বাকৃবিতে ‘উন্নয়ন ও কৃষিতে গ্রামীণ নারীর অংশগ্রহণ’ বিষয়ক কর্মশালা

প্রকাশিত: ৪:৫৮ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৯

তানিউল করিম জীম, বাকৃবি প্রতিনিধি: ‘মানব সভ্যতার শুরু থেকেই সভ্যতার বিকাশ, রাষ্ট্র ও সমাজ গঠনে নারীর ভূমিকা ছিল অনবদ্য। নারীরা বর্তমানে তাদের কর্মদক্ষতা ও যোগ্যতার বিচারে এখন এগিয়ে যাচ্ছে। কৃষিতে নারীর ভূমিকা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না।

কৃষিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখে চলেছে গ্রামীণ নারীরা। ফসল তোলার পরবর্তী কর্মকান্ড, বীজ সংরক্ষণ, সবজি উৎপাদন, ফসল উত্তরণ প্রক্রিয়ায় মাড়াই, বাচাই, শুকানো, গবাদিপশু পালনেও নারীরা ভূমিকা রেখে চলেছে।’ ‘উন্নয়ন ও কৃষিতে গ্রামীণ নারীর অংশগ্রহণ’ বিষয়ক কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে এসব কথা বলেন ইনস্টিটিউট অভ এগ্রিবিজনেস এন্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের প্রভাষক মৌসুমি সাহা।

তিনি আরও বলেন, নারীরা কাজ করলেও তাদের কাজের মূল্যায়ন করা হয় না। নারীদের কাজের মূল্যালয় করাটা এখন সবচেয়ে বড় বিষয় তাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে।এসময় তিনি কর্মক্ষেত্রে নারীর বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা নিয়েও আলোচনা করেন। তিনি বলেন , বিশেষ করে লিঙ্গ বৈষম্যের কারণে কর্মক্ষেত্রে নারীরা তাদের প্রাপ্য মূল্যায়ন পাচ্ছে না। তাদের সকল প্রতিবন্ধকতা উত্তোরণের মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিতে হবে। লিঙ্গ বৈষম্য , নারীর শ্রমের স্বীকৃতি, মজুরি বৈষম্য, ভূমির মালিকানার স্বীকৃতি, নারীর উন্নয়ন খাতে অর্থায়ন বৃদ্ধি , নিরাপদ কর্ম পরিবেশ সৃষ্টি করার মাধ্যমে নারীর প্রতিবন্ধকতা দূর করণের মাধ্যমে তাদের সামনে এগিয়ে চলার পথ সহজ করতে হবে।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) ‘উন্নয়ন ও কৃষিতে গ্রামীণ নারীর অংশগ্রহণ’ বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্বাবলম্বী উন্নয়ন সমিতির আয়োজনে ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় বুধবার সকাল সাড়ে ১০ টায় কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সভাকক্ষে ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

স্বাবলম্বী উন্নয়ন সমিতির নির্বাহী পরিচালক বেগম রোকেয়ার সভাপতিত্বে কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিনেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জসিম উদ্দিন খান।

এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান, ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের জেন্ডার এ্যাডভাইজার বনশ্রী মিত্র নিয়োগী ও স্বাবলম্বী উন্নয়ন সমিতির দাতা সুইডেনের অধিবাসী ওলফ মারলিংসহ বিভিন্ন অনুষদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কৃষি অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সাইদুর রহমান। তিনি বলেন, নারীর ভূমিকা কোনো সময়ই অস্বীকার করা যাবে না। নারীরা এখন দেশের উন্নয়নে সর্বোচ্চ ভূমিকা রাখছে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার নির্বাচনী ইস্তেহারে নারীর ক্ষমতায়নের কথা উল্লেখ করে এ বিষয়ে গুরুত্বের সাথে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি ইতিমধ্যে নারীর ক্ষমতায়নে ভূমিকা রাখার জন্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। নারীরা দেশের উন্নয়নে যে হারে অবদান রেখে চলেছে সেজন্য বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে রোল মডেল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপ-উপাচার্য বলেন, আমাদের দেশের অর্থনীতি গ্রামীণ কৃষির উপর নির্ভরশীল । সভ্যতার সূচনা হয়েছে কৃষির মাধ্যমে। আর কৃষির সূচনা হয়েছে নারীর হাতে। তাই কৃষিতে নারীর অবদান অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। তারা কাজ করেন কিন্তু তাদের কাজের যথার্থ স্বীকৃতি নেই। তাদের কাজের যথাযোগ্য স্বীকৃতি দেওয়ার মাধ্যমে কর্মস্পৃহা বাড়াতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।

বাকৃবিতে এবারও প্রায় অর্ধেকের বেশি নারী শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে যা আমাদের কাছে নারীর অগ্রগতি তুলে ধরে। সকল কর্মক্ষেত্রে নারীর সংখ্যা দিনদিন বেড়ে চলেছে। নারীরা কাজ করে দিনে ২৪ ঘন্টার মধ্যে প্রায় ২০ ঘন্টা। তাই তাদের কাজের সঠিক মূল্যায়ন করা উচিত। আমি আশা করব কৃষি অর্থনীতির তকরা নারীর অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটিয়ে নারীর ক্ষমতায়নে উল্লেখযোগ্য ভুমিকা রাখবে।

উল্লেখ্য, স্বাবলম্বী উন্নয়ন সমিতি একটি অলাভজনক বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা। সংস্থাটি ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে দরিদ্র এবং পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠির জীবন ও জীবিকার মানোন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমানে সংস্থাটি নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠির জন্য কাজ করে যাচ্ছে।

আই.এ/

মন্তব্য করুন