
নাজমুল হাসান, চবি: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহাসমারোহে ও আনন্দঘন পরিবেশে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে মহান বিজয় দিবস উদযাপন করা হয়েছে। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ১৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় স্বাধীনতা স্মারক ভাস্কর্য, শহীদ মিনার ও স্মৃতি সৌধ ‘স্মরণ’ সহ সকল গুরুত্বপূর্ণ ভবন দৃষ্টিনন্দন আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়। ১৫ ডিসেম্বর দিবাগত রাত ১২.০১ মিনিটে বিজয় দিবসের সূচনা লগ্নে বিউগল বাজিয়ে বিজয় দিবসকে স্বাগত জানানো হয়।
১৬ ডিসেম্বর ফজরের নামাজের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল মসজিদে মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের স্ব স্ব উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয় এবং সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবনসমূহে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।
সকাল ৮ টায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় স্বাধীনতা স্মারক ভাস্কর্যে পুস্পস্তবক অর্পণ করে লাখো শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার। এরপর চবি শিক্ষক সমিতি, অনুষদের ডিনবৃন্দ, হলের প্রভোস্টবৃন্দ, প্রক্টর ও সহকারী প্রক্টরবৃন্দ, বিভিন্ন বিভাগীয় সভাপতি ও ইনস্টিটিউটের পরিচালকবৃন্দ, অফিসার সমিতি, চবি ক্লাব (ক্যাম্পাস), চবি মহিলা সংসদ, সমন্বয় কর্মকর্তা বিএনসিসি, চ.বি. ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজ, কর্মচারী সমিতি, কর্মচারী ইউনিয়ন, সাংবাদিক সমিতি, বঙ্গবন্ধু পরিষদ এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনসমূহ পুস্পস্তবক অর্পন করে। পুস্পস্তবক অর্পণ শেষে মাননীয় উপাচার্যের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত হয় বিজয় র্যালি এবং র্যালি শেষে চবি বঙ্গবন্ধু চত্বরে মাননীয় উপাচার্য মহাকালের মহানায়ক স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুস্পমাল্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর বঙ্গবন্ধু চত্বরে অনুষ্ঠিত হয় ‘শতবর্ষে বঙ্গবন্ধু, অর্ধশতকের বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভা। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন চ.বি উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার।
প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার তাঁর বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সকলকে মহান বিজয় দিবসের বিজয়ী শুভেচ্ছা জানান। তিনি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চারনেতা, মহান মুক্তিযুদ্ধে শাহাদৎ বরণকারী ত্রিশলক্ষ শহীদ, ১৯৭৫ এ নির্মমভাবে শহীদ বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যবর্গের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিত দু’লক্ষ জায়া-জননী-কন্যার প্রতি বিশেষ সম্মান প্রদর্শন করেন। তিনি শহীদ জননী জাহানারা ইমাম এবং ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামালায় শহীদ আইভি রহমানসহ অন্যান্য শহীদদের গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।
উপাচার্য বলেন, বাঙালিদের স্বাধীনতা অর্জনের পথে দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পথ পরিক্রমায় ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ’৬৬ ছয় দফা, ’৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭০ এর নির্বাচনে বাঙালিদের নিরঙ্কুশ জয়লাভ এবং ’৭১ এর মহান মুুক্তিযুদ্ধে বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধুর সম্মোহনী নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ গোটা জাতির সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে বিশ^ মানচিত্রে প্রতিষ্ঠা করেছে একটি স্বাধীন জাতি রাষ্ট্র্র। বঙ্গবন্ধুর এই বাংলাদেশ আজ অর্ধশতক অতিক্রম করছে। সুদীর্ঘ এই পথ চলায় আমাদের অর্জন কম নয়। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু তনয়া আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্বদরবারে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে।
এই উন্নয়ন-অগ্রযাত্রার ধারা অব্যাহত রাখতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ক্ষুধা-দারিদ্রমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, মানবিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে তরুণ প্রজন্মকে মহান মুক্তিযুদ্ধের শাণিত চেতনা হৃদয়ে ধারণ করে দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি ।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে মাননীয় উপাচার্য চবি জাদুঘরে চারদিন (১৬-১৯ ডিসেম্বর) ব্যাপি ‘মুক্তিযুদ্ধের দলিলপত্র ও চিত্র’ প্রদর্শনী এবং চবি জননেত্রী শেখ হাসিনা হলে বাংলার মুখ, চবি ছাত্রলীগ আয়োজিত ‘বিজয়ের বীর গাঁথা’ শীর্ষক দেয়ালিকার উদ্বোধন করেন।
আলোচনা সভা পরিচালনা করেন ও স্বাগত বক্তব্য রাখেন চ.বি. রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) জনাব কে এম নুর আহমদ। অনুষ্ঠানে মহান মুক্তিযুদ্ধে বীর শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত পরিচালনা করেন চবি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব হাফেজ আবু দাউদ মুহাম্মদ মামুন।
চ.বি. সংগীত বিভাগের শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে আলোচনা অনুষ্ঠান সূচিত হয়। আলোচনা সভা শেষে চবি সংগীত বিভাগ, নাট্যকলা বিভাগ, চবি ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী এবং চবি মহিলা সংসদের পরিবেশনায় অনুষ্ঠিত হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বিশ^বিদ্যালয় পরিবারের সম্মানিত শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং শিক্ষার্থীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
আই.এ/

