সরকার। বিচারক ওয়াকার আহমেদ শেঠ বিচারিক বিধিমালার লঙ্ঘন করেছেন বলে তিনি দাবি করেন।
তিনি বলেন, আমাদের জবাব হচ্ছে, এ ধরনের বিচারক হাইকোর্ট কিংবা সুপ্রিমকোর্টে বিচার পরিচালনার কর্তৃত্ব রাখেন না। তিনি অযোগ্য।
বিচার বিভাগের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ার মধ্যেই সেনাবাহিনীর গণমাধ্যম শাখার বিবৃতিতে বলা হয়, আদালতের ঘোষণা প্রমাণ করছে, বিচারের মূল রায়ে ত্রুটি রয়েছে। আজকের রায়ে বিশেষভাবে যে সব ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে, তা মানবতা, ধর্ম, সভ্যতা ও আমাদের মূল্যবোধের বাইরে।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করেছেন সেনাপ্রধান কামার জাভেদ বাজওয়া। মূল রায় ইতিমধ্যে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে ব্যথিত করেছে।
পাকিস্তানের ইতিহাসে স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত অর্ধেক সময় শাসন করেছে সামরিক বাহিনী। পারভেজ মোশাররফও ছিলেন সামরিক শাসক। ছিলেন সাবেক সেনাপ্রধান। তার পক্ষে দেশপ্রেমের সাফাই গাইতে গিয়ে রায়ে আইনি প্রক্রিয়া অবহেলা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে দেশটির সেনাবাহিনীর গণমাধ্যম শাখা। এ নিয়ে ইমরান খানেরসরকারের সঙ্গে স্পষ্টতই বিরোধেরই ইঙ্গিত দিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী।
/এসএস

