
আসামের জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) আসলে ‘ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের লক্ষ্যবস্তু করার এবং মুসলমানদের রাষ্ট্রহীন করে তোলার’ একটি হাতিয়ার! এমনটাই অভিযোগ করেছে আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা সম্পর্কিত একটি ফেডারেল মার্কিন কমিশন। চূড়ান্ত এনআরসি তালিকা, যা আসামের ভারতীয় নাগরিকদের বৈধতা দেয়, তা থেকে ১৯ লক্ষ বাসিন্দা ইতিমধ্যেই বাদ পড়েছেন।
এই বিষয়টি দেখেই শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) ইউএস কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম বা জানিয়েছে যে, বেশ কয়েকটি দেশি ও আন্তর্জাতিক সংস্থা উদ্বেগ প্রকাশ করছে যে অসমের বাঙালি মুসলিম সম্প্রদায়ের ভোটাধিকার কাড়তে, সুস্পষ্টভাবে নাগরিকত্বের জন্য একটি ধর্মীয় প্রয়োজনীয়তা প্রতিষ্ঠা করতে এবং মূলত মুসলমানদের রাষ্ট্রহীন করে তোলার উদ্দেশ্যেই গৃহীত কর্মসূচি।’
ন্যাশনাল রেজিস্টার অফ সিটিজেন (এনআরসি) সমস্ত বৈধ ভারতীয় নাগরিকের নাম সম্বলিত একটি তথ্যপঞ্জি। অসমের এই নাগরিক পঞ্জি আপডেট করার প্রক্রিয়া ২০১৩ সালের একটি সুপ্রিম কোর্টের আদেশের পরে শুরু হয়েছিল। যেখানে রাজ্যের প্রায় ৩৩ মিলিয়ন মানুষকে প্রমাণ করতে হয়েছে যে তারা ভারতীয়, তারা এই দেশে ২৪ মার্চ, ১৯৭১ সালের আগের নাগরিক। ৩১ অগাস্ট আসামের নাগরিকদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হয়েছিল, যেখানে ১৯ লক্ষ মানুষের নাম বাদ পড়েছে।

এক বিবৃতিতে জানানো বলা হয়েছে, এনআরসি ‘ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের লক্ষ্যবস্তু করার একটি সরঞ্জাম এবং বিশেষত, ভারতীয় মুসলমানদের রাষ্ট্রহীন করে তোলা এর উদ্দেশ্য। ভারতের অভ্যন্তরে ধর্মীয় স্বাধীনতার অবস্থার নিম্নমুখী প্রবণতার এটি একটি বড় উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
নীতি বিশ্লেষক হ্যারিসন আকিনসের তৈরি করা ওই প্রতিবেদনে ইউএসসিআইআরএফ অভিযোগ করেছে যে, ২০১৯ সালের অগাস্টে এনআরসি তালিকা মুক্তি পাওয়ার পরেই বিজেপি সরকার এমন পদক্ষেপ নিয়েছে যা ‘মুসলিম বিরোধী পক্ষপাতিত্বকেই প্রতিফলিত করে।’

ইউএসসিআইআরএফ জানিয়েছে, ‘বিজেপি ভারতীয় নাগরিকত্বের জন্য একটি ধর্মীয় পরীক্ষা তৈরির লক্ষ্যে ইঙ্গিত দিয়েছে যাতে হিন্দুরা এবং কিছু ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা বেঁচে যাবে ঠিকই, তবে বাদ পড়বেন মুসলমানরা।’
বিংশ শতাব্দীর প্রথমদিকে অসমে অন্যান্য জায়গা থেকে, বিশেষত বাংলাদেশ থেকে প্রচুর অভিবাসী এসে থাকতে শুরু করেন। স্বাধীনতার পরেও তা থামেনি। বাংলাদেশ থেকে প্রচুর অবৈধ অভিবাসী, হিন্দু ও মুসলমান দুই তরফের মানুষই অসমে বসতি স্থাপন করেছিলেন। এনআরসি সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে বিদেশ মন্ত্রক বলেছে, এনআরসি আপডেট করা একটি সংবিধিবদ্ধ, স্বচ্ছ, ভারতের সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক নির্দেশিত একটি আইনি প্রক্রিয়া। এটি কোনও কার্যনির্বাহী চালিত প্রক্রিয়া নয়। এনআরসি হ’ল বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির ভিত্তিতে চালিত একটি সুষ্ঠু প্রক্রিয়া।

মন্ত্রকের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘এটি একটি বৈষম্যহীন প্রক্রিয়া, যাতে পক্ষপাতদুষ্টতা এবং অন্যায়ের কোনও অবকাশ নেই। কারণ এনআরসি-তে তথ্য জানানোর আবেদন ফর্মেই দেখা যায় যে আবেদনকারীদের ধর্ম জিজ্ঞেস করা হয়নি কোথাও।’ তালিকা থেকে বাদ দেওয়া যে কোনও মানুষের বিজ্ঞপ্তি পাওয়ার ১২০ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালে আবেদন করার অধিকার রয়েছে। এনডিটিভি।
ইসমাঈল আযহার/পাবলিক ভয়েস

