
ভোলার দৌলতখান উপজেলার নতুন এম.পি.ও তালিকাভূক্ত ছাকিনা আদর্শ একাডেমিতে দেড় যুগেরও বেশী সময় ধরে কর্মরত শিক্ষকদের নাম বাদ দিয়ে অন্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের নাম দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ভোলা জেলা জামায়াতের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান সহসভাপতি জিয়াউল মোর্শেদ এমপিওর আবেদনের সময় কর্মরত শিক্ষকদের নাম বাদ দিয়ে তার নিকট আত্মীয় ও জামায়াতের লোকজনের নাম পাঠিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ভূক্তভোগী শিক্ষকরা।
বিদ্যালয়ে বর্তমানে কর্মরত ভূক্তভোগী শিক্ষকরা জানায়, প্রতিষ্ঠানটি এমপিও ভুক্তির আবেদনের সময় যেসকল শিক্ষকদের নামের তালিকা দেয়া হয়েছে তারা কেউ এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক নয় এবং কখনও এই বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষকরা তাদের কাউকেই দেখেনি। তালিকায় মনিরুল ইসলাম নামের একজনকে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দেখানো হয়েছে। মো. হাছান তারেককে দেখানো হয়েছে ধর্মীয় শিক্ষক হিসেবে।
তাকে কোন দিন কেউ এই প্রতিষ্ঠানে দেখেনি। এছাড়াও নিয়ম বর্হিভ‚তভাবে একই উপজেলার চরপাতা বায়তুল ফালাহ মাদ্রাসার ইনডেক্স ধারী বিপিএড শিক্ষক মিজানুর রহমানকে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। মো. ইমাম হোসেনকে দেওয়া হয়েছে গনিত শিক্ষক হিসেবে। ভোলা আদর্শ একাডেমীতে কর্মরত শারীর চর্চা শিক্ষক ময়নুল হোসেনকে দেখানো হয়েছে শারীরচর্চা শিক্ষক। এ পাঁচজন শিক্ষককে কেউ ওই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করতে দেখেনি। এমনকি শিক্ষক হাজিরা খাতায়ও তাদের কারো নাম নেই।
তারা আরো জানায়, ছকিনা আদর্শ একাডেমি ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথমে প্রতিষ্ঠানটি প্রথমে কিন্ডার গার্ডেন হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হলেও পরে তা ৮ ম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান চালু করে, যা বর্তমানে দশম শ্রেণি পর্যন্ত চলমান রয়েছে। বিদ্যালয়টিতে প্রায় সাড়ে ৮০০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। কিন্তু বিদ্যালয়ে থাকা শিক্ষক হাজিরা খাতায় উপরোক্ত পাঁচজন শিক্ষকের কারো নাম নেই।
এছাড়াও বিদ্যালয়টির সভাপতি জিয়াউল মোর্শেদ বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের ফাইল, জমির মূল দলিল, রেজুলেশন বইসহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র সব নিজের কাছে রেখেছেন। এমনকি বিদ্যালয়ের একাউন্টে থাকা নগদ ৬ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা উত্তোলন করে নিয়ে গেছে। বিষয়টি নিয়ে চলতি বছরের গত ৬ আগষ্ট দৌলতখান উপজেলা নির্বাহী অফিসার জিতেন্দ্র কুমার নাথ স্বাক্ষরিত একটি প্রতিবেদন ভোলা জেলা প্রশাসক ও বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর প্রেরণ করেন।
বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত মো. রুবেল, হাবিবুর রহমান ও ফয়জুল কবির জানান, দীর্ঘদিন ধরে আমরা এই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছি। কিন্তু এমপিওভুক্তির আবেদনের সময় শিক্ষক হিসেবে যাদের নাম পাঠানো হয়েছে আমরা তাদের কাউকে এ প্রতিষ্ঠানে দেখিনি। সভাপতি জাময়াতের নেতা হওয়ায় তার দলের লোকজনের নাম শিক্ষক হিসেবে দিয়েছে। তারা কেউ এখানকার শিক্ষক না।
বিদ্যালয়ে বর্তমানে দায়িত্বে থাকা শিক্ষক মো. জামাল উদ্দিন জানান, আমার কাছে বিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাগজ পত্র নেই। সব কিছু সভাপতি ও সাবেক প্রধান শিক্ষক বনি ইয়ামিনের যোগসাজসে নিয়ে গেছে। আমি ১৯৯৮ সাল থেকে এই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। নতুন যে সকল শিক্ষককের নাম এমপিওভুক্তির সময় দেয়া হয়েছে তাদের কাউকে আমি এ প্রতিষ্ঠানে আসতে দেখিনি।
এব্যাপারে অভিযুক্ত ছকিনা আদর্শ একাডেমির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. জিয়াউল মোর্শেদ বলেন, প্রথমত বিদ্যালয়টির এমপিওর আবেদনের সময় আমি যাদের নাম পাঠিয়েছি তারা সবাই এখানকার নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক। ২০০৪ সালের আগে তাদেরকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এত দিন এমপিও ছিল না বিধায় তারা বদলী শিক্ষক দিয় প্রতিষ্ঠানটি চালিয়েছে।
আজ সেই শিক্ষকরাই নিজেদের শিক্ষক হিসেবে দাবি করছে। আর টাকার বিষয়টি হলো বিদ্যালয়ের টাকা আমরা দৌলতখানের একাউন্ট থেকে তুলে বিদ্যালয়ের নামে ভোলার একটি ব্যাংকে একাউন্ট করে সেখানে রেখেছি। পরবর্তীতে ইএনও স্যারের কথায় আবার সে টাকা দৌলতখানে বিদ্যালয়ের একাউন্টে রাখা হয়েছে। আমি কোনো টাকা আত্মসাৎ করিনি।
এ বিষয়ে দৌলতখান উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. জাবেদ আলী শেখ সাংবাদিকদের বলেন, আমার বিদ্যালয়টিতে গিয়ে সরেজমিন তদন্ত করে প্রমান পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
আই.এ/

